শুক্রবার, ২৭ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

ঝুঁকি সত্ত্বেও ছাড়ছে না পাহাড়

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

ঝুঁকি সত্ত্বেও ছাড়ছে না পাহাড়

চট্টগ্রাম মহানগর ও আশপাশের ২৮ পাহাড়কে অতিঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করে জেলা প্রশাসন। ঝুঁকিপূর্ণ এসব পাহাড়ে বাস করছে ৬৮৪ পরিবার। কিন্তু এসব পাহাড়ে জীবনকে বাজি রেখে, জীবনের মায়া বাদ দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছে পরিবারগুলো। প্রতি বছর বর্ষায় জেলা প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার জন্য বললেও তারা পাহাড়কে আঁকড়ে ধরে দিনাতিপাত করছে।

জানা যায়, বর্ষা মৌসুম শুরুর পরই ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার জন্য অভিযান ও মাইকিং করছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। রবিবার থেকে টানা বর্ষণের পর আবারও মাইকিং করে প্রশাসন। এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়সংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। পক্ষান্তরে ২৫ জুলাই অনুষ্ঠিত ডিসি সম্মেলনে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বর্ষাকালে ব্যাপকভাবে পাহাড়ধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ভারসাম্য নষ্টসহ নানা চিত্র তুলে ধরেন। একই সঙ্গে পাহাড়ের অবৈধ স্থাপনা স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ ও পাহাড় কাটা বন্ধের কথা বলেন তিনি। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় রক্ষা আমাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। বর্ষা মৌসুম ছাড়াও বিভিন্ন সময় আমরা অভিযান পরিচালনা করি। এর পরও তারা আবার ফিরে আসে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে। দেখে মনে হয় তাদের বাঁচার তাগাদা থাকলেও জীবনের মায়া নেই। তবু আমরা তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে রাখার জন্য সংলগ্ন স্কুলগুলোকে আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণা করেছি।’

অভিযাগ আছে, ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাস করলেও স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় এসব পরিবারে আছে গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির সংযোগসহ নাগরিক নানা সুবিধা। জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত প্রতি বছরই অভিযানে এসব নাগরিক সুবিধা বিচ্ছিন্ন করে দেয়। কিন্তু পরে ঠিকই এসব সংযোগ আবার দেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলায় প্রায় ৫০০ পাহাড় আছে। তবে মহানগর ও আশপাশ এলাকায় সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন ঝুঁকিপূর্ণ ২৮টি পাহাড় রয়েছে। এর মধ্যে রেলওয়ের ব্যক্তিমালিকানাধীন আছে সিআরবির পাদদেশ, টাইগার পাস-লালখান বাজার রোডসংলগ্ন পাহাড়, টাইগার পাস মোড়ের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের পাহাড়, রেলওয়ে এমপ্লয়িজ গার্লস স্কুলসংলগ্ন পাহাড় ও আকবর শাহ আবাসিক এলাকাসংলগ্ন পাহাড়। সড়ক ও জনপথ, রেলওয়ে, গণপূর্ত ও ওয়াসার মালিকানাধীন আছে মতিঝরনা ও বাটালি হিলসংলগ্ন পাহাড়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আছে পরিবেশ অধিদফতরসংলগ্ন পাহাড় ও লেক সিটি আবাসিক এলাকার পাহাড়। বন বিভাগের আছে বন গবেষণাগার ও বন গবেষণা ইনস্টিটিউটসংলগ্ন পাহাড়। ইস্পাহানি গ্রুপের রয়েছে ইস্পাহানি পাহাড়। জেলা প্রশাসনের ডিসি হিলের চেরাগি পাহাড় মোড়সংলগ্ন পাহাড়, এ কে খান কোম্পানির এ কে খান কোম্পানি পাহাড়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাহাড়, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের কৈবল্যধামের বিশ্ব কলোনির পাহাড়, ভিপি লিজভুক্ত লালখান বাজার, চান্দমারী রোডসংলগ্ন জামেয়াতুল উলুম ইসলামিয়া মাদ্রাসাসংলগ্ন পাহাড়, সরকারি (এপি সম্পত্তি) নাসিরাবাদ শিল্প এলাকাসংলগ্ন পাহাড়। ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড়গুলোর মধ্যে আছে মোজফফরনগর পাহাড়, প্রবর্তক পাহাড়, গোল পাহাড়, জয় পাহাড়, চট্টেশ্বরী হিল, ফয়’স লেক আবাসিক এলাকা পাহাড়, জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটিসংলগ্ন পাহাড়, গরিবুল্লাহ শাহ মাজারসংলগ্ন বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটি পাহাড়, মিয়ার পাহাড়, ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট একাডেমির উত্তর পাশে মীর মোহাম্মদ হাসানের পাহাড়, ইস্পাহানি পাহাড়সংলগ্ন দক্ষিণ পাশের হারুন খানের পাহাড়ের পশ্চিমাংশ।

সর্বশেষ খবর