মঙ্গলবার, ১৭ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

থমকে গেছে আরপিও সংশোধনের কাজ

‘সংসদ নির্বাচনে কিছু কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহারের চিন্তা থাকলেও এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি’

গোলাম রাব্বানী

থমকে গেছে নির্বাচনী আইন সংস্কারের কাজ। এক বছর আগে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে আইন সংস্কারের কাজে হাত দিলেও একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তা আর হচ্ছে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সেই সঙ্গে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিছু কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের চিন্তা থাকলেও এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি নির্বাচন কমিশন।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, সংসদ নির্বাচনের আগে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের উদ্যোগ আর নেওয়া হচ্ছে না। যথেষ্ট সময় না থাকায় এ নিয়ে আর কোনো চিন্তাভাবনা নেই। ইভিএম ব্যবহারের  বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যদি স্থানীয় নির্বাচনে আমরা (ইভিএমের) কার্যকর ফল পাই তাহলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও কিছু কেন্দ্রে আমাদের ইভিএম ব্যবহারের চিন্তা থাকবে। তবে ব্যবহার করা হবে কি না, এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন এখনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। কারণ সাধারণ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করতে গেলে আরপিও সংশোধনের বিষয় আছে।’ আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গেল বছর জুলাইয়ে ইসি ঘোষিত রোডম্যাপে আরপিও, সীমানা পুনর্নির্ধারণসহ আইনি সংস্কারের কথা জানিয়েছে কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসি। এ লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সংলাপ করা হয়। বিশেষ করে নির্বাচনী আইন ১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ও ১৯৭৬ সালের সীমানা পুনর্নির্ধারণ অধ্যাদেশের যুগোপযোগী সংস্কারের কথা বলেছে ইসি। এ দুটি বিষয়ে আইন পরামর্শকও নিয়োগ করা হয়। সংলাপ শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সংলাপে যেসব প্রস্তাব এসেছে তা বই আকারে প্রকাশ করে রাজনৈতিক দল ও সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোয় পাঠানো হবে। ইসির পক্ষে যেগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব সেগুলো করা হবে। আইন সংশোধনের বিষয়গুলো সংসদে পাঠানো হবে। আর যেসব প্রস্তাব বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধনের বিষয় রয়েছে সেগুলো সরকারের ব্যাপার। মার্চ মাসে সংলাপ নিয়ে সুপারিশগুলোর পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু প্রস্তাবিত আইন করতে না পারায় সীমানা পুনর্নির্ধারণও হয়ে গেল বিদ্যমান অধ্যাদেশ দিয়ে। এখন পর্যন্ত আরপিও সংস্কারের খসড়া রূপরেখাও তৈরি করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। ১৯৭২ সালে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ প্রণয়নের পর এ পর্যন্ত ১১ বার সংশোধনী এসেছে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন অনুচ্ছেদে অন্তত ২০৯টি বিষয়ে সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে। ২০০৭ সালে নবম সংসদ নির্বাচনের আগে এ টি এম শামসুল হুদার ইসি সংলাপ করে ব্যাপক আইনি সংস্কার করে। সর্বশেষ দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (অধ্যাদেশ) (সংশোধন) আইন, ২০১৩ বিল পাস হয়। এতে ব্যয়সীমা ২৫ লাখ করা ও মানবতাবিরোধী দণ্ডিতদের ভোটে অযোগ্য ঘোষণাসহ কিছু সংশোধন এসেছিল। এবার একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ইলেট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম), অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা, জামানত বাড়ানো, স্বতন্ত্র প্রার্থিতা সহজীকরণসহ অন্তত ৩৫টি প্রস্তাব নিয়ে বসেছিল ইসির আইন সংস্কার কমিটি।

জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের চিন্তা : ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আগামী দিনগুলোতে যত ধরনের স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে সেখানে আমরা ইভিএম ব্যবহার করব। যদি এখানে আমরা কার্যকর ফল পাই তাহলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও কিছু কেন্দ্রে আমাদের ইভিএম ব্যবহার করার চিন্তা থাকবে। তবে সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে কি না, এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন এখনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। কারণ সাধারণ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করতে গেলে স্বাভাবিকভাবে আরপিও সংশোধনের বিষয় আছে। তো এসব বিষয় মাথায় রেখে সাধারণ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হবে কি না কমিশন এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে যত স্থানীয় নির্বাচন হবে সেগুলোতে ইভিএম ব্যবহার করার পরিকল্পনা ইসির আছে।’ তিনি বলেন, ইভিএম ব্যবহার করার জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচন কমিশন আগে সিদ্ধান্ত নেবে। তারপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও মতবিনিময় করা হবে। এ ছাড়া আরপিও সংশোধনীর বিষয় তো আছেই। সবকিছু মাথায় রেখেই কিন্তু নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে ৫০০ উপজেলা নির্বাচনেও ইভিএম ব্যবহারের ইচ্ছা আছে বলে জানান ইসি সচিব। তিনি বলেন, প্রতিটি ইভিএম ক্রয়ে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা ব্যয় হয়। বিএনপি বরাবরই ইভিএমের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে, সে ক্ষেত্রে তাদের মতামত নেওয়া হবে কি না—এমন প্রশ্নে হেলালুদ্দীন বলেন, নির্বাচন কমিশনাররা কিন্তু বিএনপিকে বলেছেন, তাদের যে প্রযুক্তিবিশেষজ্ঞ আছেন, তাদের নিয়ে বিষয়টি যাচাই করার জন্য।

সারাদেশে ‘ইভিএম মেলা’র চিন্তা : গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট কার্যালয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের নির্বাচনী কর্মকর্তার জন্য ইভিএম-বিষয়ক প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনকে (ইভিএম) ভোটারদের কাছে জনপ্রিয় করার জন্য সারা দেশে মেলা করার চিন্তাভাবনা করছে ইসি। সংস্থাটির সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ইভিএম ব্যাপকভাবে জনগণের কাছে পরিচিত করানোর জন্য সারা দেশকে ১০টি অঞ্চলে ভাগ করে মেলা করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে বরিশালে একটি মেলা হয়ে গেছে। সচিব বলেন, ‘এ ছাড়া ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে আমরা একটি মেলার ব্যবস্থা করব। সেটি জুলাই মাসে না করতে পারলে অক্টোবরে করব। প্রতিটি জেলায় দুটি করে ইভিএম পাঠিয়ে দেব, যেন মানুষজন এটি সম্পর্কে বুঝতে পারে।’ গতকাল নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের তিনি এসব কথা বলেন।

সর্বশেষ খবর