শুক্রবার, ২০ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

পরিচয় প্রকাশ করায় খুন হতে হয় পুলিশ কর্মকর্তা মামুনকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

অনৈতিক কাজের সময় নিজের পরিচয় প্রকাশ করায় অপরাধীদের হাতে খুন হতে হয় পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন ইমরান খানকে। গ্রেফতার আসামিদের ভাষ্য থেকে এ তথ্য পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

মামুন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে চারজনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। গত বুধবার রাতে রাজধানীর বাড্ডা ও হাজারীবাগ থেকে তাদের

গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন মিজান শেখ, মেহেরুন্নেছা স্বর্ণা ওরফে আফরিন ওরফে আন্নাফি, সুরাইয়া আক্তার ওরফে কেয়া ও ফারিয়া বিনতে মীম। গতকাল দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্মকমিশনার আবদুল বাতেন এ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্য জানান। তিনি উল্লেখ করেন, গ্রেফতারের আগে এই আসামিরা দেশ ছেড়ে পালানোর পরিকল্পনা করছিলেন। আবদুল বাতেন জানান, বন্ধু রহমত উল্লাহর সঙ্গে বনানীর একটি বাড়িতে দাওয়াত খেতে গিয়েছিলেন মামুন। সেখানে তিনি অনৈতিক কাজের আলামত দেখতে পান। পরে তিনি নিজেকে পুলিশ পরিচয় দিয়ে অপরাধীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা চালান। কিন্তু পুলিশ পরিচয় জেনে যাওয়ায় অপরাধীরা মামুনকে হত্যা করেন। পরে গুম করার উদ্দেশ্যে লাশ গাজীপুরের কালীগঞ্জে নিয়ে যান। যুগ্মকমিশনার জানান, এ ঘটনায় জড়িত পলাতক স্বপন, আতিক, দিদার ও শেখ হৃদয়কে গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা পুলিশকে জানিয়েছেন, আফরিন বনানীর ২/৩ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলায় তার বান্ধবীর জন্মদিনের দাওয়াত দেন পূর্বপরিচিত রহমত উল্লাহকে। টেলিভিশনের এক সিরিয়ালে অভিনয় করার সূত্রে এক বছর আগে আফরিনের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল রহমতের। দাওয়াত পাওয়ার পর রহমত সেখানে মামুনকেও নিয়ে যান। রহমত উল্লাহ নিজের প্রাইভেট কারে আর মামুন যান তার মোটরসাইকেলে। ওই বাসায় যাওয়ার পর মিজান শেখসহ পাঁচ যুবক রহমত ও মামুনের ওপর চড়াও হন। তারা বলতে থাকেন, ‘আফরিন খারাপ মেয়ে, তোরাও খারাপ। আমরা প্রশাসনের লোক।’ মামুন তাদের কাছে জানতে চান, তারা কোন প্রশাসনের লোক? তখন তিনি নিজের পরিচয় দেন। এটি জেনে তারা মামুনকে কিলঘুষি মারতে শুরু করেন। পরে তারা মামুন ও রহমত উল্লাহর মুখে স্কচটেপ পেঁচিয়ে একটি ঘরে আটকে রাখেন। এ অবস্থায় রাত ১২টার দিকে মামুন মারা যান।

 পরদিন সকালে মামুনের লাশ বস্তায় ভরে রহমত উল্লাহর গাড়িতে করে উলুখোলার জঙ্গলে নিয়ে পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়। গ্রেফতারকৃতদের পৃথক জিজ্ঞাসাবাদে এই অভিন্ন বর্ণনা পাওয়া গেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান যুগ্মকমিশনার আবদুল বাতেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিবি-পূর্ব) উপকমিশনার (ডিসি) খন্দকার নুরুন্নবী, ডিবি-দক্ষিণ বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) জামিল হাসান, ডিবি-পূর্ব বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) আসাদুজ্জামান ও ডিএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি-মিডিয়া) ওবায়দুর রহমান। প্রসঙ্গত, ৮ জুলাই মামুন রাজধানীর সবুজবাগ থেকে নিখোঁজ হন এবং এ ঘটনায় সবুজবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে তার পরিবার। ১০ জুলাই কালীগঞ্জের উলুখোলার এক জঙ্গল থেকে মামুনের পোড়া লাশ উদ্ধার করা হয়।

সর্বশেষ খবর