এক সময় দেশে ফার্নিচার বানানোর জন্য যে রাবার কাঠ বিদেশ থেকে আমদানি করা হতো, সেই রাবার কাঠ এখন বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পথ সৃষ্টি হয়েছে। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে স্থাপিত রাবার ট্রিটম্যান্ট প্লান্টই সেই স্বপ্ন দেখাচ্ছে। বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, এত দিন শুধু রাবার গাছের কষ মূল্যবান ছিল। আর ৩০-৪০ বছরের জীবনচক্রে হারিয়ে যাওয়া রাবার গাছ জ্বালানি হিসেবে ২৫-৩০ টাকা সিএফটি দরে বিক্রি করা হতো। কিন্তু গত বছরের ডিসেম্বরে মৌলভীবাজারের একটি রাবার ট্রিটম্যান্ট প্লান্ট স্থাপন করা হয়। এখন এই ট্রিটম্যান্ট প্লান্টে প্রসেসিং করে রাবার গাছ ফার্নিচার কাঠে রূপান্তর করা হচ্ছে। আর এটাই দেশের প্রথম রাবার কাঠ ট্রিটম্যান্ট প্লান্ট বলে
জানা যায়। আয়ুষ্কাল ফুরিয়ে যাওয়া রাবার গাছ এই প্লান্টে এনে প্রসেসিং করে এক হাজার তিনশ টাকা সিএফটি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। জানা যায়, আশির দশকে দেশে রাবার শিল্প গড়ে ওঠে। সরকারিভাবে মোট ১৮টি রাবার বাগান রয়েছে। এর মধ্যে সিলেটে রয়েছে ৪টি। বেসরকারি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন রাবার বাগান রয়েছে অসংখ্য। বর্তমানে সিলেটের ৪টি সরকারি রাবার বাগানের সাত লাখ গাছের জীবনচক্র হারিয়ে গেছে। এই সাত লাখ গাছে রয়েছে ৭০ লাখ সিএফটি কাঠ। যেগুলো জ্বালানি হিসেবে বিক্রি করলে পওয়া যেত ১৯ কোটি টাকা। আর এখন এই প্লান্টের মাধ্যমে প্রসেসিং করে এই কাঠ বিক্রি করে পাওয়া যাবে ৩৮৪ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এতে শুধু সরকারের রাজস্বই বৃদ্ধি হবে না, দেশে কাঠ আমদানির পরিমাণ কমে আসবে। আর এক সময় দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে রাবার কাঠ। রাবার কাঠ ট্রিটম্যান্ট প্লান্টের প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, এ প্লান্টটি স্থাপনে ব্যয় হয়েছে ৩৩ কোটি চল্লিশ লাখ টাকা। এই প্লান্টটি নির্মাণ করেন ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেনএয়ার টেকনোলজি। এখানে মোট ১৫ দিন সময়ের মধ্যেই পুরো কাজ শেষ করে কাঠ বিক্রি উপযোগী হয়ে যাবে। দেশীয় বাজারে এই কাঠের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ ছাড়া এই কাঠের সবচেয়ে বড় গুণ হলো ঘুণে ধরবে না। এগুলো সেগুন কাঠের কাছাকাছি। সব ধরনের আসবাবপত্র বানানো যাবে এবং আয়ুষ্কালও অনেক বেশি হবে। সদ্য অবসরে যাওয়া বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফআইডিসি) সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই রাবার গাছ প্রসেসিং করে আসবাবপত্রসহ সব ধরনের কাঠ শিল্পে ব্যবহার করা হয়। এ বিষয়টি মাথায় নিয়েই রাবার কাঠকে মূল্যবান ফার্নিচার কাঠে পরিণত করার জন্য বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফআইডিসি) “স্টাবলিশমেন্ট অব প্রেসার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট টু এসেস রাবার উড” নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
এ প্রকল্পের মূল লক্ষ্যই ছিল প্রতি মাসে ২০ হাজার সিএফটি ট্রিটমেন্ট কাঠ উৎপাদন করা। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফআইডিসি) নিজস্ব অর্থায়নে এই প্লান্ট স্থাপন করা হয়। বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফআইডিসি) সিলেট জোনের জিএম শাকিল আহম্মেদ বলেন, বর্তমানে প্লান্টটি এক শিফটে চালানো হচ্ছে। প্রতি মাসে এই প্লান্ট থেকে সাড়ে তিন হাজার ঘনফুট কাঠ উৎপন্ন করা হচ্ছে।