সোমবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

মেয়র আনিসুলের পরিবহন প্রকল্প নিয়ে টানাপড়েন

৬ কোম্পানির গাড়ি চলবে ২২ রুটে, প্রতি কোম্পানির গাড়ি হবে আলাদা রঙের

জয়শ্রী ভাদুড়ী

গণপরিবহনে লাগামহীন বিশৃঙ্খলা, অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে ৬টি কোম্পানির আওতায় চার হাজার বাস নামানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। তার মৃত্যুর ৯ মাস পার হলেও এই প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে চলছে ধোঁয়াশা। সিটি করপোরেশন, বিআরটিএ নাকি অন্য কোনো সংস্থা এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে তা নিয়ে চলছে টানাপড়েন। নগর বিশ্লেষক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, রাজধানীর গণপরিবহনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে এই পরিকল্পনা নিয়েছিলেন মেয়র আনিসুল হক। কিন্তু তার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই ফাইলে বন্দী হয়ে পড়েছে প্রকল্পটি। এখন শুনছি অনেক সংস্থা পরিবহন ব্যবসায় নামতে ভীষণ উদগ্রীব হয়ে উঠেছে। তারা শুধু লাভের চিন্তায় বিভোর হয়ে আছে। তিনি আরও বলেন, রাতারাতি রাস্তা থেকে অন্য গাড়িগুলো সরিয়ে দিয়ে তো আর ৪ হাজার বাস নামিয়ে দেওয়া যাবে না। এর জন্য সঠিক পরিকল্পনা করতে হবে। সবার তো বাসের ব্যবসায় নেমে ফায়দা লোটার দরকার নেই। আনিসুল হকের পরিকল্পনা বাস্তবায়নেই শৃঙ্খলা ফিরবে রাজধানীর গণপরিবহনে।

বর্তমানে রাজধানীর ২৪৬টি রুটে মোট ৭ হাজার ৯৩৭টি বাস চলাচল করে। শুধু গাজীপুর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচল করে ৩৫টি কোম্পানির ১ হাজার ৯৮০টি বাস। বাসগুলো নিজেদের ইচ্ছামতো রুট, স্টপেজ এবং ভাড়া নির্ধারণ করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। বাসে উঠলেই ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বাসের হেলপারদের শুরু হচ্ছে বাকবিতণ্ডা। ফিটনেসবিহীন ভাঙাচোরা গাড়িতেই দিনের পর দিন চলছে যাত্রীসেবা। তাই পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে স্বউদ্যোগে মাঠে নামেন মেয়র আনিসুল হক। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পরিবহন মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রায় ৩০টি বৈঠক করেন তিনি। সবার সমন্বয়ে একটু করে এগিয়ে যায় পরিকল্পনা। দুই বছরে চূড়ান্ত হয় স্বপ্নবাজ মেয়র আনিসুল হকের রাজধানীর গণপরিবহনকে আধুনিকায়ন এবং যাত্রীবান্ধব করার পরিকল্পনা। কিন্তু স্বপ্ন পূরণের আগেই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে অকালে ঝরে পড়েন মেয়র আনিসুল হক। পরিকল্পনার চূড়ান্ত খসড়া বিষয়ে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) সাবেক নির্বাহী পরিচালক এস এম সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, রাজধানীর গণপরিবহনকে নির্দিষ্ট ৬টি কোম্পানির আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা করা হয়। পুরো শহরে রুট থাকবে ২২টি। প্রতিটি কোম্পানির গাড়ি হলুদ, সবুজ, বেগুনি, কমলা এরকম ছয়টি আলাদা রং দিয়ে আলাদা করে দেওয়া হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এক রুটে একটি কোম্পানির গাড়ি চলবে। তিনি আরও বলেন, যাত্রী ওঠানোর প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে প্রতিটি গাড়িতে সমপরিমাণ লভ্যাংশ দেওয়া হবে। ফলে গাড়িতে গাদাগাদি করে যাত্রী তোলার কোনো প্রয়োজন হবে না পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অর্থের সংস্থান করতে প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। কিন্তু মেয়রের মৃত্যুর পরে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অর্থের জোগানে কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে খুব দ্রুত হয়তো এর একটি সমাধান আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।

সর্বশেষ খবর