রবিবার, ৫ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

অরক্ষিত রাজধানীর তিন ফ্লাইওভার

নিচের জায়গা দখল করে চলছে জমজমাট ব্যবসা, সকালে-রাতে চলে রিকশা

জয়শ্রী ভাদুড়ী

অরক্ষিত রাজধানীর তিন ফ্লাইওভার

রাজধানীর মালিবাগ-মৌচাক, কুড়িল ও মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের ফাঁকা জায়গা দখল করে ভাতের হোটেল, গাড়ির গ্যারেজ, কুঁড়েঘর তৈরি করে চলছে ভাড়া খাটানোর জমজমাট ব্যবসা। সিগন্যালের লাইট ও সড়কবাতি না জ্বলায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন মালিবাগ-মৌচাক ফ্লাইওভারের যাত্রীরা। তত্ত্বাবধানের টানাপড়েন ও কর্তৃপক্ষের অবহেলায় মাদকসেবী, ছিন্নমূল মানুষের আস্তানা আর ব্যবসা কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে এই তিন ফ্লাইওভারের নিচের খালি জায়গা। দেখার কেউ না থাকায় সকাল-রাতে কুড়িল ফ্লাইওভারে চলে করে রিকশা।

সরেজমিন মালিবাগ-মৌচাক ফ্লাইওভারের মালিবাগ অংশে গিয়ে দেখা যায় মালিবাগ ও মগবাজার মোড়ে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ টেম্পোস্ট্যান্ড। মালিবাগ রেলগেট ও রাজারবাগে সোহাগ ও গ্রিনলাইন কাউন্টার ঘিরে তৈরি হচ্ছে যানজট। এ ছাড়া মগবাজার রেলগেটে ফ্লাইওভারের নিচে জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে মোটসাইকেলের গ্যারেজ। মগবাজার হয়ে বাংলামোটর পর্যন্ত ফ্লাইওভারের নিচের অংশ গাড়ির শোরুমগুলোর দখলে রয়েছে। রাজারবাগ ও এস বি অফিসের সামনে ফ্লাইওভারের নিচের অংশে পুলিশের গাড়ি রাখার ফলে অস্থায়ী যানজটের সৃষ্টি হয় প্রায়ই। কাকরাইলে এস এ পরিবহনের কাউন্টার, কর্ণফুলী মার্কেটের সামনে ইউটার্ন ও শান্তিনগর বাজারের সামনে অবৈধ গাড়ি পার্কিংয়ের ফলে ফ্লাইওভার থেকে নেমে যানজটে পড়তে হয় নগরবাসীকে। সিএনজি ও পেট্রল পাম্পের কারণে মগবাজার, মালিবাগ ও রাজারবাগে যানজট লেগে থাকে সব সময়। এ ছাড়া মালিবাগের বেশকিছু জায়গায় বস্তিঘর তুলে ভাড়া খাটাচ্ছেন অনেকে। ফ্লাইওভারের ফাঁকা জায়গায় বসবাস করছেন ছিন্নমূল মানুষ। শুধু তাই নয়, ফ্লাইওভারের নিচের জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে ভাতের হোটেল, চায়ের দোকান, ফলের দোকান থেকে শুরু করে রকমারি ব্যবসা। নিয়মিত পরিষ্কার না করায় ময়লা জমে গেছে পানি নিষ্কাশনের নালাগুলোয়। এর ফলে পানি জমছে ফ্লাইওভারের ওপরের ও নিচের অংশে। ফলে উঠে গেছে রাস্তার পিচ। এই রুটের নিয়মিত যাত্রী শফিউর রহমান বলেন, ‘মাস দুয়েক হচ্ছে মালিবাগ-মৌচাক ফ্লাইওভারে সড়কবাতি জ্বলে না। রাতের বেলা হেডলাইট জ্বালিয়ে ঝুঁকিতে যাতায়াত করতে হয় আমাদের। জ্বলে না ট্রাফিক সিগন্যালের লাইটও।’

একই অবস্থা মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের অংশেরও। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে নিমতলী পর্যন্ত হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের বিভিন্ন অংশে দুই শতাধিক চা ও ফলের দোকান এবং ভাতের হোটেল গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া আছে মুরগির দোকান, মাছের আড়ত। বঙ্গবাজার, টিকাটুলীর রাজধানী সুপার মার্কেট ও সায়েদাবাদ এলাকায় ফ্লাইওভারের নিচে ছিন্নমূল মানুষের বাস। কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচের অংশ ব্যবহূত হয় রিকশার গ্যারেজ হিসেবে। ৩০০ ফুট অংশে ফ্লাইওভারের নিচের অংশ ব্যবহার হয় গাড়ি মেরামতের কাজে। ছিন্নমূল মানুষের বসবাসের অন্যতম আবাসস্থল হয়ে উঠেছে কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচের অংশ। জোয়ার সাহারা বাজার থেকে কুড়িল চৌরাস্তায় নেমে যাওয়া লুপের নিচে তৈরি করা হয়েছে ভাসমান টয়লেট। নাকে রুমাল চেপে যাতায়াত করতে হয় ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারকারীদের। এ ব্যাপারে নগরবিদ মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ফ্লাইওভার ভাঙছে আর আমাদের দেশে নিত্যনতুন ফ্লাইওভার তৈরি করা হচ্ছে। নির্মাণ করা হলেও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এগুলো গলার কাঁটায় পরিণত হচ্ছে। ফ্লাইওভারের নিচে ফাঁকা জায়গায় বাগান, বসার জায়গা থেকে শুরু করে ভিন্ন রকম পরিকল্পনা ছিল। অথচ কর্তৃপক্ষের অবহেলায় এগুলো গিলে খাচ্ছে দখলদাররা।’ একটি জাতীয় দৈনিকে ফ্লাইওভারের গুরুত্ব সম্পর্কিত এক গোলটেবিল বৈঠকে ফ্লাইওভারের নিচের জায়গা দখল প্রসঙ্গে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘ফ্লাইওভারের সুবিধা আমরা সবাই ভোগ করছি। কিন্তু এর নিচের জায়গা দখল করে নরক বানিয়ে ফেলা হয়েছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোকে এসব দখলদারকে ঠেকাতে উদ্যোগ নিতে হবে।’

সর্বশেষ খবর