সোমবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

পুলিশের ছদ্মবেশে ওরা

মির্জা মেহেদী তমাল

পুলিশের ছদ্মবেশে ওরা

শহীদ ওরফে কামরুল মাঝি সাত বছর ধরে পুলিশ সেজে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। সারাক্ষণ তার হাতে থাকত পিস্তল ও ওয়াকিটকি। দেখলে তাকে আসল পুলিশই মনে হতো। এমনই আরেকজন ইউসুফ কাজী। তিনিও প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়েছেন। এই দুজনের মতো ঢাকাসহ সারা দেশে কয়েকশ ভুয়া পুলিশ, র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্য রয়েছে। তারা সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে। অবশ্য কামরুল ও ইউসুফ শেষ পর্যন্ত পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাজধানীর পলওয়েল মার্কেট ও রজনীগন্ধা সুপার মার্কেটে অবাধে বিক্রি হয় র‌্যাব-পুলিশের পোশাক; পাওয়া যায় হাতকড়াসহ সব ধরনের সরঞ্জাম। পোশাক ও সরঞ্জাম বিক্রির ব্যাপারে নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। এই সুযোগ ভালোভাবে কাজে লাগাচ্ছে অপরাধীরা। তারা পুলিশ বা র‌্যাবের পোশাক পরে ছিনতাই, ডাকাতি, খুন ও অপহরণের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। আর ভাবমূর্তির সংকটে পড়ছেন পুলিশ ও র‌্যাবের আসল সদস্যরা। ওই মার্কেটে পুলিশ-র‌্যাবের কটি, হাতকড়া, লাইটিং ডিটেক্টর, ব্যাজ, বাঁশি, ক্যাপ, বেল্ট, জুতা, পিস্তল কাভারসহ সব সরঞ্জামই বাইরের লোকের কাছে বিক্রি করা হয়। অথচ পুলিশ সদর দফতর থেকে নির্দেশনা  দেওয়া আছে, পরিচয়পত্র ছাড়া কারও কাছে কোনো সরঞ্জাম বিক্রি করা যাবে না।

পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এক শ্রেণির প্রতারক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে। কিছু প্রতারককে এরই মধ্যে ধরা হয়েছে।’ তারা বলেন, ‘পুলিশের পোশাক ও সরঞ্জাম বাইরে বিক্রি হচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। এ কাজে সহায়তা করছে দুর্নীতিবাজ কিছু পুলিশ সদস্য। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। পুলিশের  পোশাক ও সরঞ্জাম বিক্রির জন্য নীতিমালা রয়েছে; কেউ অমান্য করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চাকরিচ্যুত বা অবসরে যাওয়া কিছু পুলিশ সদস্য তাদের ব্যবহূত পোশাক জমা না দিয়ে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে বিক্রি করে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের পোশাক ও সরঞ্জাম ব্যবহারে কড়াকড়ি না থাকায় অপরাধীরা অপরাধ ঘটানোর সুযোগ পাচ্ছে। একসময় তালিকাভুক্ত দোকান ছাড়া অন্য কোথাও পুলিশি সরঞ্জাম বেচাকেনা করা যেত না। যে কেউ ইচ্ছা করলেই দোকান থেকে পুলিশি সরঞ্জাম কিনতে পারত না। পুলিশ সদস্যদেরও যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে পোশাক ও সরঞ্জাম কিনতে হতো। এখন যে কোনো ব্যবসায়ী পুলিশি সরঞ্জাম কেনাবেচা করতে পারেন, যে কেউ কিনতে পারেন; অনুমতির প্রয়োজন হয় না।

গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, ঈদে ছিনতাই-ডাকাতিসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে এদের তৎপরতা বাড়ে। সম্প্রতি রাজধানীর রামপুরা ও রমনা এলাকা থেকে ডাকাত-ছিনতাইকারী দলের ১৬ সদস্যকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ। এরা নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে আসছিল। রামপুরা-বনশ্রী রোড থেকে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে নয়জনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন- জুয়েল রানা, ইয়াসিন, বাদল, মোমেন আলী, শহিদুল ইসলাম, ফিরোজ, সৈয়দ মনিরুজ্জামান, মো. বালী ও সবুজ। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, দুটি গুলি, দুটি চাপাতি, চারটি ছুরি, একটি ওয়াকিটকি, তিনটি ডিবি লেখা জ্যাকেট, দুটি হ্যান্ডকাপ, দুটি বেতের লাঠি, একটি ব্যাগ ও দুটি ডিবি স্টিকার উদ্ধার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি মাইক্রোবাসসহ তিনটি গাড়ি জব্দ করা হয়েছে।

পুলিশ সদস্যদের বাইরে ভুয়া ডিবি বা পুলিশ সদস্যদের কাছে হাতকড়া বা পুলিশি পোশাক কীভাবে যায়— এ প্রশ্নের জবাবে পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, খোলা বাজারে এসব পোশাক ও সরঞ্জাম কিনতে পাওয়া যায়। যারা বিক্রি করেন, তাদের সতর্ক করে বলা হয়েছে, পুলিশ সদস্যদের বাইরে যেন পোশাক ও সরঞ্জামাদি বিক্রি না করেন। এ বিষয়ে নীতিমালা প্রয়োজন রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর