সোমবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা
সবচেয়ে কাছে নভোযান পাঠাল নাসা

সূর্য রহস্যের কিনারা হবে এবার?

প্রতিদিন ডেস্ক

সূর্য রহস্যের কিনারা হবে এবার?

রবিবার ‘পার্কার সোলার প্রোব’ উেক্ষপণ করে নাসা —বিবিসি

চন্দ্র জয় হয়েছে, প্রতিবেশী মঙ্গলও প্রায় জয় হয়েছে। এবার পালা এদের প্রাণভোমরা সূর্য। সেই সূর্যকে ছোঁয়ার স্বপ্ন নিয়ে আকাশে পাড়ি জমিয়েছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসা। নভোযান ‘পার্কার সোলার প্রোব’ নামে একটি উপগ্রহ সফলভাবে উেক্ষপণ করেছে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা।

গতকাল বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা ৩১ মিনিটে ফ্লোরিডায় নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে অত্যন্ত শক্তিশালী ‘ডেল্টা ফোর হেভি রকেট’-এর কাঁধে চেপে মহাকাশে পাড়ি জমিয়েছে নভোযানটি। শনিবারই তার রওনা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রযুক্তিগত ব্যাপারে গতকাল নাসার পরীক্ষায় ডেল্টা ফোর রকেট ১০০ শতাংশ নম্বর না পাওয়ায় পিছিয়ে যায় উেক্ষপণ।

কীভাবে সূয্যি মামার দেশে পৌঁছাবে পার্কার? : পৃথিবীর বিভিন্ন কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করতে করতে পার্কার সোলার প্রোব শুক্রগ্রহে (ভেনাস) পৌঁছবে দেড় মাস পর, অক্টোবরে। তারপর আরও অনেক পথ পেরোতে হবে ওই মহাকাশযানকে সূর্যের মুল্লুকে পৌঁছতে। আর সেই পথ পেরোতে সময় লাগবে কম করে ২ থেকে ৪ বছর। তারপর আরও এগিয়ে সূর্যের বায়ুমণ্ডলের একেবারে বাইরের স্তর বা করোনায় ঢুকে পড়বে ২০২২ সালের মাঝামাঝি।

কেন গলে যাবে না মহাকাশযান? : এখন থেকে ৬০ বছর আগে প্রথম সূর্যের কাছাকাছি নভোযান পাঠানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু সূর্যের কাছে পাঠানোর জন্য যে ধরনের নভোযান তৈরির প্রয়োজন সেই প্রযুক্তি এতদিন পর বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন। সোলারচালিত এই নভোযানের যন্ত্রপাতি থাকবে ৪.৫ ইঞ্চি পুরু কম্পোজিট কার্বনের আবরণে দিয়ে মোড়া। ফলে ভিতরের তাপমাত্রা সব সময় ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে থাকবে। রক্ষা পাবে ভিতরের যন্ত্রপাতি এবং কম্পিউটার। জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থ গবেষণাগারের বিজ্ঞানী নিকি ফক্স যুক্ত রয়েছেন এই প্রকল্পের সঙ্গে। তিনি বলেন, নভোযানের সূর্যের দিকে থাকা অংশটি ১৩৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে পারবে। নভোযানটি একটি হিট শিল্ডের মাধ্যমে সুরক্ষিত থাকবে।  প্রতি ঘণ্টায় ৪ লাখ ৩০ হাজার মাইল বেগে চলা যানটি মানুষের তৈরি সবচেয়ে দ্রুতগামী যান হতে যাচ্ছে। তিনি আরও জানান, সাত বছরের বেশি সময়ের এই অভিযানে নভোযানটি ২৪ বারের মতো করোনা অতিক্রম করবে। ফক্স বলেন, এই অভিযান হবে পুরোপুরি একটি দুঃসাহসী যাত্রা।

কেন এই অভিযান গুরুত্বপূর্ণ? : সূর্য কীভাবে কাজ করে, তা বুঝতে সাহায্য করবে পার্কার নামের এই স্যাটেলাইট। সূর্য তার বৈদ্যুতিক বিভিন্ন কণা এবং চৌম্বকশক্তি দিয়ে পৃথিবীকে সব সময় প্রভাবিত করছে। এই ‘সোলার উইন্ড’ বা সূর্য থেকে নিঃসরিত বাতাসের প্রভাবে উত্তর মেরুর আকাশে তৈরি হয় অদ্ভুত সুন্দর রংচঙে আলোর খেলা। কিন্তু সূর্যের কিছু প্রবাহ পৃথিবীর চৌম্বকশক্তির ভারসাম্য বিঘ্নিত করে ফেলতে পারে। সেক্ষেত্রে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হতে পারে, মহাকাশে স্যাটেলাইটগুলো কক্ষচ্যুত হতে পারে, এমনকি বৈদ্যুতিক গ্রিড বিকল হয়ে যেতে পারে। বিজ্ঞানীরা সেই সব বিপদ আগে থেকে বোঝার চেষ্টা করছেন। পার্কার আগাম তথ্য দিয়ে এ কাজে দারুণভাবে সাহায্য করতে পারে।

কেন সূর্যের এত কাছাকাছি যাওয়া দরকার? ‘করোনা’ বা সূর্যের চারদিকের উজ্জ্বল আভাযুক্ত যে এলাকা সেটির অদ্ভুত আচরণ বিজ্ঞানীদের কাছে বড় রহস্য। সূর্যপৃষ্ঠের চেয়ে করোনার তাপমাত্রা বেশি। সূর্যপৃষ্ঠের তাপমাত্রা যেখানে ৬,০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো, করোনা অঞ্চলের তাপমাত্রা কয়েক মিলিয়ন ডিগ্রি হতে পারে। কেন এই ফারাক-তার সুনির্দিষ্ট উত্তর এখনো বিজ্ঞানীদের কাছে নেই। এ ছাড়া সূর্য থেকে নিঃসরিত বাতাস যখন করোনায় প্রবেশ করে, তখন তার গতি হঠাৎ তীব্রভাবে বেড়ে যায়। এই গরম বাতাস তখন প্রতি সেকেন্ডে ৫০০ কিমি বেগে সোলার সিস্টেমের ভিতর দিয়ে ধেয়ে চলে। পার্কার করোনার বৈদ্যুতিক এবং চৌম্বক ক্ষেত্রের বিভিন্ন তথ্য পাঠাতে সক্ষম হবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা। এএফপি, বিবিসি।

সর্বশেষ খবর