রবিবার, ২৯ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

কলকাতার সেই ট্রাম এখন

শিমুল মাহমুদ, কলকাতা থেকে

কলকাতার সেই ট্রাম এখন

ঐতিহ্যের অংশীদার হয়ে কলকাতায় আজও টিকে আছে ধীরগতির বাহন ট্রাম। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নগরে মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার বাড়লেও দীর্ঘ ১৪৫ বছরের ইতিহাস নিয়ে বহাল তবিয়তেই চলছে ট্রামের চলাচল। হালে যানজটের অজুহাতে ট্রামের টুঁটি চেপে ধরার সব আয়োজন সম্পন্ন হয়ে আছে। মমতা সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প মেট্রোরেলের জন্য জমি ছেড়ে দিতে  হয়েছে ‘ক্যালকাটা ট্রাম কোম্পানি’কে (সিটিসি)। বন্ধ করে দিতে হয়েছে কয়েকটি রুট। একটা সময় ছিল, সেই ১৯৮০-র দশকেও বেশ দাপটের সঙ্গে চলাচল করত ট্রাম। তখন প্রায় সাড়ে চারশ’ ট্রাম চলত নগরের ৫০টি রুটে। বর্তমানে ট্রামের সংখ্যা কমে ২৭৭টিতে ঠেকেছে। তার মধ্যে গড়ে রাস্তায় নামে মাত্র ৪৫টি। রুট সংখ্যা অর্ধেক কমে ২৫টিতে দাঁড়িয়েছে। নগরীর ব্যস্ত সড়কের মাঝ দিয়ে হেলে দুলে চলাচলকারী ট্রাম এই ধীরগতির কারণেই অসংখ্য মানুষের কাছে স্মৃতিতাড়িত জনপ্রিয় বাহন। বিশেষ করে সিনিয়র সিটিজেন, নারী ও শিশুদের নির্ভরতার বাহন ট্রাম। ১৮৭৩ সালে কলকাতায় ট্রামের যাত্রা শুরু। কিন্তু সাত বছর চলার পর তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কারণ বাণিজ্যিক দিক থেকে ট্রাম পরিচালনা মোটেও লাভজনক ছিল না। ১৯শ’ মাইল বিস্তৃত ট্রাম লাইন তখন ঘোড়ায় টানত। পরে উনিশ দশকের প্রথম দিকে বিদ্যুতের মাধ্যমে ট্রাম চালানো শুরু হয়। সে সময় খুব দ্রুতই কলকাতার মানুষের পছন্দের বাহন হয়ে ওঠে ট্রাম। তৎকালীন বাসের ভিড় এড়িয়ে নিত্যদিনের গন্তব্যে যেতে একমাত্র বাহন ছিল ট্রাম। তবে কলকাতায় মেট্রোরেল চালুর পর থেকেই ট্রামের প্রতি মানুষের নির্ভরতা কমতে থাকে। তারপর থেকে সেভাবে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি ট্রাম। তবে ভারতে একমাত্র কলকাতায় টিকে থাকা ট্রাম যাতে একেবারে বিলুপ্ত না হয় তার জন্য ভিন্ন পরিকল্পনায় ট্রামকে জনপ্রিয় রাখতে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। জানা গেছে, ভাড়া নিয়ে ঐতিহ্যের ওই ট্রামে যে কেউ বিয়ের আসরও বসাতে পারে। অনেকেই বিয়ের মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে আসর বসান লঞ্চে, স্টিমারে, এমনকি বিমানেও। বিয়ের জন্য কেউ হেরিটেজ ট্রাম ভাড়ায় চাইলে, সেটাও পাওয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, চলন্ত রেস্তোরাঁ হিসেবে ব্যবহারের জন্য ট্রাম ভাড়া দেওয়ার বিষয়টি দ্রুতই বাস্তবায়ন হবে। কর্মকর্তারা আরও বলেন, শহরে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। সে কারণে আগের তুলনায় ট্রাম পরিষেবা অনেকটা সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। পরিবহন নিগমের হাতে ট্রাম রয়েছে ২৭৭টি। কিন্তু বর্তমানে দিনে গড়ে ৪৫ থেকে ৪৬টির বেশি ট্রামকে রাস্তায় নামানো যাচ্ছে না। তাই সচল সক্ষম থাকলেও বহু ট্রামকে দিনের পর দিন বসিয়ে রাখতে হচ্ছে। সেসব ট্রাম কীভাবে ব্যবহার করা যায়, তা নিয়ে পরিকল্পনা চলছিল কিছুদিন ধরেই। সেই ভাবনা থেকেই চলন্ত ট্রামের মধ্যে রেস্তোরাঁ চালুর জন্য ট্রাম ভাড়া দেওয়া হবে। এদিকে ট্রাম সংস্থার জমিও বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। প্রথম দফায় কলকাতার ৩৭৩ কাঠা জমি নিরানব্বই বছরের জন্য লিজ দেওয়া হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রয়োজনে ডিপোর স্বত্বও লিজ দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। এরমধ্যে টালিগঞ্জ ডিপোর ২৪১ কাঠা জমি, বেলগাছিয়া ডিপোর বাহান্ন কাঠা জমি, শ্যামবাজারের ৩১ কাঠা, কালীঘাটের ১২ কাঠা, গ্যালিফ স্ট্রিটের ১৫ ও খিদিরপুরের ২২ কাঠা জমি লিজের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। দিন দিন ট্রামের সংখ্যা ও পরিষেবা যেভাবে কমছে আগামীতে কতদিন কলকাতায় ট্রাম থাকবে তা বলা খুব কঠিন। তবে এই ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর