শিরোনাম
সোমবার, ৩০ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

সংকট তাবলিগ জামাতে

আহমদ শফীর উদ্যোগ কী ভেস্তে যাবে

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

সংকট তাবলিগ জামাতে

তাবলিগ জামাতের দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব নিরসনে উদ্যোগ নিয়েছেন দেশের শীর্ষ আলেম ও হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শফী। তাবলিগ জামাতের সংকট নিরসনে গত শনিবার রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরে ওয়াজাহাতি জোড় (পরামর্শ সভা) করে আলেমদের একটি অংশ। এ পরামর্শ সভায় ছয়টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সিদ্ধান্তগুলো হলো— ইসলাম ও তাবলিগ জামাত তিনটি মৌলিক কারণ লঙ্ঘন করায় মাওলানা সাদকে বর্জন করা, মাওলানা সাদের কোনো সিদ্ধান্ত বাংলাদেশে বাস্তবায়ন না করা, বাংলাদেশ থেকে কোনো জামাত কিংবা ব্যক্তিকে দিল্লির মারকাজে না পাঠানো ও দিল্লি মারকাজ থেকে আসা কাউকে বাংলাদেশে কাজ করার সুযোগ না দেওয়া, তাবলিগের পূর্ববর্তী তিন হজরতজি (তাবলিগের পূর্ববর্তী তিন মুরব্বি) পদ্ধতি অনুসরণ করে দেশে তাবলিগের কার্যক্রম পরিচালনা করা, কাকরাইল মসজিদের সাদের অনুসারীদের তাবলিগের কোনো কার্যক্রমে না রাখা এবং আগামী বছর নির্ধারিত সময়ে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা করা।

 

তবে এসব সিদ্ধান্তের পর কওমি মতাদর্শী তাবলিগ জামাতের দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়েছে। এ সিদ্ধান্তগুলোর বিরোধিতা করছেন মাওলানা সাদ কান্দালভির অনুসারীরা। ওই বৈঠকের পর প্রকাশ্যে মাঠে নেমেছে কওমিদের দুটি অংশ। তাবলিগের অন্যতম মুরব্বি ও চট্টগ্রাম লাভলেইন মারকাজের শূরা কমিটির সদস্য সচিব আবদুল হালিম বলেন, ‘কিছু বিপথগামী ও পাকিস্তানের এজেন্ট তাবলিগকে ধ্বংস করতে শনিবার ঢাকায় বৈঠক করেছেন। তারা সামনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতেই এ বৈঠক করেছেন। এ বৈঠকের সঙ্গে তাবলিগের মূল স্রোতের কোনো সম্পর্ক নেই।’ তিনি বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের আমির কওমিদের কাছে একজন সম্মানী ব্যক্তি। তিনি কী কারণে রাজনৈতিক নেতাদের ফাঁদে পা দিয়েছেন তা মাথায় আসছে না। আমরা ব্যক্তি আহমদ শফীকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু তিনি গতকাল যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা মানি না।’ বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক) মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘যারা মাওলানা সাদের নেতৃত্ব মানেন না তারাই এ পরামর্শ সভায় আয়োজন করেছেন। ওই পরামর্শ সভায় দেশের শীর্ষ সব আলেম অংশ গ্রহণ করেছেন। সবাই একমত হওয়ার পরই এ সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়েছে।’ হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মাঈনুদ্দীন রুহী বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি স্বার্থসিদ্ধির জন্য হেফাজতে ইসলামের আমির পরামর্শ সভা করেননি। তিনি কওমি সমাজের মঙ্গলের জন্যই দেশের সব আলেমকে নিয়ে ওই বৈঠক করেছেন। এ বৈঠকে যে ছয়টি সিদ্ধান্ত হয়েছে তা সবার মেনে নেওয়া উচিত। কোনো ব্যক্তি বিশেষ যদি আল্লামা আহমদ শফীর এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে তা হলে নিজের পায়ে কুড়াল মারার মতো হবে।’

জানা যায়, ভারতীয় উপমহাদেশের তাবলিগের বৃহত্তম সংগঠন দিল্লির নিজামুদ্দীন মারকাজের আমির মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্দালভির বিভিন্ন বিতর্কিত মন্তব্যের পর দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে বিশ্ব তাবলিগ জামাত। এ বিভক্তির জেরে বাংলাদেশেও দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে তাবলিগ জামাত। এ দ্বন্দ্বের জেরে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় তাবলিগ জামায়াতের বিভক্ত দুই দলের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। এমনকি গত বিশ্ব ইজতেমায় মাওলানা সাদ কান্দালভির আগমনকে ঘিরে মারমুখী অবস্থান নেয় তাবলিগ জামাতের লোকজন। ঢাকা বিমানবন্দর এলাকা কয়েক ঘণ্টা অবরোধও করে রাখেন। দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা এ দ্বন্দ্ব নিরসনে কিছু দিন আগে উদ্যোগ নেন আল্লামা শফী। ওই উদ্যোগের অংশ হিসেবে শনিবার ঢাকায় তিনি বৈঠক করেন দেশের শীর্ষ আলেমদের নিয়ে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর