বুধবার, ৮ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

সব ষড়যন্ত্রকারীকে বের করতে গবেষণা প্রয়োজন

জয়শ্রী ভাদুড়ী

সব ষড়যন্ত্রকারীকে বের করতে গবেষণা প্রয়োজন

সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর খুনের পেছনে কারা ছিল তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে গবেষণা হওয়া উচিত। কিছু বিপথগামী সেনা কর্মকর্তাই তখন এই ঘৃণ্য ঘটনা ঘটিয়েছে নাকি তার পেছনে অন্য আরও কেউ ছিল তা গবেষণায় বেরিয়ে আসবে। বঙ্গবন্ধুর খুনিকে আশ্রয় দেওয়া নিয়ে কানাডার ভূমিকা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বঙ্গবন্ধু হত্যা ও পরবর্তী ঘটনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে এসব মন্তব্য করেন তিনি। বঙ্গবন্ধু হত্যা সম্পর্কিত গবেষণা বিষয়ে তিনি বলেন, যত দিন যাবে আমরা আরও উপলব্ধি করব বঙ্গবন্ধু শুধু স্বাধীনতাই এনে দেননি, উপহার দিয়েছিলেন সংবিধান। তিনি স্বাধীন দেশের মূর্তপ্রতীক ছিলেন। আজকের বিশ্ব আর সেদিনের বিশ্বের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। তখন দৃশ্যপট দুই বিরাট শক্তির ভিতরে বিভাজিত ছিল। বঙ্গবন্ধু একটি স্বাধীন সচেতন নীতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই সব শক্তি তার এই নীতি সমর্থন করেছে তা বলা যাবে না। সে কারণে এ ব্যাপারে আরও গবেষণা হওয়া উচিত। আগে যেসব গবেষণা হয়েছিল তা নানাভাবে প্রভাবিত হয়েছে। তাই আশা করছি, সরকার অত্যন্ত সঠিকভাবে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রেক্ষাপট তুলে ধরবে। আমার মনে হয়, আরও যদি কেউ সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকে তাহলে আরও অনুসন্ধান প্রয়োজন।

ওই সময়ে গণমাধ্যমের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, দেশ-বিদেশের স্বাধীন গণমাধ্যমগুলো এই হত্যার প্রতিবাদ করেছে। এটা বিশ্বের নৃশংস মানবতাবিরোধী অপরাধের মধ্যে অন্যতম। বিশ্বের বিরাট একটি অংশ বঙ্গবন্ধু হত্যার ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল। পাকিস্তানের মদদ পাওয়া এবং তদানীন্তন খুনি সরকারের প্রেসনোট যারা ছেপেছে এ রকম কিছু গণমাধ্যম বিষয়টিকে অন্যভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এখনকার মতো যদি যোগাযোগব্যবস্থা থাকত তাহলে এই কাজের দুঃসাহস তাদের হতো না। তবে যতই দিন যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর অবদান উপলব্ধ হচ্ছে। তিনি শুধু একটি দেশের নন বিশ্বনেতাদের মধ্যে অন্যতম।

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে সাবেক এই পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফিরিয়ে আনতে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করা উচিত। আমি যখন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলাম তখন ওভাল অফিসে মিটিংয়ে ছিলাম। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তখনকার পররাষ্ট্র সচিব শফি সামি উপস্থিত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু খুনিদের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন বলেছিলেন, আই ডোন্ট ওয়ান্ট দিস পিপুল টু হেয়ার। তিনি বলেছিলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আমি না থাকতে পারি কিন্তু এই অফিস তো আছেই। তাই বুঝতে পারছি না এখনো এত দেরি কেন হচ্ছে।

থাইল্যান্ড সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমার একটু তৃপ্তিবোধ আছে। এর জন্য রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের ও সোহরাব হোসেনকে অশেষ ধন্যবাদ জানাতে হয়। আমরা বজলুল হুদাকে থাইল্যান্ড থেকে আনতে পেরেছিলাম। তার ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে। তদানীন্তন থাইল্যান্ড সরকার ও ডেপুটি ফরেন মিনিস্টার সুকুম্মাম পরিপাত এবং তার আগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইন্তরাবিত তাই আনন্দ বিরাট ভূমিকা রেখেছিলেন। এই একটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সব সময়ই ভালো। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে আনতে একটা সেল গঠন করা হয়েছিল। এর দায়িত্বে ছিলেন তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এবং আমিও সেই সেলের সদস্য ছিলাম। এই ফিরিয়ে আনা খুনিদের বিচার চলমান আইনে হয়েছে। কোনো স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে তা হয়নি। কানাডায় বঙ্গবন্ধুর খুনিকে আশ্রয় দেওয়া ও ফিরিয়ে না দেওয়া— তাদের এই কর্মকাণ্ড আমার কাছে একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা আইএসের বিরোধিতা করেন, জাতিসংঘে শান্তির কথা বলেন অথচ তাদের দেশে একজন খুনিকে আশ্রয় দিয়েছেন। আমাদের দেশের আদালত যাকে অপরাধী খুনি চিহ্নিত করে রায় দিয়েছে তাকে তারা আশ্রয় দিয়েছেন। এটা কি তাদের আইনের শাসন?

সর্বশেষ খবর