রবিবার, ১২ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

টিকিট যেন সোনার হরিণ

কমলাপুরে সার্ভার বন্ধ, চরম দুর্ভোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

টিকিট যেন সোনার হরিণ

কমলাপুরের রেলস্টেশনে গতকাল উপচে পড়া ভিড় —বাংলাদেশ প্রতিদিন

বিগত তিন দিনের চেয়ে গতকাল ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে টিকিটপ্রত্যাশী মানুষের উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি। বিক্রি শুরুর প্রায় আধঘণ্টা পরই হঠাৎ সার্ভারে ত্রুটি দেখা দেয়। এতে টিকিট বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে টিকিটপ্রত্যাশীরা শিকার হন চরম দুর্ভোগের। একপর্যায়ে পুরো স্টেশন চত্বরে হট্টগোল শুরু হয়। প্রায় এক ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর স্বাভাবিক হয় পরিস্থিতি। ফের শুরু হয় টিকিট বিক্রি। এ সমস্যা শুধু ঢাকায়ই নয়, চট্টগ্রামেও দেখা দেয়। ঈদযাত্রায় আগাম টিকিট বিক্রির চতুর্থ দিন কমলাপুর রেলস্টেশন ছিল লোকে লোকারণ্য। বিক্রি শুরুর ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই কয়েকটি কাউন্টারের সব টিকিট শেষ হয়ে যায় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। দেশের বিভিন্ন রুটের সাড়ে ২৩ হাজারের বেশি টিকিট বিক্রির জন্য ছাড়া হয় কমলাপুরের ২৬টি কাউন্টারে। গতকাল সকাল ৮টা থেকে কাউন্টার থেকে আগামী ২০ আগস্টের টিকিট দেওয়া হয়। এদিনের টিকিটপ্রত্যাশীরা আগের দিন সন্ধ্যা থেকে পুরো স্টেশন এলাকা সরগরম করে রাখেন। এ সময় তারা নিজেরা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে অন্যদেরও লাইনে দাঁড়ানোর ব্যাপারে তদারক করতে থাকেন। রাতে সময় যত গড়াতে থাকে পুরো স্টেশন এলাকা কানায় কানায় পূর্ণ হতে থাকে। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে দেখা যায়, প্লাটফর্ম ছেড়ে বাইরে গাড়ি পার্কিংয়ের স্থানে চলে যায় টিকিটের জন্য দাঁড়ানো মানুষের সারি। কাউন্টারের সামনে থেকে শুরু হওয়া সারিতে কখনো কখনো তা নিয়ম ভঙ্গের ঘটনায় একযোগে চিৎকার-চেঁচামেচি উঠতে থাকে। যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে র‌্যাব, পুলিশ, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ছাড়াও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদেরও দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। আজ আগাম বিক্রির শেষ দিন দেওয়া হবে ২১ আগস্টের টিকিট।

বিক্রি শুরুর পর থেকে টিকিট কাউন্টারগুলোর মধ্যে অযাচিত বিলম্ব কিংবা অন্য কোনো অসংগতি চোখে পড়লেই একযোগে আওয়াজ তুলতে থাকেন টিকিট নিতে আসা মানুষগুলো। সব মিলিয়ে স্টেশন এলাকাটি দিনভর ছিল কোলাহলপূর্ণ। অন্যান্যবারের মতো এবারও মোট টিকিটের ২৫ ভাগ ছাড়া হয় অনলাইনে। অনেকে আগেভাগে অনলাইনে টিকিট কেটেও দিন-তারিখের সঙ্গে ছুটি মেলাতে না পেরে ফেরত দিতে আসেন কমলাপুরে। রিফান্ড টিকিটের ৬ নম্বর কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, একটি বড় অংশই বিভিন্ন দিনের টিকিট ফেরত দিতে লম্বা সারিতে দাঁড়িয়েছেন। স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী জানান, অনেক ক্ষেত্রে এটি সমস্যার সৃষ্টি করছে। অনলাইনে টিকিট কিনে আবার ফেরত দেওয়াটা যাত্রী ও কাউন্টারম্যানদের জন্য বিড়ম্বনার। স্টেশনে আসা একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগাম বিক্রির গত কয়েক দিনে নরমাল টিকিট থাকলেও এসির টিকিট নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগ বেশ জোরালো ছিল। কিন্তু ২০ আগস্টে এসি দূরের কথা, শোভন চেয়ারের টিকিট মিলছিল না। টিকিট বিক্রি শুরু হলে তিনজন কাটার পরই ১৪, ১৫ ও ১৬ নম্বর কাউন্টার থেকে জানানো হয়, এসি বগির কোনো সিট নেই। ঘণ্টা তিনেক যাওয়ার পরই সাধারণ বগির সিটেরও জন্য টিকিটের হাহাকার শুরু হয়। চট্টগ্রাম কিংবা সিলেটের চেয়ে উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনগুলোর টিকিট নিতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন যাত্রীরা। টিকিটপ্রত্যাশীরা বলছেন, উত্তরবঙ্গের সড়ক যোগাযোগ দীর্ঘ সময়ের এবং সড়কের অবস্থা খারাপ। তাই যে কোনো দুর্ঘটনা কিংবা ভোগান্তি এড়াতে তাদের ট্রেনের প্রতি ঝোঁক বেড়েছে। টিকিট না পাওয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, তাপমাত্রা বেশি থাকায় এসি টিকিটের চাহিদা অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি। বিশেষ করে বিক্রি শুরুর পরপরই শেষ হয়ে যাচ্ছে কেবিনগুলোর টিকিট। জানা যায়, বরাবরের মতো এবারও মোট টিকিটের ৫ শতাংশ ভিআইপি এবং ৫ শতাংশ রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। ১৫ আগস্ট থেকে শুরু হবে ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের ফিরতি টিকিটের আগাম বিক্রি। রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, দিনাজপুর ও লালমনিরহাট স্টেশন থেকে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় বিক্রি শুরু হবে এসব টিকিট। ১৫, ১৬, ১৭, ১৮ ও ১৯ আগস্টে যথাক্রমে পাওয়া যাবে ২৪, ২৫, ২৬, ২৭ ও ২৮ আগস্টের ফিরতি টিকিট।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর