শনিবার, ১১ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

মানুষকে কথা বলতে দিন, গুজব ছড়াবে না

—মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, মানুষকে কথা বলতে দিন, তাহলে গুজব ছড়াবে না। তিনি বলেন, সত্যকে প্রকাশ হতে দিতে হবে। সত্য প্রকাশ হতে না দিলে গুজব ছড়াবে। কারণ গুজব তখনই ছড়ায়, যখন আপনি সত্য প্রকাশে বাধা দেবেন। কথা বলতে দেবেন না। যারা সত্য প্রকাশ করবে, সত্য বলবে তাদের গ্রেফতার নির্যাতন করবেন, তখনই গুজব ছড়াবে। তাই এসব বন্ধ করতে হলে সত্য প্রকাশ করতে দিতে হবে, মানুষকে কথা বলতে দিতে হবে।

গতকাল সকাল সোয়া ১০টার দিকে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এ মন্তব্য করেন। এ সময় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সহিংসতার ঘটনায় আওয়ামী লীগ জড়িত। সরকারি দলের সিদ্ধান্তেই ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মীরা পুলিশের ছত্রচ্ছায়ায় হেলমেট ও মুখোশ পরে ছাত্রছাত্রীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভিতরে ঢুকে ছাত্রছাত্রীদের মারপিট করেছে। এসব কিছুই ঘটেছে পুলিশের চোখের সামনে এবং তাদের সহযোগিতায়। অথচ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দাবি করেছেন, এসব আক্রমণ নাকি বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা করেছেন। এ দেশের এমন কোনো পাগলও নেই তারা বিশ্বাস করবে যে, পুলিশের সহায়তায় এবং তাদের সামনে বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা আগ্নেয়াস্ত্র, লাঠিসোঁটা নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মারপিট করবে, সাংবাদিকদের কোপাবে, ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ অফিস আক্রমণ করবে আর তাদের গ্রেফতার করা হবে না।

মির্জা আলমগীর বলেন, চিত্রশিল্পী শহিদুল আলমকে গ্রেফতার করা হয়েছে কেন? যখন তিনি ‘এ দেশে বাকস্বাধীনতা, কথা বলার অধিকার নেই’ বলে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন এবং বলেছেন- সরকার গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করছে, বাকস্বাধীনতা রুদ্ধ করছে, এ সরকার একটি অনির্বাচিত সরকার, তখনই তাকে গ্রেফতার করে নির্যাতন করা হচ্ছে। বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দাবি করেছেন- তাদের দলীয় কার্যালয়ে আক্রমণ নাকি বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা করেছেন। হেলমেট পরা ও মুখোশধারী আক্রমণকারীরা ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মী ছিল, এটি আহত সব সাংবাদিক এবং ছাত্রছাত্রীরা বলার পরও তিনি (ওবায়দুল কাদের) তাদের বিচার করার জন্য দোষী ব্যক্তিদের নাম চান। এমন রসিকতায় ওবায়দুল কাদের আনন্দ পেতে পারেন, কিন্তু দেশবাসী লজ্জিত হয়। মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগই পুলিশ নিয়ন্ত্রণ করে। এজন্য পুলিশ আওয়ামী লীগের নির্দেশে হেলমেট ও মুখোশধারীদের নির্বিঘ্নে সরে যেতে দিয়েছে। এই সত্যগুলো টিভি ক্যামেরার চোখ এড়িয়ে যায়নি এবং তা জনসম্মুখে প্রকাশ পেয়েছে। পত্রিকায় আক্রমণকারীদের নাম ঠিকানাসহ অনেকেরই ছবি ছাপা হয়েছে। এরপরও অপরাধীদের গ্রেফতারের জন্য ওবায়দুল কাদের সাহেব কেন ছবি ও নাম চান? কী বিচিত্র এই দেশ। আর বিচিত্র বলেই তারা অপরাধ করে তার দায় চাপানোর চেষ্টা করছে বিএনপির ওপর। আসলে আওয়ামী লীগের মধ্যে বিএনপি ভীতি আছে। বিএনপির নাম শুনলে আওয়ামী লীগ জলাতঙ্ক রোগীর মতো ভয় পায়। এ কারণে যা কিছু হয়, সেখানে আওয়ামী লীগ শুধু বিএনপিকে দেখতে পায়। তিনি বলেন, আমরা ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের প্রতি প্রকাশ্যেই সমর্থন জানিয়েছি। এটা অপরাধ হলে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে পুলিশ কর্মকর্তারা পর্যন্ত একই অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ার কথা। সংশোধিত সড়ক আইনে ছাত্রছাত্রীদের দাবিকৃত নিরাপদ সড়ক অর্জিত হবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই আইনে সড়ক পরিবহন খাতে মানুষ হত্যা ও অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়ানোর স্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই, কিংবা কঠোর শাস্তির কোনো বিধান নেই। এ ছাড়া সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের বাড়ির সামনে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ওপর হামলা এবং বদিউল আলম মজুমদারের বাড়ি আক্রমণ ও ভাঙচুরের জন্য দায়ীদের গ্রেফতার না করায় তীব্র নিন্দা জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর