শুক্রবার, ৩ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভেঙে পড়েছে সড়ক যোগাযোগ

জনদুর্ভোগ চরমে, হেঁটে দীর্ঘ পথ পাড়ি

আরাফাত মুন্না

ভেঙে পড়েছে সড়ক যোগাযোগ

সড়ক বন্ধ থাকায় দীর্ঘপথ হেঁটে পাড়ি দেয় মানুষ। শাহবাগ থেকে গতকাল তোলা ছবি —রোহেত রাজীব

সকাল সাড়ে ১১টা। রাজধানীর দনিয়ার কাজলা বাস স্ট্যান্ডে গুলিস্তান যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মনির হোসেন। জানালেন প্রায় এক ঘণ্টা থেকে দাঁড়িয়ে আছেন, কোনো গাড়ি নেই। ভাবছেন হেঁটেই চলে যাবেন। মনিরের মতো শত শত যাত্রীও অপেক্ষায় রয়েছেন গাড়ির জন্য। পাশে শনিরআখড়ায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধের কারণে কোনো যানবাহনই আসছে না। গতকাল বৃহস্পতিবার একই চিত্র ছিল গোটা রাজধানীজুড়ে। সড়কে গণপরিবহন না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। দুর্ভোগে পড়েছেন হজ্বযাত্রীরাও। রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর নিহতের ঘটনায় গত পাঁচ দিনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের টানা অবরোধে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে। অচল হয়ে গেছে রাজধানীর অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থাও। কোনো প্রকার পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলো থেকে ঢাকার বাইরে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। ফলে ঢাকার বাইরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাস টার্মিনালগুলোতে যাওয়া সাধারণ যাত্রীরা সম্মুখীন হয়েছেন চরম দুর্ভোগের। আবার ঢাকার বাইরে থেকেও কোনো বাস টার্মিনালগুলোতে আসেনি। এতে রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় সব সড়কপথে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। যারা বিমান কিংবা ট্রেনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢাকা এসেছেন তাদেরও চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। এয়ারপোর্ট ও ট্রেন স্টেশন থেকে গন্তব্যে যাওয়ার জন্যও কোনো যানবাহন মিলছে না তাদের। এ ছাড়া রাজধানীর অনেক সড়ক অবরোধ করে যানচলাচল বন্ধ করে দিয়েছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। দুর্ভোগে পড়েছেন হজ্বযাত্রীরাও। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ফাঁকা সড়কে দুই-একটি গাড়ি চলতে দেখা গেছে। সেগুলোতে হুড়মুড় করে উঠতে চেষ্টা করছেন অনেক যাত্রী। কিন্তু শেষমেষ ব্যর্থ হচ্ছেন অনেকেই। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মিরপুর এলাকা থেকে যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া থেকে উত্তরা পর্যন্ত বিভিন্ন রোডে দুই-একটি বাস চলছে। সেগুলোতে অনেক ঠেলাঠেলি করে কর্মজীবীদের উঠতে হচ্ছে। চরম ভোগান্তি ও কষ্টে নাকাল। তবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণায় সকালে রাস্তায় কোনো স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের দেখা যায়নি। মোহাম্মদপুর-আরামবাগ, গুলিস্তান-গাজীপুর রুটে চলাচলকারী নিয়মিত বাসগুলো রোডে প্রায় দেখাই যায়নি। সকালে দেখা গেছে, রোকেয়া সরণি, প্রগতি সরণি, বিমানবন্দর রোড, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউয়ের সড়ক প্রায় ফাঁকা। কয়েকটি বাস চলাচল করছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় একদম কম। সকালে কথা হয় অফিসমুখী নাজমা আক্তারের সঙ্গে। তিনি জানান, গত চার দিন ধরে গাড়ি না পাওয়ায় অফিস শেষে নাবিস্কো থেকে মালিবাগ হেঁটেই যান। তবে কষ্ট হলেও শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির পক্ষে সহমত জানান। আবিদ আজহার মিরপুর ১০ নম্বরের বাসা থেকে সকাল ৭টার দিকে বের হয়েছেন। তিনি মতিঝিল যাবেন। রাস্তায় বাস কম। যেগুলো চলছে তাতেও লোক ঠাসা। কীভাবে সময় মতো অফিস পৌঁছাবেন এ নিয়ে উৎকণ্ঠায় আছেন তিনি। নিউ মার্কেট এলাকায় বাসের অপেক্ষায় থাকা পাপড়ি জানান, তিনি উত্তরার আজমপুর যাবেন। কিন্তু কোনো বাস নেই। তার মতো এমন আরও অনেকে, কর্মস্থল বা গন্তব্যে যেতে বাসের অপেক্ষায় সময় গুনছেন। এতে সবার ভোগান্তি যেন কমছেই না। দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে না যাওয়ার বিষয়ে সায়েদবাদ বাস টার্মিনালের একাধিক কাউন্টার ম্যানেজার জানান, পরিবহন মালিক সমিতির নিষেধাজ্ঞা থাকায় বাস চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত বন্ধই থাকবে। তবে ভোর ৬টা পর্যন্ত বাসস্ট্যান্ড থেকে দূরপাল্লার উদ্দেশে বেশ কিছু বাস ঢাকা ছেড়েছে বলেও জানান তারা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর