শুক্রবার, ২০ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিকাশ সর্বনাশ

মির্জা মেহেদী তমাল

বিকাশ সর্বনাশ

শফিউল আলম। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। রমজান মাসে দুপুরের পর থেকেই বাসায় ফেরার তাড়া থাকে তার। সেদিন তার বড় ভাই বিকাশে কিছু টাকা পাঠিয়েছেন তাকে। বাসে বসেই তিনি মোবাইলে সেই  মেসেজ পান। এর কিছু সময় পরই একটি নম্বর থেকে কল আসে। তিনি হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে খুবই চিকন স্বরের এক ব্যক্তি কথা শুরু করেন। বলেন, ভাই আপনার নম্বরে আমরা ... হাজার টাকা পাঠিয়েছি। টাকা কি পেয়েছেন ভাইজান? শফিউল বলেন, হ্যাঁ পেয়েছি। ভাই ঘটনা হলো কি, আমার ছোট ভাই ভুল করে আপনার এই নম্বরেই আরও কিছু টাকা পাঠিয়ে দিয়েছেন। দয়া করে আমাদের টাকাটা আপনি    আমাদের পাঠিয়ে দেন। শফিউল বলেন, কই কোনো মেসেজ তো আসেনি! ভাই একটু ভালো করে চেক করেন। আমি আবার ফোন দিচ্ছি। ফোন কাটতেই শফিউল মোবাইলে একটা মেসেজ দেখতে পান। ইংরেজি অক্ষরে লেখা রয়েছে বিকাশের নাম। সঙ্গে টাকার এমাউন্ট লেখা। স্ক্রিনে ভেসে আছে মোট টাকার অঙ্ক। আগের ব্যালান্সসহ মোট টাকার অঙ্ক। রোজা রমজানের দিন এই ঘটনা দেখে শফিউলের মনটা নরম হয়ে গেল। তিনি ভাবছেন, আহা বেচারি কি বিপদেই তাহলে পড়ল। তত্ক্ষণাৎ আগের নম্বর থেকে আবারও ফোন। ভাই মেসেজ আসছে। শফিউল বলেন, হ্যাঁ ভাই আসছে। ভাই, খুব বিপদে পড়ে গেছি। তাড়াতাড়ি ভাই আমি একটা নম্বর দিচ্ছি। আমার নম্বরে টাকাটা একটু সেন্ড মানি করে দেন ভাই। এমন আকুতি শুনে শফিউল তাড়াতাড়ি সেন্ড মানি করে দেন। ভাবটা এমন, রোজা রমজানের দিনে একজন মানুষকে সহযোগিতা করে পুণ্যের কাজ করলেন। শফিউলের মনটা ভালো লাগছে। কিন্তু আসল ঘটনা তিনি টের পান আরও কিছু সময় পর। তিনি বিকাশ দোকানে গিয়ে নিজ অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উঠাতে যান। তিনি দেখেন অ্যাকাউন্ট ফাঁকা। তখন ভাবতে শুরু করেন টাকা কী হলো। পরক্ষণেই সেই অজ্ঞাত লোকের ফোন কলের কথা মনে পড়ল। তিনি নিশ্চিত হন, তিনি প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে টাকাগুলো খুইয়েছেন। শফিউল আলম তত্ক্ষণাৎ সেই নম্বরে ফোন দিলেন। ফোন রিসিভ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শফিউল বললেন, ভাই টাকাটা কি ফেরত দেওয়া যায়? চিকন কণ্ঠের সেই লোকটি রাখঢাক ছাড়াই বলল, নাহ্। দিমু না। পারলে কিছু করেন গা। আর ফোন দিয়েন না। দিলে বিপদে পড়বেন। শফিউল আলম ভাবছেন, কীভাবে তিনি প্রতারণার ফাঁদে পড়লেন। তিনি ভালো করে মেসেজটি আবার পড়তে শুরু করলেন। প্রথমেই বিরাট গলদ ছিল মেসেজে। যা শফিউল খেয়াল করতে পারেনি। বিকাশ বানানটি ভুল ছিল, যা খেয়াল করেননি শফিউল। শুধু তাই নয়, নিজের অ্যাকাউন্টটিও চেক করেননি তিনি সেন্ড করার আগে। চেক করলে হয়তো তিনি ভুল করতেন না। ইদানীং আবার শুরু হয়েছে নতুন প্রতারণা। বিভিন্নজনকে ফোন করে বলা হয়, ‘বিকাশ অফিস থেকে বলছি। আপনার পার্সোনাল মোবাইল নম্বর কি বিকাশ করা?’ যিনি হ্যাঁ উত্তর দিচ্ছেন তারই হচ্ছে সর্বনাশ। মুহূর্তে শূন্য হয়ে যাচ্ছে বিকাশ অ্যাকাউন্টের ব্যালান্স। বাংলাদেশের ভিতর এবং দেশের বাইরে থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর বৈধ এবং অবৈধ দুটো ক্ষেত্রেই নাম কুড়িয়েছে বিকাশ। এর মূল কারণ হলো, কোনো রকম সঠিক পরিচয় এবং অ্যাকাউন্ট খোলা ছাড়াই যে কেউ (এমনকি জঙ্গিরাও) অন্য আরেকজনকে টাকা পাঠাতে পারে। মানি-লন্ডারিংয়ের জন্য তো বিকাশ অন্যতম। বিকাশের মাধ্যমে কত মানুষের টাকা যে জলে গেছে তারও শেষ নেই। দিন দিন নতুন নতুন প্রতারণার ফাঁদ বের করছে। নানা কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। পুলিশ বলছে, বিকাশ প্রতারণার শিকার হওয়ার মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। হালে সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। সারা দেশেই প্রতিদিন এমন প্রতারণার শিকার হওয়া ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করছেন। কিন্তু প্রতারক চক্রের সদস্যরা গ্রেফতারও হচ্ছে। কিন্তু বন্ধ হচ্ছে না বিকাশ প্রতারণা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর