রবিবার, ১২ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

মহাকাশ বাহিনী গড়ছে যুক্তরাষ্ট্র

শরীফ খান

মহাকাশ বাহিনী গড়ছে যুক্তরাষ্ট্র

সামরিক ও অর্থনৈতিক উভয় দিক দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্র ‘দ্য স্পেস ফোর্স’ (মহাকাশ বাহিনী) নামে নতুন একটি সামরিক বাহিনী গড়ার ঘোষণা দিয়েছে। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ৯ আগস্ট প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগনের উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে এ পরিকল্পনার কথা জানান। ২০২০ সাল নাগাদ এ বাহিনী গড়া হবে। যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম সামরিক প্রতিদ্বন্দ্বী চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে পাল্লা দিতেই নতুন এ বাহিনী গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর বর্তমানে পাঁচটি উইং বা শাখা রয়েছে। এগুলো হলো আর্মি, এয়ার ফোর্স, নেভি, কোস্টগার্ড ও মেরিন কর্পস। আর ‘দ্য স্পেস ফোর্স’ হবে সামরিক বাহিনীর ষষ্ঠ উইং। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট তার বক্তৃতায় বলেছেন, শক্তিমত্তার মাধ্যমেই যে কেবল শান্তি আসে তা ইতিহাসে প্রমাণিত। এজন্য পৃথিবীর পাশাপাশি মহাকাশেও তার দেশ শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চায়। মাইক পেন্সের ভাষায়, ‘পৃথিবীর মতো মহাকাশেও যুক্তরাষ্ট্র সর্বদা শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তবে ইতিহাসে প্রমাণিত যে শক্তিমত্তার মাধ্যমেই কেবল শান্তি আসে এবং বহিঃজগতের নিয়ন্ত্রণে আগামী দিনে মার্কিন স্পেস ফোর্স হবে সেই শক্তি।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশ্য গত মার্চেই ‘দ্য স্পেস ফোর্স’ নামে নতুন একটি বাহিনী গড়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। তখন তিনি স্থল, আকাশ এবং জলভাগের মতো মহাকাশকেও ‘রণাঙ্গন’ আখ্যায়িত করেছিলেন। ট্রাম্পের এমন ঘোষণার পর থেকেই নতুন এই সামরিক বাহিনী গড়ার লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ নানা বিষয়ের ওপর কাজ করছে পেন্টাগন।

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিসসহ পেন্টাগনের অনেক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা প্রথমদিকে মহাকাশ বাহিনী গড়ার ধারণার বিরোধিতা করেছিলেন। তবে তারা আগের অবস্থান থেকে সরে এসে এখন এর প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। একই দিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ম্যাটিস তার বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সুরে বলেন, ‘এটি (মহাকাশ) প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে এবং আমাদের এ বাস্তবতার সঙ্গে অবশ্যই মানিয়ে নিতে হবে।’ তবে নতুন এ সামরিক উইংয়ের আকার কেমন হবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানাননি ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্স। এমনকি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য থেকেও এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ম্যাটিসসহ মহাকাশ বাহিনী গড়ার পক্ষের লোকদের বক্তব্য হলো, রাশিয়া ও চীন উভয় দেশেরই বর্তমানে মহাকাশ সম্পর্কিত বিষয়াদি দেখভালের জন্য বিশেষায়িত সামরিক শাখা রয়েছে। এ বাস্তবতায় যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি মহাকাশ বাহিনী গড়া অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে। তাদের এমন বক্তব্যের অবশ্য যুক্তি রয়েছে। কারণ চীনের মহাকাশ কর্মসূচি দেশটির মিলিটারি পরিচালনা করে থাকে। আর রাশিয়ার স্পেস ফোর্স দেশটির গুরুত্বপূর্ণ রাডার ও ক্ষেপণাস্ত্র সাইটগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। এ ছাড়া রাশিয়ার যেসব জায়গা থেকে মহাকাশে রকেট নিক্ষেপ করা হয়ে থাকে সেগুলোও আংশিকভাবে দেখভাল করে থাকে এ বাহিনী। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ বাহিনী গড়ার বিরোধিতা করছেন দেশটির রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সমালোচকদের বক্তব্য, মার্কিন এয়ার ফোর্সের বিদ্যমান লক্ষ্যাদির সঙ্গে নতুন বাহিনীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে এবং আমলাতন্ত্র বৃদ্ধি পাবে। ডিফেন্স অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন্স সাব-কমিটির সদস্য সিনেটর ব্রায়ান স্কাতজ এক টুইট বার্তায় স্পেস ফোর্স গড়ার ধারণাকে ‘সুচিন্তাবহির্ভূত’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আর ডেমোক্র্যাট দলীয় সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স অস্ত্রের ওপর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় না করে বরং এ অর্থ স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও পরিবেশবিষয়ক খাতে বিনিয়োগ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন। এক টুইট বার্তায় তিনি বলেন, ‘মার্কিন শিশু, বয়স্ক ব্যক্তিদের কল্যাণে এবং স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও পরিবেশের সুরক্ষায় আমাদের বিনিয়োগ করা দরকার। পারমাণবিক অস্ত্র, যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র, বোমা ও ট্যাংকের ওপর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে লোকজন অসুস্থ ও ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। এদিকে ২০২০ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হতে ট্রাম্প ইতিমধ্যে নানামুখী তৎপরতা শুরু করেছেন। ট্রাম্পের পরবর্তী নির্বাচনী প্রচারাভিযানের ইশতেহারে স্পেস ফোর্স তৈরির ধারণাটি অন্তর্ভুক্ত হবে। তাই এ কর্মসূচিকে অনেকে রাজনৈতিক হিসেবে দেখছেন। নতুন একটি সামরিক বাহিনী গড়ার ওই ঘোষণার পরপরই সমর্থকদের ঠিকানায় মেইল পাঠিয়েছে ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচনী শিবির। এতে স্পেস ফোর্সের চারটি লোগো দিয়ে সেখান থেকে নিজেদের পছন্দেরটি বাছাই করে ভোট দেওয়ার জন্য সমর্থকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। টুইটার ব্যবহারকারীদের অনেকে অবশ্য এ নিয়ে মজা করছেন। তাদের কেউ কেউ নিজেদের মতো করে মহাকাশ বাহিনীর লোগো তৈরি করে তা টুইটারে পোস্ট করে মজা নিচ্ছেন। এখানে উল্লেখ্য, বহিঃজগতে (আউটার স্পেস) কী ধরনের কর্মকাণ্ড চালানো যাবে এ ব্যাপারে নিয়ম-কানুন বেঁধে দিয়ে ১৯৬৭ সালের ২৭ জানুয়ারি একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ‘আউটার স্পেস ট্রিটি’ নামে এ চুক্তির সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা ১০৭টি। যুক্তরাষ্ট্রও এর মধ্যে একটি। চুক্তিতে কেবল শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যেই আউটার স্পেস ব্যবহার ও সেখানে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালানোর ব্যাপারে সদস্য দেশগুলোর প্রতি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সূত্র : ইনডিপেনডেন্ট অনলাইন, আলজাজিরা।

সর্বশেষ খবর