শুক্রবার, ১০ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

টিকিটের জন্য রাতভর অপেক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক

টিকিটের জন্য রাতভর অপেক্ষা

প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে রীতিমতো ট্রেনের জন্য টিকিটযুদ্ধে নেমেছেন রাজধানীবাসী। কাঙ্ক্ষিত টিকিট হাতে পেতে ঘরমুখো মানুষের লম্বা সারিতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে দীর্ঘ সময়। তবুও মিলছে না টিকিট। এ যেন সোনার হরিণ।

প্রতিবারের মতো এবারও ১০ দিন আগে থেকে শুরু হয়েছে ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি। এ বিক্রির দ্বিতীয় দিন গতকাল রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে দেওয়া হয় ১৮ আগস্টের টিকিট। আজ শুক্রবার বিক্রি হবে ১৯ আগস্টের টিকিট। এভাবে ১১ ও ১২ আগস্ট যথাক্রমে ২০ ও ২১ আগস্টের টিকিট পাওয়া যাবে। ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় টিকিট বিক্রি হচ্ছে। গতকাল সকাল ৮টা থেকে কমলাপুরের ২৬টি কাউন্টার থেকে একযোগে টিকিট বিক্রি শুরু হয়। কাউন্টারের সামনে অপেক্ষমাণ বেশিরভাগ যাত্রী আগের দিনের রাত থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন প্রত্যাশিত টিকিটের জন্য। প্রতিটি সারি কাউন্টার থেকে শুরু হয়ে প্লাটফর্ম ছাড়িয়ে সড়কে গিয়ে ঠেকে। কোথাও তিল পরিমাণ জায়গা ফাঁকা ছিল না দাঁড়ানোর মতো। কমলাপুর রেলস্টেশনের এমন চিত্র বিরাজ করে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত। কেউ কেউ জানান, বুধবার মধ্যরাত থেকে শুরু হয় এ পরিস্থিতির। দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে থেকেও টিকিট না পাওয়ার বেদনায় ফিরে গেছেন বেশিরভাগ যাত্রী। তবে বিক্রি শুরুর প্রায় ১৮ ঘণ্টা আগে কাউন্টারের সামনে অপেক্ষা করার পর টিকিট পাওয়া যাত্রীদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা গেছে। তাদের রাত জাগা ক্লান্তি নিমিষেই মুছে গেছে। রাজু নামে একজন বলেন, আগাম বিক্রির প্রথমদিন বুধবার দুপুরে এসে আমরা স্টেশনে অবস্থান নেই। কয়েকবন্ধু মিলে পালাক্রমে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকি। দীর্ঘ সময় ক্লান্তি নিয়ে টিকিট হাতে পাওয়ার পরই অনেক খুশি লাগছে। যা বোঝানো যাবে না। নীলফামারীর নীলসাগর এক্সপ্রেসের টিকিট কাটতে বুধবার দিনগত রাত দেড়টায় কমলাপুর স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের কর্মকর্তা রেজওয়ানুল হক। এরপর রাতে বাকিটা সময় তিনি নির্ঘুম অবস্থায় কাউন্টারের সামনে বসে কাটান। লাইনে দাঁড়ানোর আগে তার সামনে অন্তত ৫০ জন ছিলেন। শুধু রেজওয়ানই নয়, তার মতো এমন শত শত টিকিট প্রত্যাশী রাত জেগে অপেক্ষা করেন কমলাপুরে। সন্ধ্যার পর থেকে রাত যত বাড়ে স্টেশনের কাউন্টারগুলোর সামনে মানুষের সারিও তত দীর্ঘ হতে থাকে। রেজওয়ানের অভিযোগ, কাউন্টারের কাছে পৌঁছে জানতে পারেন এসির কোনো টিকিট নেই। পরে টিকিট না কেটেই কাউন্টার ত্যাগ করেন। সারারাতের কষ্ট মুহূর্তেই মূল্যহীন হয়ে পড়ে। পরে আরও অনেকেই তার মতো ফিরে গেছেন প্রত্যাশিত টিকিট না থাকার কথা শুনে। ২৬টি কাউন্টারের মধ্যে দুটি কাউন্টার নারীদের জন্য সংরক্ষিত। সেসব কাউন্টারের সারিও ছিল অনেক লম্বা। এদের কেউ কেউ বাসা থেকে খাবার ও বসার জন্য প্লাস্টিকের মোড়া নিয়ে আসেন। আবার কেউ পেপার বিছিয়ে প্লাটফর্মেই বসে সময় কাটান। তবে কাউন্টারের সামনে অপেক্ষা করা নারীদের বেশিরভাগই সময় পার করেছেন পাশের জনের সঙ্গে গল্প করে। রংপুর এক্সপ্রেসের টিকিটের জন্য লাইনে অপেক্ষা করেন সাবিহা আক্তার। তিনি বলেন, ‘যদি এসি টিকিট পাই তবে কাটব। না পেলে ফিরে যাব। গতবার চেয়ারকোচের টিকিট কাটার পরও ট্রেনে উঠতে পারিনি। সব বগি ঠাসা ছিল বিনা টিকিটের যাত্রী দিয়ে।’ চট্টগ্রামের প্রভাতি এক্সপ্রেসের টিকিট প্রত্যাশী কুলসুম বলেন, সকালে এসে দাঁড়িয়েছি। জানি না কখন টিকিট পাব। যখন দাঁড়াই তখন থেকেই দেখছি সামনে অনেক মানুষ। কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, সবাই সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করছেন। তবে অনেক মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এরপরও আমরা চেষ্টা করছি টিকিট দিতে। ঢাকা রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসিন ফারুক মজুমদার জানান, ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রিতে যেন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে— সে লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ রেলওয়ের নিজস্ব বাহিনী তৎপর রয়েছে।

সর্বশেষ খবর