মঙ্গলবার, ৭ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিআরটিএতে উপচে পড়া ভিড় সার্ভার ডাউন হয়ে ভোগান্তি

জুলকার নাইন

বিআরটিএতে উপচে পড়া ভিড় সার্ভার ডাউন হয়ে ভোগান্তি

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের যানবাহন ও চালকের লাইসেন্স পরীক্ষার পর গত দুই দিন ধরে ঢাকার বিআরটিএ অফিসগুলোতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। গতকাল ঢাকার মিরপুরের বিআরটিএ অফিসে ছিল না তিল ধারণের স্থান। সকাল থেকে দীর্ঘ লাইন ছিল ড্রাইভিং লাইসেন্স, ফিটনেস ও রেজিস্ট্রেশন আপডেট প্রত্যাশীদের। এর মধ্যে বিআরটিএর সার্ভার ডাউন হয়ে গেলে সেবাপ্রত্যাশীরা পড়েন ভোগান্তিতে। সরেজমিন মিরপুরে বিআরটিএ সার্কেল-১ কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় উপচে পড়া ভিড়। প্রাইভেট কারের লাইনের সারি কার্যালয় পেরিয়ে পৌঁছে গেছে ভাসানটেক পর্যন্ত। গাড়ি আর লোকজনের সমাগমে স্বস্তিতে দাঁড়ানোর মতো জায়গা নেই। মোটরসাইকেল আর মানুষ গিজগিজ করছে বিআরটিএর ভিতরে। কাউন্টারে ভিড় আগতদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রাইভেট কারের  বেশির ভাগই এসেছে ফিটনেস সার্টিফিকেট আর মালিকানা পরিবর্তনের জন্য। অনেকেই এসেছেন ড্রাইভিং লাইসেন্স,  কেউবা ডিজিটাল নম্বরপ্লেট, ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন কার্ড করতে। অনেকেই এসেছেন লার্নার কার্ডের জন্য। প্রতিটি বুথেই ভিড় লক্ষণীয়। সকাল থেকেই লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে কাজ সারছেন আগতরা। হঠাৎ বাড়তি লোকের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে বিআরটিএ। এর মধ্যেই দুপুরের আগে আগে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় বিআরটিএ কার্যালয়ে থাকা একমাত্র ব্র্যাক ব্যাংকের বুথে টাকা জমা বন্ধ হয়ে যায়। সার্ভার ডাউন হয়ে গেলে দীর্ঘ সময় ভোগান্তিতে পড়তে হয় অনেককে।

পুলিশ ম্যানেজমেন্টের সামনে অপেক্ষমাণ প্রাইভেট কারের চালক মীর নাজিম জানান, আগামী বুধবার ফিটনেসের মেয়াদ শেষ হবে। কিন্তু রাস্তাঘাটের পরিস্থিতি বিবেচনায় আগেই চলে এসেছেন ফিটনেস পরীক্ষার মাধ্যমে মেয়াদ বাড়ানোর জন্য। মোটরবাইকের ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আসা সাজ্জাদ হোসেন নিজেই একজন পুলিশ সদস্য। তিনি বলেন, দুই দফায় শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নাজেহাল করেছে। তাই লাইসেন্স ছাড়া আর মোটরবাইক চালাব না বলে নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিআরটিএ কর্মকর্তারা জানান, আগে প্রতিদিন ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য গড়ে ১১০টির মতো আবেদন পড়ত। রবিবার আর সোমবার পাঁচ শতাধিক আবেদন পড়ে। নবায়নের জন্য আগে ৫০টি আবেদন পড়ত, এখন পড়ছে ১৫০টির বেশি। ফিটনেস সনদ নিতে আগে প্রতিদিন আবেদন পড়ত ৯০০। এখন পড়ছে প্রায় দুই হাজার। এ ছাড়া মালিকানা পরিবর্তন, ডিজিটাল নম্বরপ্লেট, ডিজিটাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদি কাজেও আবেদন বেড়েছে। বিআরটিএর সহকারী পরিচালক (লাইসেন্স) আলী আহসান মিলন বলেন, ‘বিআরটিএর তিনটি অফিসেই গ্রাহকদের ভিড় বাড়ছে। সেবা নিতে আসা গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে তবে এই  সেবা দিতে অতিরিক্ত জনবল সংযুক্ত করা হয়নি। প্রতিদিন যারা আসবেন তাদের এই সেবা দেওয়া হবে। কাউকে ফেরত দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে অফিস টাইমের পরও কর্মকর্তারা কাজ করবেন। তিনি জানান, আমাদের ১০ জন পরিদর্শক গাড়ির ফিটনেস চেক করছেন। আমাদের নির্ধারিত জনবল দিয়েই এই ভিড় সামলানো হচ্ছে। গত ২৯ জুলাই দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের অদূরে বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। পরে জানা যায় চাপা দেওয়া জাবালে নূর পরিবহনের চালকের ছিল না কোনো লাইসেন্স। সেই থেকে রাস্তায় যানবাহনের ফিটনেস, রেজিস্ট্রেশন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখতে নেমে যায় শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে পুলিশ, বিচারপতি, মন্ত্রী, সচিবসহ বিভিন্ন সরকারি পরিবহনের লাইসেন্সবিহীন গাড়ি পাওয়া যায় রাস্তায়। এক পর্যায়ে এসব পরিবহনের চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।

 

সর্বশেষ খবর