বিয়ের আনন্দ রূপ নিল বিষাদে। ফ্যাকাসে হলো বিয়ের রঙ। নরসিংদীর শিবপুরে যাত্রীবাহী বাস ও বরযাত্রীবাহী মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ গেছে সাতজনের। বর-কনেসহ আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন আরও ১৪ জন। বাসটিকে আটক করা হলেও চালক পালিয়েছেন।

গতকাল সকাল ৮টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে উপজেলার সোনাইমুড়ি টিলা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে ও পরে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতরা হলো প্রান্তিকা রানী বর্মণ (৬), স্নিগ্ধা রানী বর্মণ (৫), বৃষ্টি রানী বর্মণ (৬), সজল বর্মণ (২০), শুভ বর্মণ (৩০), সৌরভ বর্মণ (১২) ও সজল বর্মণ (২৫)। হতাহতরা সবাই চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলার ষাটনল এলাকার বাসিন্দা। হাইওয়ে পুলিশ জানায়, মিতালী পরিবহনের একটি বাস ঢাকা থেকে সিলেটের দিকে যাচ্ছিল। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শিবপুরের সোনাইমুড়ি টিলা এলাকায় পৌঁছালে বাসের সামনের চাকা ফেটে যায়। এ সময় চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে বাসটির সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা বরযাত্রীবাহী একটি মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে মাইক্রোবাসে থাকা স্নিগ্ধা রানী বর্মণ, প্রান্তিকা রানী বর্মণ, বৃষ্টি রানী বর্মণ নামে তিন শিশু মারা যায়। বর-কনেসহ বাস ও মাইক্রোবাসের আরও ২১ যাত্রী আহত হন। স্থানীয় লোকজন আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক সজল বর্মণ নামের একজনকে মৃত ঘোষণা করেন। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে গুরুতর আহত অবস্থায় ১৭ জনকে ঢাকা মেডিকেলে প্রেরণ করলে পথে শুভ বর্মণ, সৌরভ বর্মণ ও সজল বর্মণের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে সাতজনে দাঁড়িয়েছে। দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বরযাত্রীবাহী মাইক্রোবাসটি দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। আর এ কারণেই মাইক্রোবাসের যাত্রীদের হতাহতের ঘটনা বেশি ঘটেছে। অন্যদিকে যাত্রীবাহী বাস মিতালী পরিবহনের সামনের বাঁ পাশের চাকাটি ফেটে গেছে। আর বাসের সামনের কিছুটা অংশ দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। দুর্ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দারা হতাহতদের মাইক্রোবাস থেকে বের করে মহাসড়কের পাশে রাখে। ওই সময় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন দুর্ঘটনায় আহতের স্বজনরা। বরপক্ষের স্বজন লক্ষ্মণ বর্মণ জানান, চাঁদপুরের মতলব উপজেলার ষাটনল গ্রাম থেকে বরযাত্রীবাহী মাইক্রোবাসটি নরসিংদীর রায়পুরার নবোয়ারচর গ্রামে এসেছিল। রাতে বিয়ে শেষে সকালে কনেসহ গাড়িটি ফিরে যাচ্ছিল। পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ইটাখোলা হাইওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর হাফিজুর রহমান বলেন, মিতালী পরিবহন যাত্রীবাহী বাসটির সামনের চাকা ফেটে গেলে তা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। পরে বরযাত্রীবাহী মাইক্রোবাসটির ওপরে উঠিয়ে দেয়। এতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। বাসটিকে আটক করা গেলেও চালক পালিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতিতে মরদেহ বিনা ময়নাতদন্তে হস্তান্তর করা হয়েছে।