শিরোনাম
রবিবার, ১৫ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

টাকার বান্ডিল নয়, কাগজ

মির্জা মেহেদী তমাল

টাকার বান্ডিল নয়, কাগজ

বিক্রয় ডটকমে মোটরসাইকেল বিক্রির বিজ্ঞাপন দেখে নেন শাকিল। বিক্রেতার মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করে নেন। এরপর প্রেমিকাকে সঙ্গে নিয়ে সেই মোটরসাইকেল দেখতে যান। নানান কথায় বিক্রেতার সঙ্গে ভাব জমে শাকিলের। বিক্রেতার কাছে বিশ্বাস স্থাপন করেন এবং দরদাম করেন। কিন্তু সেদিন আর মোটরসাইকেল তিনি কেনেননি। পরদিন আবারও মোটরসাইকেলটি কিনতে যান শাকিল। এবার তিনি একা। তিনি মোটরসাইকেলটি চালিয়ে দেখতে চান। তার হাতে বিক্রেতা চাবি তুলে দেন। মোটরসাইকেলে চড়ে বসতেই প্যান্টের পকেট থেকে টাকার বান্ডিল নিচে পড়ে যায়। শাকিল বান্ডিলটি তুলে বিক্রেতার কাছে রাখতে বলেন। একটি চক্কর দিয়েই ফিরছেন— এ কথা বলেই শাকিল মোটরসাইকেলটি স্টার্ট দিয়েই চম্পট। সোজা ফটিকছড়ি। বিক্রেতা প্যাকেট খুলে অবাক! সেখানে টাকা নেই, সব নোটের আকৃতির কাগজের বান্ডিল।

প্রতারণার মাধ্যমে এভাবে তিনটি মোটরসাইকেল চুরির পর চতুর্থবারে শাকিল ধরা পড়েছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) হাতে। তার দেওয়া তথ্যমতে পিবিআই চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রির দালাল অর্জুন কুমার নাথকেও আটক করেছে। শাকিল ফটিকছড়ি উপজেলার লেলাং ইউনিয়নের শাহনগর গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে। তার বাবা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তা এবং মা ফটিকছড়িতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ছিলেন। তিন বোন, এক ভাইয়ের মধ্যে শাকিল সবার ছোট। অর্জুনের বাড়িও একই গ্রামে। তার স্ত্রীও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। ২০১০ সালে দুবাই থেকে ফিরে অর্জুন মোটরসাইকেল বিক্রির মধ্যস্থতার ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন।

পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা জানিয়েছেন, শাকিল নগরীর শুলকবহর, নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটি ও ওমরগনি এমইএস কলেজের সামনে থেকে তিনটি মোটরসাইকেল প্রতারণার মাধ্যমে চুরির কথা জানিয়েছেন। পিবিআই জানায়, নগরীর জামালখানে আরেকটি মোটরসাইকেল চুরি করতে এসে শাকিল ধরা পড়েন। অর্জুনকে ফটিকছড়ি বাজার থেকে আটকের পর চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধারে অভিযান চালাচ্ছে পিবিআই টিম। অর্জুন ১২টি মোটরসাইকেল বিক্রির কথা স্বীকার করেছেন। শাকিল পিবিআই কর্মকর্তাদের ?জানান, ফটিকছড়ি কলেজ থেকে স্নাতক পাস করে ২০১০ সালে ফটিকছড়ির বিবিরহাট বাজারে একটি ডিপার্টমেন্ট স্টোর খুলে ব্যবসা শুরু করেন। সেই ব্যবসার লোকসানের পর চারটি সিএনজি অটোরিকশা কেনেন। সেগুলো বিক্রি করে ২০১৪ সালে পটিয়া পৌরসভায় দি এভিনিউ নামে একটি রেস্টুরেন্ট চালু করেন। নয় মাসের মধ্যে সেই রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে যায়। এরপর নিজের ১৩ লাখ এবং আরও ১০ লাখ টাকা ধার নিয়ে রিয়াজউদ্দিন বাজারে ফ্রেন্ডস টেলিকম নামে একটি মোবাইল বিক্রির প্রতিষ্ঠান খোলেন। পার্টনার জাকির ও ফটিকছড়ি উপজেলা ছাত্রলীগের এক নেতা মিলে তার টাকা মেরে দেন। ২০১৬ সালে সেই ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর শাকিল কসমেটিকসের ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু পাওনাদারের চাপ সামলাতে না পেরে প্রতারণা ও চুরিতে নামেন। কখনো বন্ধু, কখনো ব্যবসায়িক অংশীদারের প্রতারণার শিকার হয়ে পরপর তিনটি ব্যবসায় লোকসান গুনতে হয় শিক্ষিত যুবক শাকিউল বশর শাকিলের। মায়ের কষ্টের কথা ভেবে শাকিল চেপে যান লাখ লাখ টাকার লোকসান আর ঋণভারে জর্জরিত হয়ে পড়ার কথা। পাওনাদারের চাপ সামলাতে নিজেই নেমে পড়েন ডিজিটাল প্রতারণায়, চুরিতে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর