মঙ্গলবার, ৭ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

সড়কে দুর্ভোগ অব্যাহত

সীমিতসংখ্যক গাড়ি চলাচল শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক

সড়কে দুর্ভোগ অব্যাহত

রাজধানীতে গতকালও ছিল পরিবহন সংকট। গন্তব্যে পৌঁছতে পিকআপ ভ্যানে উঠতেও প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে —বাংলাদেশ প্রতিদিন

অঘোষিত ধর্মঘটের পর গতকাল সকাল থেকে রাজধানীতে সীমিত আকারে বাস চলাচল শুরু করলেও সাধারণ মানুষের ভোগান্তি অব্যাহত রয়েছে। ছয় দিনের অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে নগরবাসীর মুক্তি মিললেও বাসের পরিমাণ কম থাকায় অফিস ও কর্মক্ষেত্রে যাতায়াতকারীদের দিনভর দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। সকালের দিকে নগরীর প্রতিটি বাস স্টপে শত শত মানুষকে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ট্রাফিক সপ্তাহের দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় মাত্র ৩০ শতাংশ বাস চলাচল করেছে। জানা গেছে, অনেক বাসের কাগজপত্র ঠিক না থাকায় মালিকরা রাস্তায় নামাতে সাহস পাচ্ছেন না। অন্যদিকে রবিবার রাত থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত টানা বৃষ্টি থাকায় রাজধানীর অনেক স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় অনেক বাস নামেনি। অন্য দিনের মতো সরকারি বিআরটিসির বাসগুলোও সড়কে যাত্রী পরিবহন করেছে। এদিকে রাজধানীর পাশাপাশি সকাল থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচলও শুরু হয়েছে।

রাস্তায় গণপরিবহন কম থাকায় অ্যাপসভিত্তিক যানবাহন, সিএনজি অটোরিকশা ও রিকশায় করে অফিসে যেতে হয়েছে অসংখ্য মানুষকে। বিভিন্ন রুটে সীমিতসংখ্যক বাস চলাচল করায় সেগুলোতে ছিল যাত্রীদের গাদাগাদি অবস্থা।  স্কুল শিক্ষার্থীরা রাস্তা থেকে সরে গেলেও রামপুরা, কুড়িল, শাহবাগসহ বিভিন্ন স্থানে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শিক্ষার্থীরা জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে স্বাভাবিক যান চলাচল ব্যাহত হয়। নগরীর কয়েকটি স্থানে পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষের কারণে বিকালের দিকে যানবাহন আরও কমে যায়। এদিকে বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন গাড়ির ফিটনেসের জন্য এক মাস সময় চেয়েছে। গতকাল গাবতলীর কার্যালয়ে এক বৈঠকে বসে বাস মালিকরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

ঢাকার বাস টার্মিনালগুলো থেকেও দূরপাল্লার বাস চলাচল শুরু হয়েছে। সকালে গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির মধ্যে কিছু দূরপাল্লার বাস টার্মিনাল ছেড়ে গেছে। গাবতলীর পর্বত সিনেমা হলের সামনে পুলিশের চেকপোস্টে তল্লাশি অব্যাহত আছে। ঢাকার দিকে যেসব বাস ঢুকছে, সেগুলোর কাগজপত্র, চালকের লাইসেন্স পুলিশ তল্লাশি করছে। গাবতলীতে হানিফ পরিবহনের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন জানান, সকাল সাড়ে ৬টা থেকে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বাসগুলো গাবতলী  থেকে ছাড়তে শুরু করেছে। দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য পরিবহনের বাসগুলো বেশির ভাগই তাদের নিজ জেলাতে রয়েছে। সেগুলো দুপুর থেকে ঢাকার দিকে রওনা হবে।

চট্টগ্রামে বাস চলাচল শুরু : নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম জানান, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে গতকাল সকাল থেকেই নগর ও জেলার গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, সকাল থেকেই নগরের বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, চকবাজার, ২ নম্বর গেট, কালুরঘাট, আন্দরকিল্লা, নিউমার্কেট, কাজির দেউড়ি,  অক্সিজেন মোড়, শাহ আমানত সেতুসহ বিভিন্ন এলাকায় গণপরিবহন চলাচল করছে। বিভিন্ন কাউন্টার থেকে দূরপাল্লার বাস ছেড়েছে।

রাজশাহীতে বাস চলাচল শুরু : নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী জানান, টানা দুর্ভোগের পর সকাল ৬টা থেকে রাজশাহীতে বাস চলাচল শুরু হয়েছে। রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মনজুর হোসেন পিটার জানান, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মধ্যে উচ্ছৃঙ্খল একটি গোষ্ঠী ঢুকে পড়ে তারা বাসে ভাঙচুর চালাচ্ছে। বাস ও শ্রমিকদের নিরাপত্তাহীনতার কারণে তারা দিনে বাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ঈদের আগে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় রাজশাহীর সঙ্গে সড়কপথে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এতে অচলাবস্থা দেখা দেয়। গতকাল সকাল থেকে বাস চলাচল শুরু হওয়ায় আবারও স্বস্তি ফিরে আসে।

সিলেটে যান চলাচল স্বাভাবিক : নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট জানান, তিন দিন অঘোষিত ধর্মঘটের পর গতকাল সকাল থেকে সিলেটে সব ধরনের পরিবহন চলাচল শুরু হয়েছে। সকাল থেকে সিলেটের কদমতলী ও কুমারগাঁও টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়। এ ছাড়া বিভাগ ও জেলার সবকটি আঞ্চলিক সড়কেও যান চলাচল শুরু হয়েছে। সিলেট জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ সামসুুদ্দিন মানিক জানান, নিরাপত্তার কথা ভেবে পরিবহন শ্রমিকরা যান চলাচল বন্ধ রেখেছিলেন। মালিক শ্রমিকদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ (গতকাল) সোমবার থেকে সবগুলো সড়কে যান চলাচল শুরু হয়েছে।

দিনাজপুরে বাস চলেনি : দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে নিরাপত্তার অজুহাতে টানা তিন দিন বন্ধ থাকার পর হিলি স্থলবন্দর থেকে বাস চলাচল শুরু করলেও দিনাজপুর শহর থেকে যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ ছিল। তবে দিনাজপুর শহর থেকে যাত্রীবাহী বাস গতকাল সকালে চলাচল শুরু হলেও এর কিছুক্ষণ পর অভ্যন্তরীণ রুটে আবার বন্ধ হয়ে যায়। নিমনগর বাসস্ট্যান্ডে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সন্ধ্যা থেকে বাস ছাড়া বিভিন্ন যান চলাচল শুরু হয়েছে। সড়ক পরিবহন আইনে শাস্তির বিধান বাড়ার কারণে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায় বলে দিনাজপুর শ্রমিক ইউনিয়নের এক নেতা জানান।

অন্যদিকে গতকাল সকালে হিলি থেকে ঢাকাগামী হানিফ, শ্যামলী, এসআর, এসআই, আসাদ পরিবহনসহ সব যাত্রীবাহী বাস চলাচল শুরু করেছে।  উল্লেখ্য, গত ২৯ জুলাই ঢাকার রাস্তায় বাসের চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর রাজধানীসহ সারা দেশে নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসে শিক্ষার্থীরা। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিভিন্ন যানবাহনের লাইসেন্স পরীক্ষা করতে শুরু করে তারা। তাদের এই আন্দোলন অভাবনীয় সাড়া জাগায়। কিছু জায়গায় গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটলে রাজধানীসহ দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর