শুক্রবার, ২০ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

পরীক্ষার সময় কমলে গুজব থেকে মুক্তি মিলবে : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

এইচএসসি ও সমমানের পুরো পরীক্ষার সময় কমিয়ে আনার কথা ভাবতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এখন পরীক্ষা শেষ করতে যে রকম প্রায় দুই মাস সময় লেগে যায়, তা কমিয়ে আনতে পারলে অধ্যয়নের প্রতি শিক্ষার্থীদের আরও বেশি মনোযোগী করা যাবে। পরীক্ষা নিয়ে গুজব আর অপপ্রচারের হাত থেকেও মুক্তি মিলবে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে গণভবনে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল তার কাছে হস্তান্তর অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, একটা ছোট্ট অনুরোধ আমার। যে দীর্ঘ পরীক্ষার একটা সময়... এটাকে আরেকটু কমিয়ে আনার ব্যবস্থা যদি করতে পারেন, তাহলে কিন্তু আপনি দেখবেন, ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করবে, পরীক্ষাটাও তাড়াতাড়ি হবে, আর এখানে ওই যে নানা ধরনের কথা প্রচার  টচার, অপপ্রচার, তার হাত থেকেও মুক্তি পাওয়া যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। ২ এপ্রিল পরীক্ষা শুরু, আর ২৪ মে পর্যন্ত পরীক্ষা। কত দীর্ঘ সময়! বোধহয় রেজাল্ট দিতেও আপনারা এত সময় নিলেন না পরীক্ষা নিতে যত সময় নিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যখন পরীক্ষা দিয়েছি, তখন তো আমাদের দুই বেলা করে পরীক্ষা দিতে হতো। সকালে এক পরীক্ষা, বিকালে আরেক পরীক্ষা। আমাদের তো দম ফেলার সময়ই থাকত না। ১০টা সাবজেক্ট, সাত দিনেই পরীক্ষা শেষ।’ প্রধানমন্ত্রী অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, তারা যেন তাদের সন্তানদের বকাঝকা না করেন। তারা কেন পাস করতে পারল না সেই সমস্যা বের করে তাদের বোঝাতে হবে। ছেলেমেয়েরা যেন মাদক ও জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে না পড়ে সেদিকে শিক্ষক ও অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ছেলেমেয়েদের মেধাকে কাজে লাগিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। গড়তে হবে সোনার বাংলাদেশ। তিনি আশা প্রকাশ করেন, শিক্ষার্থীরা দেশের বাইরে গিয়ে বড় বড় ডিগ্রি নিয়ে এসে দেশ ও জাতির উন্নয়নে প্রধান ভূমিকা পালন করবে।

তিনি বলেন, আমরা এই দেশকে শিক্ষিত জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে চাই, যাতে উন্নয়নের চলমান ধারা আগামীতেও অব্যাহত থাকে। শিক্ষা ছাড়া একটা জাতি চলতে পারে না। তাই শিক্ষা ব্যবস্থাকে উন্নত করতে যে সব জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয় নেই সেসব জায়গায় সরকার বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছে। সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থার পাশাপাশি মাদ্রাসা ও কওমি শিক্ষাব্যবস্থাকেও সরকার উন্নত করে দিয়েছে। তাছাড়া কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থাকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সার্বিকভাবে শিক্ষাকে সবদিক থেকে উন্নত করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। পরীক্ষায় নকল এড়াতে এবার যে পদ্ধতি নেওয়া হয়েছে তা বেশ কার্যকর। এতে নকল কমে গেছে।

প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, শিক্ষা কেউ ছিনিয়ে নিতে পারে না। এটা সবচেয়ে বড় সম্পদ। সেই সম্পদ নিজেকেই গড়ে তুলতে হয়। আজ যারা পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়েছে তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। আর যারা অকৃতকার্য হয়েছে তারা পরবর্তীতে ভালো করবে এটাই কামনা করি। ক্লাসে যেন ভালোভাবে পড়ালেখা হয়, সেদিকেও বিশেষ মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, শিক্ষাই একমাত্র সম্পদ। আমাদের ছেলে-মেয়েদেরও আমরা তাই বলেছি। কোনো সম্পত্তি রেখে যেতে পারব না, একটাই সম্পদ সেটা হচ্ছে শিক্ষা। তারা পড়ালেখা করেছে, আবার চাকরি করেছে। লোন নিয়ে পড়াশোনা করেছে। সেই লোন শোধ দিয়েছে। এরপর আবার ভর্তি হয়েছে। আবার পড়েছে। এভাবে আমার এবং আমার ছোট বোন রেহানার ছেলে-মেয়েরা পড়ালেখা করেছে। এভাবেই তারা বিশ্বের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়েছে। এখনো তারা নিজেরাই নিজেদের মতো করে চলছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব কথা বলার কারণ হচ্ছে, আত্মবিশ্বাসটা থাকতে হবে সবার মধ্যে। নিজের পায়ে দাঁড়াব, নিজেকে গড়ে তুলব, দেশকে গড়ে তুলব সেই চিন্তা করতে হবে। আর দেশপ্রেম থাকতে হবে। কারণ দেশপ্রেম থাকলে আত্মবিশ্বাস জাগ্রত হবে। এর আগে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রধানমন্ত্রীর হাতে ফলাফলের সারসংক্ষেপ তুলে দেন। এরপর শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানরা নিজ নিজ বোর্ডের ফলাফল প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী আর স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব সোহরাব হোসাইন।  দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোও যাতে উন্নত হয় সরকার সেই দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়েছে। আমাদের অর্থনৈতিক নীতিমালার লক্ষ্যটা হচ্ছে, প্রতিটি গ্রামকে উন্নত করা। গ্রামের মানুষ যেন নাগরিক সুবিধা পায়, সেই দিকে আমরা দৃষ্টি দিতে চাই। সরকার হিসেবে জনগণের সেবা করা, এটাই আমাদের কর্তব্য। সেইভাবেই আমরা দেশ গড়তে চাই। সেই দিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা একটা শিক্ষিত জাতি গড়ে তুলতে চাই।

সর্বশেষ খবর