শুক্রবার, ১৩ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

নওগাঁর বিষমুক্ত ফ্রুট ব্যাগিং, রুপালি আম যাচ্ছে ইউরোপে

বাবুল আকতার রানা, নওগাঁ

নওগাঁর বিষমুক্ত ফ্রুট ব্যাগিং, রুপালি আম যাচ্ছে ইউরোপে

নওগাঁর সাপাহার উপজেলার ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতির সফল আমচাষি আবদুর রাজ্জাক। তিনি গত বছর প্রথম ২০ বিঘা জমিতে জেলার সবচেয়ে সুপরিচিত সুমিষ্ট আম রূপালিতে ফ্রুট ব্যাগিং করে বেশ লাভবান হওয়ায় এবারও একই জাতের ৪০ বিঘা জমির আমে ফ্রুট ব্যাগিং করেছেন। তার মতে, কীটনাশক, পোকামাকড়, বিরূপ আবহাওয়ার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আমকে বাঁচাতে মূলত এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। তবে সরকারিভাবে যদি আমচাষিদের সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হতো তাহলে বিষমুক্ত সুস্বাদু আম দেশের জনগণ খেতে পারত এবং বিদেশেও রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যেত। এই আম যাচ্ছে কানাডায়। আমের ২য় রাজধানী হিসেবে খ্যাত নওগাঁর পোরশা, সাপাহার, পত্নীতলা ও ধামইরহাট উপজেলা। এই উপজেলাগুলোতে উৎপাদিত আম রাজশাহী ও চাঁপাইকেও ছাড়িয়েছে। কিন্তু রাজশাহী ও চাঁপাই জেলা আম চাষে অনেক পুরাতন হওয়ায় দেশের প্রচার-প্রচারণায় আম চাষে নওগাঁর নাম এখনো তেমনভাবে সাড়া জাগাতে পারেনি। তবে বর্তমানে কৌশলী আম ব্যবসায়ীরা নওগাঁর আমকে রাজশাহী ও চাঁপাইয়ের বলে বেশি দামে বিক্রি করছে। চলতি মৌসুমে নওগাঁর আমের প্রচার-প্রচারণার কাজ শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট উপজেলার কৃষি অফিসগুলো। নওগাঁয় আম চাষে গত বছর থেকে শুরু হয়েছে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি। আর এতে লাভবান হচ্ছেন শত শত কৃষক। তবে কৃষকরা ফ্রুট ব্যাগিং করে থাকে সবচেয়ে বেশি রসালো আম রূপালিতে। গত বছর ফ্রুট ব্যাগিংয়ের আম কানাডাসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গিয়েছিল; এবারও যাবে বলে আশা করছেন কৃষকরা। এ আমের চাহিদাও রয়েছে বেশ; কারণ কীটনাশক ও রোগমুক্ত হয় এই আম। কৃষি বিভাগ বলছে, এটি আধুনিক ও পরিবেশসম্মত পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে উৎপাদিত আমে বিদেশে পাঠানোর জন্য যেসব গুণাগুণ প্রয়োজন তার সবই আছে। বিদেশে আম রপ্তানিতে সরকারের শক্তিশালী উদ্যোগই যথেষ্ট। গাছে গাছে ঝুলছে ব্যাগ; আর তার মধ্যেই সুরক্ষিত আকর্ষণীয় রূপালি জাতের আম। এই পদ্ধতিকে বলা হয় ফ্রুট ব্যাগিং। বাইরের  পোকা-মাকড়, বিরূপ আবহাওয়া কিংবা কোনো ক্ষতিকারক প্রভাবই এই ব্যাগের মধ্যে প্রবেশ করে আমের ক্ষতি করতে পারে না। সাপাহার উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের আবদুর রহিম বলেন, শুধু রাজ্জাক নয়; আগামীতে তার দেখাদেখি এ অঞ্চলের অনেকেই শুরু করবেন এই পদ্ধতিতে আম চাষ। ফ্রুট ব্যাগিং করার ফলে আম সব পোকামাকড় ও দূষণ থেকে রক্ষা পায় অর্থাৎ বিষমুক্ত আম উৎপাদিত হয়। তবে এই পদ্ধতি একটু ব্যয়বহুল হলেও আম বিক্রিতে লাভ তা পুষিয়ে দেয়। কারণ এই পদ্ধতিতে উৎপাদিত নির্ভেজাল আমের কদর ক্রেতাদের কাছে অনেক। ক্রেতারা একটু বেশি দামে হলেও এই বিষমুক্ত আম কেনেন। তাই অনেক আমচাষি উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন এই পদ্ধতির দিকে। নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মনোজিত কুমার মল্লিক বলেন, এটি আধুনিক ও পরিবেশসম্মত পদ্ধতি। কৃষকদের এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করার জন্য সভা সেমিনার করা হচ্ছে। ফ্রুট ব্যাগিং আম বিষমুক্ত আম হওয়ায় তারা বাজারমূল্য ভালো পাবে। তবে এই পদ্ধতির উপকরণগুলোর মূল্য কম ও সহজলভ্য হলে এই পদ্ধতি দিন দিন বৃদ্ধি পাবে। কারণ বর্তমান ভেজালের যুগে নির্ভেজাল পণ্য খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন। যেহেতু এই পদ্ধতিতে উৎপাদিত আম বিষমুক্ত, তাই বর্তমান সময় ও আগামীতেও এর কদর অটুট থাকবে। চলতি বছর নওগাঁ জেলায় প্রায় ৬০ হেক্টর জমিতে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম চাষ করা হয়েছে যা গত বছরের চেয়ে ৬ গুণ বেশি।

সর্বশেষ খবর