শুক্রবার, ৩ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

এক ভুলে সব শেষ

মির্জা মেহেদী তমাল

এক ভুলে সব শেষ

চট্টগ্রামের একটি কলেজের অনার্সের ছাত্রী শিউলি। মোবাইল ফোনে পরিচয় হয় রনির সঙ্গে। রনি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। অনিক গ্রুপের কর্ণধার। মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক হয়। দুজন দুজনকে ভালোবেসে ফেলে। তারা দেখা করে। বিষয়টি গোপন থাকে না। পরিবার বিষয়টিকে ভালোভাবে না নিলেও আদালতে গিয়ে বিয়ে করেন তারা। বাধ্য হয়ে শিউলির পরিবার মেনে নেয়। রনি বিয়ের কয়েক দিনের মধ্যেই ব্যবসার কথা বলে টাকা চান শিউলির কাছে। শিউলির ভাই বোনের দিকে তাকিয়ে রনিকে দুই লাখ টাকা দেন। যদিও তার দাবি ছিল ৫ লাখ। শিউলি তাকে বলে, বাকি টাকা পরে দেবে। শিউলিকে তার বাবার বাসাতেই থাকতে হয় বিয়ের পর থেকে। ব্যবসার কথা বলে টালবাহানা করে রাতে বাসা থেকে বেরিয়ে যান রনি। এভাবেই কাটছিল শিউলির দিন। এক দিন সকালে শিউলির বাসায় এক মহিলা এসে হাজির। সঙ্গে দুটি বাচ্চা। ওই মহিলা তাকে জানান, তিনি রনির স্ত্রী। বাচ্চাগুলো রনির সন্তান। আকাশ থেকে পড়ে শিউলি। বলে কী? রনি তো অবিবাহিত ছিল। তাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে। তবে কেন উনি বলছেন, বাচ্চা রনির আর তিনি স্ত্রী। মহিলা রনির সঙ্গে বিয়ের কাগজ দেখান শিউলিকে। বুঝতে আর বাকি থাকে না, সে এক প্রতারককে বিয়ে করেছে। মহিলা যাওয়ার পর থেকে শিউলি রনির অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু রনি বাসায় ফেরে না। এক দিন দুই দিন করে চার দিন কাটে। রনির খবর নেই। শিউলি তার ভাইদের কাছে বিষয়টি জানায়। ভাইয়েরা খবর নিতে শুরু করল রনির। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, রনি আসলে একজন স্যানিটারি মিস্ত্রি। তিনি বিবাহিত এবং তার দুই সন্তান আছে। তার নাম রিপন মাতুব্বর নয়, আতিকুর রহমান। চট্টগ্রাম নগরের খুলশী এলাকায় নাছিরাবাদ মহিলা কলেজের পাশে অনিক ট্রেডিং করপোরেশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আছে। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রনি নগরের বিভিন্ন বাসাবাড়িতে স্যানিটারি পাইপ, কমোড, বেসিন সরবরাহ ও ফিটিংসের কাজ করান। শিউলি বিষয়গুলো জানতে পেরে বুঝে নেন, এভাবে না জেনেবুঝে বিয়ে করা তার ঠিক হয়নি। পরিবারের মতে সে রনিকে তালাক দেয়। কিন্তু রনি একজন প্রতারক। সে জানত কীভাবে শায়েস্তা করতে হবে শিউলিদের। শায়েস্তা করতে পারলে টাকা আত্মসাৎসহ ওদের কাছ থেকে রক্ষা পাবে। থানায় নিজেই গিয়ে হাজির হয়। ডাকাতি মামলা দায়ের করে শিউলির ভাইয়ের বিরুদ্ধে। পুলিশ গ্রেফতার করে শিউলির ভাইকে। জামিনে ছাড়া পান তিনি। হঠাৎ আবারও পুলিশ যায় শিউলিদের বাসায়। এবার অন্য জেলার একটি মামলার আসামি করা হয়েছে। এভাবে একের পর এক মামলা দিয়ে হয়রানি করতে থাকে শিউলির পরিবারকে। সব মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হলেও পেরিয়ে যায় দুই বছর।

দুই বছরে তছনছ হয়ে যায় গোটা পরিবার। একজনের একটা ভুলে গোটা পরিবার নিঃশেষ হয়ে যায়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর