রবিবার, ২৯ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা
বিশ্ব বাঘ দিবস আজ

সাত কারণে বাঘ কমছে সুন্দরবনে

মোস্তফা কাজল

সাত কারণে বাঘ কমছে সুন্দরবনে

আজ বিশ্ব বাঘ দিবস। দিনটি নানা কর্মসূচিতে পালন করা হবে। তবে বাংলাদেশে এখনো অজানাই রয়ে গেছে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা আসলে কত। বলা হচ্ছে, চার দেশে বাঘের সংখ্যা বাড়লেও সাত কারণে বাংলাদেশের সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা দিন দিন কমছে। ২০১৫ সালের জরিপ বলছে, বাংলাদেশে বাঘ রয়েছে ১০৬টি। বন বিভাগ বলছে ১৩০টি। এ নিয়ে বেশ জটিলতায় বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা। বাঘ সমৃদ্ধ ১৩ দেশে বাঘ রয়েছে ৩ হাজার ৮৯০টি। শুধু ভারতে রয়েছে ২ হাজার ২২৬টি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা দিন দিন কমছে সাত কারণে। যেমন বাঘ শিকার ও দেহাবশেষ পাচার, বাঘ সমৃদ্ধ বনাঞ্চল ধ্বংস, বাঘের আবাসস্থলের চারপাশে শিল্প ও কলকারখানা স্থাপন, বাঘ শিকার করার জন্য ফাঁদ ও অবাধে বিষটোপের অপব্যবহার, বাঘের খাদ্য শিকার প্রাণী নিধন ও মাংস বাজারজাতকরণ। বাঘ ও মানুষের মধ্যকার দ্বন্দ্ব বেড়ে যাওয়া এবং বাঘ সমৃদ্ধ বনাঞ্চল দিয়ে যানবাহন ও নৌচলাচল বেড়ে যাওয়া—এ সংকটের অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বাঘ বিশেষজ্ঞরা। প্রধানত সুন্দরবনের বাঘের স্বাভাবিক জীবনচক্রের জন্য যে স্বাদু পানি, শিকার ও গহিন জঙ্গল ছাড়াও নিরুপদ্রব প্রজনন ব্যবস্থা থাকা দরকার— তার কোনোটাই বর্তমানে যথেষ্ট নয়। এক কথায় সুন্দরবনই হচ্ছে এশিয়ার মধ্যে বন্য প্রাণীর বৃহত্তম আবাসভূমি। বর্তমানে সুন্দরবনে ৩৭৫ প্রজাতির বন্য প্রাণী রয়েছে। বন বিভাগের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০০০ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সুন্দরবন অঞ্চলে ৪৪টি বাঘ হত্যার ঘটনা ঘটে। বাঘ নিয়ে গবেষণাকারীরা বলেন, পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ এলাকার সুন্দরবনের বাঘ স্থান পরিবর্তন করে থাকে। বনে গভীর জঙ্গল না থাকায় বাঘ তার নিরাপদ আবাসন হারিয়েছে। বাঘ সচরাচর নিঃশব্দ এলাকা পছন্দ করে। এদের শিকার হিসেবে বনে যে শূকর দরকার, তা যথেষ্ট নয়। অপরদিকে বয়সী বাঘের পক্ষে দ্রুতগতির হরিণ ধরা খুবই কঠিন। মিষ্টিপানি আর শিকারের সন্ধানে বাঘ নিরুপায় হয়ে নদী পার হয়ে লোকালয়ে চলে আসে।

এরপর পরিণতি হয় নিশ্চিত গণপিটুনি অথবা গুলিতে মৃত্যু। ২০১০ সালে বন বিভাগ ও ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাস্ট অব বাংলাদেশের যৌথ জরিপে বাঘের সংখ্যা হয় ৪০০ থেকে ৪৫০। এরপর চার বছরে বাঘের সংখ্যা বেড়ে ২০০৪ সালের অবস্থায় ফিরে গেছে। ২০১৬ সালের এক গণনায় বাংলাদেশ ও ভারত মিলিয়ে পুরো সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ১৭০। পরের বছর ২০১৭ সাল থেকে বন বিভাগ ও ওয়াইল্ড টিম বাঘ গণনা কাজ করে। ওই বছর আরও বলা হয় সুন্দরবনের পশ্চিমবঙ্গ অংশে বাঘের সংখ্যা ১০০। প্রধান বন সংরক্ষক সফিউল আলম চৌধুরী বলেন, ২০১৫ সালে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘ ছিল ১০৬টি। পরের বছর ২০১৬ সালে বন বিভাগের বাঘ গণনায় পাওয়া গেছে ১২২টি। তাঁর মতে, ২০১৮ সালে বাঘের সংখ্যা এখন বেড়ে হয়েছে ১৩০টি। পাশাপাশি নতুন করে যুক্ত হয়েছে বিষটোপে বাঘ শিকার, শাবক পাচার, পিটিয়ে ও গুলি করে বাঘ হত্যার ঘটনা। চোরাকারবারিরা শাবকও দেশ-বিদেশে পাচার করে আসছে। বন ও পরিবেশমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাঘ সুন্দরবনের অমূল্য সম্পদ। বর্তমান সরকার সুন্দরবন রক্ষায় নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। ড. আবদুল ওয়াদুদ বলেন, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বাড়াতে হলে নতুন নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এ ছাড়া ক্যাপটিভ বাঘ শাবক লালন-পালনের জন্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে। সুন্দরবনে পুরুষ বাঘ সংখ্যায় বেশি হলেও বাঘিনীর সংখ্যা কম। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর একটি বাঘিনী একবারে দুই থেকে চারটি বাচ্চা দেয়।

জানা গেছে, জন্ম দেওয়ার পর থেকে বাঘিনী শিকার ধরা ছাড়াও স্বাভাবিক চলাফেরা সম্পূর্ণ বন্ধ করে বাচ্চাগুলোকে নিয়ে নিরাপদ জায়গায় লুকিয়ে থাকে। এ সময় শাবকগুলো মায়ের সঙ্গে চলাফেরার যোগ্য হয়ে ওঠা পর্যন্ত এই নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বাঘিনী।

সর্বশেষ খবর