শুক্রবার, ১৩ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা
থাই গুহার রোমহর্ষক কাহিনী

কিশোররা ৯ দিন বেঁচে ছিল চুইয়ে পড়া পানি পান করে

প্রতিদিন ডেস্ক

কিশোররা ৯ দিন বেঁচে ছিল চুইয়ে পড়া পানি পান করে

থাইল্যান্ডের থাম লিয়াং গুহায় ১৮ দিন ধরে আটকে থাকা ১২ জন খুদে ফুটবলার ও তাদের কোচ প্রথম নয় দিন দেয়াল দিয়ে চুইয়ে পড়া পানি পান করে বেঁচে ছিল। এরপর বাইরে থেকে খাবার সরবরাহ করা হলে তারা সেগুলো খেয়ে জীবন বাঁচায়। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স ও সিএনএন।

গত ২৩ জুন নিখোঁজ হওয়ার নয় দিন পর এই কিশোরদের সম্পর্কে প্রথম খবর জানা যায়। উদ্ধারকারীরা বলছেন, তারা যে গুহায় আটকে ছিল তার পানি ছিল নোংরা ও ঘোলা। এজন্য ফুটবলাররা গুহার দেয়াল থেকে যে পানি চুইয়ে চুইয়ে পড়েছে, সে পানি পান করত। আর নিজেদের উষ্ণ রাখার জন্য গুহার ভিতরে পাথর দিয়ে ৫ মিটার গভীর গর্ত খুঁড়েছিল। নিজেদের উষ্ণ রাখতে তারা সেই সুড়ঙ্গের ভিতরে আশ্রয় নিয়েছিল। নিখোঁজের নয় দিন পর তাদের সন্ধান পাওয়া গেলে ডুবুরিরা তাদের খাবার সরবরাহ করেন। এর পর থেকে তারা উদ্ধারকারী দলের সরবরাহ করা খাবার খেয়ে বেঁচে থাকে।

এখন যেমন আছে কিশোররা : গত রবিবার প্রথম দফায় চার কিশোরকে অন্ধকার গুহা থেকে উদ্ধার করে আনা হয়। ওই কিশোরদের অভিভাবক ও আত্মীয়স্বজনদের এখনো সরাসরি দেখার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে কাচের দেয়ালের বাইরে থেকে তারা তাদের সন্তানদের দেখার এবং টেলিফোনে কথা বলা সুযোগ পেয়েছেন। শিগগিরই তাদের সরাসরি সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হবে। সে ক্ষেত্রে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে প্রতিরক্ষামূলক কাপড় পরেই কিশোরদের কাছে যেতে হবে।

কিশোরদের জন্য নানান উপহার : ‘জয়ের সমান’ মর্যাদা পাচ্ছে গুহা থেকে উদ্ধার থাইল্যান্ডের কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচ। নামিদামি খেলোয়াড়ের জার্সি, ক্লাবে ভ্রমণ প্রস্তাব ও ফুটবল টুর্নামেন্টের ম্যাচ টিকিটের প্রস্তাব আসছে তাদের কাছে। বিশ্বকাপ চলার সময় খুদে ফুটবলারদের থাইল্যান্ডের থাম লুয়াং নামে বিপজ্জনক গুহায় আটকে পড়ার ঘটনা ঘটে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাদের প্রতি এসেছে সহমর্মিতা ও ভালোবাসা। রাশিয়া বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনালে বেলজিয়ামকে হারানোর পর সেই জয় থাই কিশোর ফুটবলারদের জন্য উৎসর্গ করেন ফ্রান্সের মিডফিল্ডার পল পগবা। তার টুইটে, ‘এই জয় উৎসর্গ করছি দিনের নায়কদের জন্য, দারুণ করেছে ছেলেরা, তোমরা ভীষণ শক্ত।’

 

বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখা হচ্ছে না : গুহায় আটকে পড়া ১২ জন খুদে ফুটবলার ও তাদের কোচকে বিশ্বকাপে ফাইনাল ম্যাচ উপভোগের সুযোগ করে দিয়েছিল ফুটবলের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ফিফা। কিন্তু গুহা থেকে তারা বেঁচে ফিরলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে মস্কোয় বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনালে স্টেডিয়ামে বসে তাদের খেলা দেখা হচ্ছে না। গুহা থেকে উদ্ধার হওয়ার পর ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন অব থাইল্যান্ডের সঙ্গে ফিফা যোগাযোগ করে জানতে পারে উদ্ধার হওয়া ওই ফুটবলাররা মস্কো যেতে পারবে না। এরপর এক বিবৃতিতে ফিফা জানিয়েছে, ১২ কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচকে সফলভাবে উদ্ধারের খবরে ফিফা অত্যন্ত আনন্দিত। উদ্ধারকাজে নিয়োজিত প্রত্যেক ব্যক্তিকে আমাদের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। যদিও দুর্ভাগ্যজনকভাবে উদ্ধারকাজ চলাকালে একজন ডুবুরির মৃত্যু হয়েছে। আমরা তার পরিবারের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তবে থাইল্যান্ড ফুটবল ফেডারেশন আমাদের জানিয়েছে শারীরিক অসুস্থতার কারণে ওই কিশোররা মস্কো পর্যন্ত যাওয়ার অবস্থায় নেই।

নিহত ডুবুরির স্ত্রীর আর্তি : উদ্ধার অভিযানে প্রাণ হারানো সাবেক থাই ডুবুরির জন্য কাঁদছেন তার স্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, স্বামী ছিলেন তার পরম ভালোবাসার মানুষ। তাকে হারিয়ে শূন্যতা অনুভব করছেন। তবে এ ঘটনার জন্য গুহা থেকে উদ্ধার হওয়া কিশোর ফুটবল দলের সদস্যদেও দোষারোপে রাজি নন নিহত ডুবুরির স্ত্রী। ছবি শেয়ারিংয়ের সামাজিক মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা এক ছবির ক্যাপশনে এসব কথা জানিয়েছেন তিনি।

তার স্ত্রী ভ্যালিপোয়ান ইনস্টাগ্রামে স্বামীর একটি সাদাকালো ছবি পোস্ট করে এর ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তোমার শূন্যতা অনুভব করছি। সমস্ত হৃদয় দিয়ে তোমাকে ভালোবাসি। এখন থেকে ঘুম থেকে জাগার পর আমি কাকে আলিঙ্গন করব?’

অভিযান নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা : থাইল্যান্ডের গুহায় আটকে পড়া ১২ শিশু ফুটবলার ও তাদের কোচকে জীবিত উদ্ধারের ঘটনা স্মরণীয় করে রাখতে হলিউডে চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা হচ্ছে। শ্বাসরুদ্ধকর উদ্ধার অভিযানটিকে স্মরণীয় করে রাখতে অন্তত দুটি মার্কিন কোম্পানি এ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের কথা ভাবছে। অবশ্য থাই সরকার ও নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে চলচ্চিত্রটি নির্মাণের জন্য লস অ্যাঞ্জেলেসভিত্তিক ইভানহো পিকচার্সকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কোম্পানিটিকে উদ্ধৃত করে মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলোয় বলা হয়, জন এম চু চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করবেন। টুইটার পোস্টে তিনি দাবি করেছেন, ‘অন্য মানুষদের বাঁচানোর জন্য আরও কিছু মানুষের চেষ্টা নিয়ে সুন্দর গল্প এটি।’

গুহা হবে জাদুঘর : বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে উদ্ধার অভিযানের প্রধান নারোংসাক অসোতানাকর্ন বলেন, এ ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখতে ওই এলাকায় একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হবে। তিনি বলেন, এ এলাকা একটি জীবন্ত জাদুঘর হবে। কীভাবে অভিযান শুরু করা হয়েছিল তা সেখানে দেখানো হবে।

সর্বশেষ খবর