শুক্রবার, ১৩ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

অদৃশ্য ঘাতক

মির্জা মেহেদী তমাল

অদৃশ্য ঘাতক

মোবাইল ফোন যে পরিমাণ রেডিয়েশন দেয়, খাবার গরম করার মাইক্রোওয়েভ ওভেনও সেই একই পরিমাণ রেডিয়েশন দেয়। মোবাইল ফোনের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার বিপজ্জনকের চেয়েও বেশি কিছু। ১৫ মিনিট মোবাইল ফোনে কথা বললে মস্তিষ্কের তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি ফারেনহাইট বেড়ে যায়। শিশুদের ক্ষেত্রে তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ আরও বেশি। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে তাই মত দিয়েছেন, ১৬ বছর বয়সের নিচে কোনো অবস্থাতেই মোবাইল ব্যবহার করা উচিত নয়। আমাদের দেশে থাইরয়েডের ক্যান্সার, প্রতিবন্ধী শিশু জন্মগ্রহণ ও বন্ধ্যত্ব আগের চেয়ে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। এর সম্ভাব্য প্রধান কারণ মোবাইল ফোনের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার। মোবাইলের রেডিয়েশন বা তেজস্ক্রিয় বর্ণ, গন্ধ, শব্দহীন বলে একে অদৃশ্য ঘাতক নাম দিয়েছেন গবেষকরা। তাদের মতে, শিশুদের থেকে কমপক্ষে ৫ ফুট দূরে মোবাইল রাখতে হবে। রাতে ঘুমানোর সময় মোবাইল কমপক্ষে ৭ ফুট দূরে রাখতে হবে। মোবাইল ফোনের সঠিক ব্যবহারের উপায় প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত বলেছেন, মোবাইল ফোনে কথা ২০ সেকেন্ডের মধ্যে শেষ করতে পারলে সবচেয়ে ভালো। এর বাইরে প্রয়োজনে একটানা সর্বোচ্চ ৩ মিনিট কথা বলা যেতে পারে। তবে পরবর্তী ব্যবহারের আগে ১৫ মিনিট বিরতি দিতে হবে। এতে এই সময়ের মধ্যে মস্তিষ্কের তাপমাত্রা আবার স্বাভাবিক হয়ে আসবে। মোবাইল ফোন ব্যবহারের সময় বার্তা আদান-প্রদানের সময় ফোন থেকে নির্গত তেজস্ক্রিয় রশ্মি বা রেডিয়েশনের প্রভাবে মানবদেহের ক্ষতি হয়। সবাই কানে অর্থাৎ মাথার পাশে ফোন ধরে কথা বলি। কথা বলার সময় মোবাইল থেকে নির্গত রেডিয়েশন মস্তিষ্কের কোষগুলোর সংস্পর্শে চলে আশে। ফলে মস্তিষ্ক তথা দেহের অন্যান্য অংশেও প্রভাব পড়ে ও নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির সৃষ্টি হতে পারে।

মোবাইল ফোন থেকে সৃষ্ট তেজস্ক্রিয় রশ্মি আমাদের মস্তিষ্কের কোষগুলোকে ধীরে ধীরে মেরে ফেলতে পারে। মোবাইল ফোন থেকে সৃষ্ট বেতার তরঙ্গ আমাদের মস্তিষ্কের কোষগুলোকে উত্তপ্ত করে তোলে। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ তরঙ্গকে কারসিনোজেনিক বা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী বলে ঘোষণা দিয়েছে। অর্থাৎ মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার মস্তিষ্কের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব নারী তাদের গর্ভাবস্থায় খুব বেশি মাত্রায় মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন, তাদের গর্ভস্থ ভ্রূণের মস্তিষ্কের বিকাশ ব্যাহত হয়। এ ছাড়া পরবর্তীতে এই শিশুদের মাঝে আচরণগত অনেক সমস্যাও দেখা দেয়। তাই গর্ভাবস্থায় মায়েদের উচিত মোবাইল ফোন যতদূর সম্ভব এড়িয়ে চলা।

গবেষণায় জানা গেছে, মোবাইল ফোন থেকে নিঃসরিত তেজস্ক্রিয় রশ্মি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে আমাদের ডিএনএকে। কোনো কারণে মস্তিষ্কের কোষের ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা স্নায়ুসংক্রান্ত বিভিন্ন শারীরিক কাজের ক্ষতিসাধন করে। মোবাইল ফোনের তেজস্ক্রিয়তা মস্তিষ্কে মেলাটনিনের পরিমাণ হ্রাস করে, যার ফলে বিভিন্ন স্নায়বিক সমস্যা দেখা দেয়। এ ছাড়া এটি এখন বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে, মোবাইল ফোন থেকে নিঃসরিত তড়িৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গের কারণে অনিদ্রা, অ্যালঝেইমার ও পারকিনসন্স ডিজিজের মতো বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। এ ছাড়া মোবাইল ফোন থেকে সৃষ্ট তেজস্ক্রিয়তা মানুষের হার্টের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত করে। এর ফলে রক্তের লোহিত কণিকায় থাকা হিমোগ্লোবিন আলাদা হয়ে যেতে থাকে। এ ছাড়া হিমোগ্লোবিন রক্তের লোহিত কণিকার মাঝে তৈরি না হয়ে দেহের অন্যত্র তৈরি হতে থাকে, যেটি বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা তৈরি করে। যে কারণে বুকপকেটে ফোন রাখা একদমই অনুচিত। এ ছাড়া যারা হার্টে পেসমেকার বসিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রেও মোবাইল ফোন ব্যবহারে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব পুরুষ বা ছেলে খুব বেশি মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন তাদের শুক্রাণু খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া শুক্রাণুর ঘনত্ব হ্রাস পেতে থাকে। আমরা যখন ফোনে কথা বলার পর ফোন পকেটে রেখে দিই, তখন এটি কিছুটা উত্তপ্ত অবস্থায় থাকে। এর ফলে অণ্ডকোষের চারপাশে তাপমাত্রা বেড়ে যায়। অথচ শুক্রাণু দেহের ভিতরে মাত্র ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সক্রিয় থাকে। তাই অতিরিক্ত তাপমাত্রা শুক্রাণুর জন্য ক্ষতিকর। আবার আমাদের শরীর থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণে উপকারী তড়িৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ বের হয়, কিন্তু মোবাইল ফোনের উচ্চমাত্রার তড়িৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ আমাদের দেহের তড়িৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গের নিঃসরণকে বাধাগ্রস্ত করে। যার ফলে অস্বাভাবিক আকৃতির শুক্রাণু তৈরি হয়। এ ছাড়া কান ও চোখের সমস্যা নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর