শুক্রবার, ১৩ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভোগান্তির শেষ নেই মেঘনায়

টোলপ্লাজায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা, ভয়ঙ্কর যানজট

মো. আল আমিন, সোনারগাঁ

ভোগান্তির শেষ নেই মেঘনায়

মেঘনার টোলপ্লাজার কারণে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয় —বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা সেতু এলাকায় কদিন পরপরই সৃষ্টি হয় দীর্ঘ ও দুঃসহ যানজট। গাড়ির যাত্রীদের তখন এক যন্ত্রণাকর অবস্থায় শ্বাস নিতে হয়। গাড়ি যারা চালান তাদেরও একই দুর্দশা। বিবিধ কারণে এই জট হয়। তার মধ্যে একটি হলো হঠাৎ কোনো গাড়ির মাঝপথে বিকল হয়ে যাওয়া। বিকল গাড়ি চটজলদি সরিয়ে নেওয়ার কোনো প্রথা-পদ্ধতি নেই। ‘ভাগ্য’ ভালো হলে যন্ত্রণা দূর হয় দ্রুত। নইলে নিজের কপাল নিজে চাপড়ান। গতকাল ভোর ৪টায় মেঘনা সেতুর টোলপ্লাজা এলাকায় একটি গাড়ি বিকল হয়ে গেলে সেখান থেকে কাচপুর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটারজুড়ে তীব্র যানজট দেখা দেয়। এর ফলে সাইনবোর্ড থেকে মদনপুর পর্যন্ত (৬ কিলোমিটার) চব্বিশ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে একেকটি গাড়ির সময় লেগে যায় ৮ ঘণ্টা। মেঘনা প্লাজার টোল আদায়কর্তা সৈয়দ শফিকুল ইসলাম জানান, মহাসড়কে গাড়ির চাপ এতই বেশি যে, স্বাভাবিক গতিতে টোল আদায় করে চাপ সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। কাচপুর হাইওয়ে পুলিশের ওসি আবদুল কাইয়ুম বলেন, টোলপ্লাজায় আটটি কাউন্টার দিয়ে আটটি গাড়ি ক্লিয়ার হয়ে যায়। সমস্যা হলো মাঝেমধ্যে গাড়ি বিকল হয়ে পড়াজনিত যানজট। তবে সেই জট বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। গাজীপুর হাইওয়ে পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার একটি যাত্রীবাহী গাড়ি বিকল হওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। ওই গাড়িটি সরিয়ে নেওয়ার পর ধীরে ধীরে যানজট দূর হতে থাকে। হাইওয়ে পুলিশ, যানচালক ও মালিক এবং যাত্রীরা যা বলছেন, তাতে যানজটের ১০টি কারণ চিহ্নিত করা যায়। এগুলো হলো— সেতুর দাউদকান্দি ওজন পরিমাপক স্কেল ও টোল প্লাজায় টিকিট দিতে ধীরগতি, দালালের দৌরাত্ম্য, টাকা আদায় নিয়ে চালকের সঙ্গে দালালের বাক?বিতণ্ডা, কিছু প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও বাসের উল্টো পথে চলা, উল্টো পথে চলা গাড়ির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়া, মহাসড়কে বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো, মহাসড়কসংলগ্ন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না হওয়া, মেঘনা সেতু দিয়ে অতিরিক্ত মালবাহী যানের ধীরগতিতে চলাচল, সেতুর ওপর বিকল হয়ে পড়া এবং ট্রাফিক আইন না মানা। যানজটে আটকে থাকা ঢাকাগামী কাভার্ড ভ্যানের চালক হাসান রহমান বলেন, এই মহাসড়কে যানজটের মূল কারণ হচ্ছে টোল প্লাজায় ওজন স্কেলের অব্যবস্থাপনা। রাতে দালালরা টাকা আদায়ের জন্য ওজন কম এমন গাড়িও স্কেলে ঢোকাতে বাধ্য করেন। এ নিয়ে চালকের সঙ্গে তাদের বাকবিতণ্ডা চলতে থাকলে যানজট তৈরি হয়ে যায়। দালালদের ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা দিলে নিস্তার মেলে। টাকা না দিলে ওরা চালকদের মারধরও করে। তাই ওজন স্কেল এলাকায় যানজট স্থায়ী রূপ নিচ্ছে। এদিকে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গাড়ি চালকরা বেপরোয়া হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে দুর্ঘটনাও। প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। আহত হয়ে অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করছেন। টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় কেউ কেউ আবার মৃত্যুপথযাত্রী। পাশাপাশি মহাসড়কজুড়ে ফিটনেসবিহীন ও নিষিদ্ধ যানবাহনের বেপরোয়া চলাচলের কারণে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে হাজার হাজার যাত্রী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর