বৃহস্পতিবার, ২৬ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

জলজট ভোগান্তিতে ঢাকা-চট্টগ্রামবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ও চট্টগ্রাম

জলজট ভোগান্তিতে ঢাকা-চট্টগ্রামবাসী

শ্রাবণ মাসের টানা বর্ষণে রাজধানী ঢাকা এবং বন্দর নগরী চট্টগ্রামজুড়ে তৈরি হয়েছে জলজট। জলজটের কারণে কর্মজীবী মানুষ এবং শিক্ষার্থীদের পড়তে হয় সীমাহীন দুর্ভোগে। মৌসুমি বৃষ্টির পানি বের হতে না পারায় প্রতিদিনই বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে।

আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকায় ৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশের অধিকাংশ জায়গায় মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে কক্সবাজারে ২৮১ মিলিমিটার। পরিমাণ কমলেও বৃষ্টির পূর্বাভাস জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলজটে রাজধানীর মিরপুর পরিণত হয়েছে দুর্ভোগের কেন্দ্রবিন্দুতে। হাঁটুর নিচে পানি নেই কোথাও। পানিতে না নেমে যাওয়ার উপায় নেই এই এলাকায়। পানির পাশাপাশি ভাঙাচোরা রাস্তা আর কাদায় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। ধানমন্ডি এলাকার মানুষের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে ২৭ নম্বর। পানির ঢেউ ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আশপাশের সবকিছু। ধানমন্ডি ২৭ থেকে আসাদগেট পর্যন্ত পানিতে ডুবে থাকা রাস্তা পার করে দিতে ভ্যান চালক নিচ্ছেন ১০ টাকা করে। পানি থেকে পোশাক বাঁচিয়ে অফিসে বা স্কুল-কলেজে পৌঁছাতে অনেকেই চড়ে বসছেন ভ্যানে। বৃষ্টির কারণে ফ্লাইওভারের মুখে হালকা পানি জমে থাকতে দেখা যায়। পানির মধ্যে হেলেদুলে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। ধানমন্ডি এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুরাইয়া খানম বলেন, বৃষ্টি হলে আর কোথাও পানি থাক আর না থাক এই রাস্তায় হাঁটু পানি হবেই। এভাবে পানিতে ভিজে কীভাবে ক্যাম্পাসে যাব? প্রতিদিন এই একই ঘটনা ঘটলেও কারও নজর নেই।

চট্টগ্রাম : বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় বন্দর নগরী চট্টগ্রাম। পানির নিচে তলিয়ে যায় পুরো এলাকা। চট্টগ্রামে টানা বর্ষণের পর পানি নামলেও ক্ষতবিক্ষত সড়ক হয়ে উঠেছে ভয়ঙ্কর। ছোট-বড় খানাখন্দে ভরে গেছে নগরের অধিকাংশ সড়ক। সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল দুরূহ হয়ে পড়েছে। তবে বৃষ্টির পানি ছাড়াও নগরের অনেক স্থানে ওঠে জোয়ারের পানি। এসব পানি একবার উঠলে টানা কয়েক ঘণ্টা স্থায়ী হয়। ফলে জোয়ারের পানি ওঠে এমন এলাকার বাসিন্দাদের অন্তহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। নগরবাসীর অভিযোগ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) সারা বছর জুড়েই সড়ক সংস্কার-উন্নয়ন করে। কিন্তু কাজের মান ঠিক না থাকায় অল্প কিছুদিন পরই আবার সড়কের বিটুমিন উঠে যায়। এক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারের দায়ও কম নয়। চসিকের প্রধান প্রকৌশলী লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘অতি বর্ষণে নগরের বেশ কিছু সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রুটিন ওয়ার্কের অংশ হিসেবে এসব সড়ক মেরামতের কাজ চলছে। জানা যায়, নগরের আগ্রাবাদ এলাকার বিভিন্ন সড়ক, হালিশহর, বড়পুল, ছোটপুল, মুরাদপুর, জিইসি মোড়, চকবাজার কাপাসগোলা মোড়, পাথরঘাটা রোড, মুরাদপুর-অক্সিজেন সড়ক, ২ নম্বর গেট-বায়েজিদ সড়ক, আগ্রাবাদ নিমতলা রোড ছাড়াও কিছু দিন আগে ভালো ছিল এমন অনেক সড়কও অতিবর্ষণে বিটুমিন উঠে গেছে। চসিকের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম শহরে মোট এক হাজার ১০০ কিলোমিটার সড়ক আছে।

এর মধ্যে অ্যাসফল্ট (পিচঢালা) ৬২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৭ দশমিক ২০ মিটার প্রস্থের সড়ক আছে ১১৪০টি। ২৪৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৩ দশমিক ৫৫ মিটার প্রস্থের কংক্রিট সড়ক আছে ১১০৯টি। ৫৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৩ দশমিক ৫০ মিটার প্রস্থের ব্রিকসলিং সড়ক আছে ২৩৫টি। ৪৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার প্রস্থের কাঁচা সড়ক আছে ২৪৫টি।

সর্বশেষ খবর