শিরোনাম
রবিবার, ১২ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

দেশেই তৈরি হচ্ছে ৯৮ শতাংশ ওষুধ

ঝর্ণা মনি

দেশেই তৈরি হচ্ছে ৯৮ শতাংশ ওষুধ

দেশের ওষুধশিল্পে ঘটছে একের পর এক নীরব বিপ্লব। মরণব্যাধি ক্যান্সারের ওষুধ, হেপাটাইটিস সি, রোটা ভাইরাসের ভ্যাকসিনসহ জটিল রোগের ওষুধ তৈরি করে চমকে দিয়েছেন দেশি বিজ্ঞানীরা। চাহিদার ৯৮ শতাংশ ওষুধ এখন দেশেই তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশের তৈরি ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের ১৫০টি দেশে। বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির তথ্যানুযায়ী, দেশে প্রায় ৫ হাজার ব্র্যান্ডের ৮ হাজারের বেশি ওষুধ উৎপাদিত হচ্ছে। ক্যান্সারের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় সব ধরনের ওষুধই এখন তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশে। কেমোথেরাপির ইনজেকশন বা ওরাল ট্যাবলেটসহ ক্যান্সারের ৬৮ আইটেমের ওষুধ বাজারে এনেছে বিকন ফার্মা। রেনাটা, টেকনো ড্রাগ, ইনসেপ্টাসহ কয়েকটি কোম্পানিও ক্যান্সারের আরও কয়েকটি ওষুধ বাজারে ছেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ওষুধ রপ্তানি করছে বেক্সিমকো ফার্মা। রোটা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে ভ্যাকসিন তৈরি করেছেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজির (এনআইবি) বিজ্ঞানীরা। সংশ্লিষ্টরা জানান, কিছু হাইটেক প্রোডাক্ট যেমন ব্লাড প্রোডাক্ট, বায়োসিমিলার প্রোডাক্ট ছাড়া প্রায় সব ধরনের ওষুধই দেশে তৈরি হয়।

আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের (অ্যামচেম) তথ্যানুযায়ী, দেশের চাহিদার ৯৮ শতাংশ মিটিয়ে বিশ্বের ১৫০টি দেশে ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে। গত অর্থবছরে ১০ কোটি ৩৪ লাখ মার্কিন ডলারের ওষুধ রপ্তানি হয়েছে। দেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৮৬৮ কোটি টাকা। জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশ এখন ওষুধ আমদানিকারক দেশের পরিবর্তে বড় রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। আমেরিকা-ইউরোপের মতো দেশে আমরা ওষুধ রপ্তানি করছি। ক্যান্সারসহ নানান জটিল রোগের ওষুধ এখন দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে। আমাদের টার্গেট দেশের শতভাগ চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি বাড়ানো। এজন্য ওষুধকে ‘বর্ষ পণ্য’ হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। ওষধ প্রশাসন অধিদফতর সূত্র জানায়, দেশে ২৫৭টি নিবন্ধিত কোম্পানির মধ্যে ১৯৪টি ওষুধ উৎপাদন করছে। তবে শীর্ষস্থানীয় পাঁচটি কোম্পানি মোট ওষুধের ৪৫ শতাংশ উৎপাদন করে। বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে অস্ট্রিয়া, মিয়ানমার, জার্মানি, ব্রাজিল, শ্রীলঙ্কা, পানামা, ডেনমার্ক, ব্রিটেন, নেদারল্যান্ডস, কেনিয়া, ইউক্রেন, স্পেন, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, পাকিস্তান, ইয়েমেন, সিঙ্গাপুর, ফ্রান্স ও দক্ষিণ আফ্রিকা। রপ্তানির তালিকায় প্রতি বছরই নতুন নতুন দেশ অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওষুধ উৎপাদন ও রপ্তানিতে সাফল্য থাকলেও এ খাতের কাঁচামাল সরবরাহের ব্যবস্থা এখনো দুর্বল। কাঁচামাল সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় উন্নতি করতে পারলে দ্বিতীয় বৃহৎ রপ্তানি খাত হবে ওষুধ। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় কাঁচামাল উৎপাদনের জন্য প্রতিষ্ঠিত এপিআই শিল্প পার্ক স্থাপনের কাজ শেষ হলে কাঁচামাল সরবরাহ সহজ হবে। ২৮টি কোম্পানির ৪২টি প্লটে ওষুধের কাঁচামাল সেখানে তৈরি হবে।

এ ব্যাপারে ওষুধ শিল্প সমিতির মহাসচিব ও হাডসন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম শফিউজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ওষুধ শিল্প খাতে বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনা। সব ওষুধই দেশে তৈরি হচ্ছে। পৃথিবীর যে কোনো দেশের চেয়ে আমাদের দেশে ওষুধের দাম কম। তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে দিন দিন বাংলাদেশের ওষুধের চাহিদা বাড়ছে। গুণগত মান নিশ্চিত করে উৎপাদনক্ষমতা বাড়ানোয় প্রতি বছরই ওষুধ রপ্তানি থেকে আয় বাড়ছে। ভবিষ্যতে বছরে ৫ বিলিয়ন ডলার বা ৪০ হাজার কোটি টাকার ওষুধ রপ্তানি সম্ভব বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর