বুধবার, ১৮ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

কয়লায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি চীনে

জিন্নাতুন নূর, চীন থেকে ফিরে

একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র যে দূষণমুক্ত ও পরিবেশবান্ধবও হতে পারে তা চীনের ডাটাং কিংউয়ান কো-জেনারেশন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি না দেখলে বিশ্বাস হতো না! কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অবকাঠামো মানেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিশাল চিমনি দিয়ে প্রচুর কালো ও বিষাক্ত ধোঁয়া বের হবে—কয়লায় বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়া নিয়ে সাধারণ মানুষ এমন ধারণাই করেন। কিন্তু সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে ডাটাং সুপার ক্রিটিকাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে গত্বাঁধা ধারণাগুলো মেলানো যায়নি। বিদ্যুৎ উৎপাদনের সময় কেন্দ্রটির বিশাল দুটি চিমনি দিয়ে আদৌ ধোঁয়া বের হচ্ছে কি না তা বুঝতে চিমনিটির একেবারে কাছে যেতে হয়। অবশেষে দেখা যায় হালকা ধোঁয়া।

ডাটাং কিংউয়ান কো-জেনারেশন পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চীনের আধুনিক প্রযুক্তির কয়লাভিত্তিক একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। রাজধানী বেইজিং থেকে প্রায় ১২০ কি.মি. দূরে শিজিংসান এলাকায় এটি অবস্থিত।

উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করায় কেন্দ্রটির আশপাশের মানুষের ওপর এর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে না। কারণ এর ঠিক পাশেই মানুষজন স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে। আছে ঘরবাড়ি ও বাণিজ্যিক স্থাপনা। বিদ্যুতের চাহিদা পূরণে বাংলাদেশ সরকার কয়লা দিয়ে বেশ কয়েকটি বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। কয়লায় বিদ্যুৎ উৎপাদন বিষয়ে ধারণা নিতে বাংলাদেশি সাংবাদিকদের চীনের ডাটাং কিংউয়ান বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শনের ব্যবস্থা করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। ৫ জুলাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির কনফারেন্স রুমে এক সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রটি সম্পর্কে সাংবাদিকদের বিস্তারিত জানানো হয়। কেন্দ্রটি নির্মাণে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান চায়না ডাটাং ওভারসিস ইলেকট্রিক টেকনোলজি অ্যান্ড ওঅ্যান্ডএম কোম্পানি লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট জানান, কয়লা দিয়ে কম দূষণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য চীন ১৯৮০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করে। কিন্তু বর্তমানে চীন নিজেই পরিবেশবান্ধব উন্নত প্রযুক্তি প্রয়োগ করে কয়লায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। এমনকি কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নতুন করে আরও এক হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। চায়না ডাটাং ওভারসিস ইলেকট্রিক টেকনোলজি অ্যান্ড ওঅ্যান্ডএম কোম্পানি লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার ইয়াং চাং জানান, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ শুরু হয় ২০১০ সালে আর ২০১২ সালে এটি উৎপাদনে যায়। এটি শিজিংসান এলাকার গুরুত্বপূর্ণ একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এর দুটি ইউনিটে মোট ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। এতে সর্বাধুনিক উৎপাদন প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশাল স্থানজুড়ে তৈরি করা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ঘুরে দেখা যায়, মূল ভবন থেকে কিছুটা সামনে এর দুটি বড় চিমনি, যার নিচে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য ঝরনার মতো পানির ধারা ঝরে পড়ছে। চিমনি পেরিয়ে কিছুদূর এগিয়ে যেতেই চারতলা ভবনের ওপরে আছে কেন্দ্রটির মনিটরিং রুম। সেখানে কয়েকজন কর্মী বেশ কয়েকটি মনিটরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদন প্রক্রিয়া নজরদারি করছেন। রুমের একটি ডিসপ্লেতে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে তা দেখা যাচ্ছে। ৫ জুলাই বেলা সাড়ে ১২টায় এই কেন্দ্রের দুটি ইউনিটে যথাক্রমে ২৮২ ও ২৫৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হতে দেখা যায়। জ্বালানিভিত্তিক আন্তর্জাতিক অনলাইন পোর্টাল এসঅ্যান্ডপি প্ল্যাটসের তথ্যে, চীনের ৯২০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ, যা কয়লায় উৎপাদিত হয় তার মধ্যে ১৯ শতাংশই আলট্রাসুপার ক্রিটিকাল। আর ২৫ শতাংশ সুপার ক্রিটিকাল এবং ৫৬ শতাংশ সাবক্রিটিকাল। তবে চীনে নতুন যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো তৈরি হচ্ছে এর বেশির ভাগেই আলট্রাসুপার ক্রিটিকাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, কয়লাবিদ্যুতের সক্ষমতার দিক দিয়ে বিশ্বে এখন এগিয়ে আছে চীন। দেশটির প্রধান জ্বালানি কয়লা।

সর্বশেষ খবর