শনিবার, ২১ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

এবার ফুলের সঙ্গে হাসবেন চাষিরাও

পদখালীর পরিচিতি বিশ্বময়

সাইফুল ইসলাম, যশোর

এবার ফুলের সঙ্গে হাসবেন চাষিরাও

শুধু ফুল চাষের কারণেই যশোরের গদখালীর পরিচিতি আজ বিশ্বময়। এখানকার প্রায় ৬ হাজার চাষি ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে বছরে উৎপাদন করছেন প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ফুল। দেশি-বিদেশি ১১ রকমের ফুলের চাষ হয় এখানে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিন দশক ধরে সরকারি-বেসরকারি কোনো সহায়তা ছাড়াই এখানকার চাষিরা দেশের কাঁচা ফুলের মোট চাহিদার ৭০ ভাগ জোগান দিয়ে আসছেন। তাদের দেখাদেখি এখন দেশের অনেক জেলাতেই চাষিরা ফুল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। ফুল চাষ, গ্রেডিং, প্যাকেজিং, বিপণনসহ বিভিন্ন পর্যায়ে এখন প্রায় ৫০ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িয়ে আছে। ফুল চাষে যশোরের গদখালীর চাষিদের এই যে বিপ্লব, তা কেবল তাদের নিজেদের কঠোর পরিশ্রম আর অভিজ্ঞতার কারণেই সম্ভব হয়েছে। ফুল চাষে অর্থনৈতিকভাবে এসব চাষির ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু প্রতি বছরই তাদের নানান সমস্যারও মুখোমুখি হতে হয়। গদখালীতে আধুনিক পদ্ধতিতে ফুলের গ্রেডিং, প্যাকেজিং ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। নেই ফুল পরিবহনের জন্য বিশেষায়িত যানবাহন। মধ্যপ্রাচ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশে বাংলাদেশের কাঁচা ফুলের চাহিদা রয়েছে। এখানকার চাষিরা রপ্তানিযোগ্য ফুল উৎপাদন করলেও এসব সুবিধা না থাকায় তারা রপ্তানি করতে পারছেন না। ফুল পচনশীল পণ্য। যখন একসঙ্গে অনেক ফুল বাজারে ওঠে, তখন ফুলের দাম কমে যায়। ক্রেতার অভাবে ফুল পচে নষ্ট হয়। চাষিরা হন ক্ষতিগ্রস্ত। ফুল সংরক্ষণ করা গেলে এ সমস্যা হতো না। এখানে ফুল নিয়ে নেই কোনো গবেষণার সুযোগও।

এসব সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ফুল চাষিদের দিকে নজর দেওয়া শুরু করে। ইউএসএআইডির সহযোগিতায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে গদখালীর পানিসারা গ্রামে (এ গ্রামেই দেশে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ শুরু হয়েছিল) ১ একর ১৯ শতক জমির ওপর একটি ফুল প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র ও ফুলবাজার গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয় সরকার। এ প্রকল্পের আওতায় এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরির কাজ শুরু হয়ে গেছে, যা এখন দৃশ্যমান।

আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে এর নির্মাণকাজ শেষ হবে। ফুল প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র ও ফুলবাজার থেকে কী সুবিধা পাওয়া যাবে? বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম সে প্রশ্নে বলেন, ফুল চাষ, গ্রেডিং, প্যাকেজিং ও বিপণনের ক্ষেত্রে নেদারল্যান্ডসকে সারা পৃথিবীর মডেল ধরা হয়। সেই নেদারল্যান্ডসের আদলেই পানিসারায় ফুল প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র ও ফুলবাজার গড়ে তোলা হচ্ছে। তিনি বলেন, এখানে আধুনিক পদ্ধতিতে ফুল গ্রেডিং ও প্যাকেজিং করা হবে। এরপর এসব ফুল কুলিং চেম্বারে সংরক্ষণ করা হবে। ফুল কুলিং চেম্বারে রেখে চাষিরা ফুলের ক্রেতাদের সঙ্গে দরদাম করতে পারবেন। দাম ভালো না পেলে প্রয়োজনে ফুল ১০ থেকে ১৫ দিন পরও বিক্রি করতে পারবেন। প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র পরিচালনার জন্য একটি পরিচালক পর্ষদ থাকবে। প্রয়োজনে তাদের কাছেও ন্যায্যমূল্যে ফুল বিক্রি করতে পারবেন চাষিরা। এতে চাষিরা ন্যায্যমূল্যে তাদের ফুল বিক্রির নিশ্চয়তা পাবেন। আবদুর রহিম বলেন, গ্লাডিওলাসসহ বিভিন্ন ধরনের ফুলের বীজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে এখানে। এই কেন্দ্রে ফুল চাষিদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। জমির মাটি পরীক্ষার জন্য আলাদা একটি ইউনিট থাকবে। গদখালীতে ইতিমধ্যে ২ শতাধিক নারী স্বতন্ত্রভাবে ফুল চাষ করছেন। সে কারণে ফুল চাষে এগিয়ে আসা নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তার জন্য এ কেন্দ্রে বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হবে। আবদুর রহিম আরও বলেন, ফুলের এই বাজারে প্রতিদিন ফুলের বাজারদর প্রদর্শন করা হবে। বাজারের নিজস্ব একটি ওয়েবসাইট থাকবে। সেখানে নানারকম ফুলের প্রতিদিনকার দরদাম আপডেট করা হবে। এর সঙ্গে বিদেশের বাজারের সম্পর্ক স্থাপন করা হবে। ফলে এখান থেকে ফুল রপ্তানির ব্যাপারটি তখন সহজ হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি উল্লেখ করেন, যেহেতু গদখালীতেই ফুল চাষে বিপ্লব সৃষ্টি হয়েছে, তাই কৃষি মন্ত্রণালয় এখানে ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ফুল গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা গদখালী বাজারের পাশে একটি সুবিধাজনক জায়গাও পছন্দ করে গেছেন। একনেকে এটি পাস হলে শুধু গদখালী নয়, সারা দেশে ফুল চাষে অভাবনীয় অগ্রগতি সাধন হবে। এ খাত থেকে দেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও আয় করতে পারবে। ফুলের মতোই হাসি ফুটবে ফুল চাষিদের মুখেও।

সর্বশেষ খবর