বৃহস্পতিবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা
ঐতিহ্য

আদমদীঘির রক্তদহ বিল

আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি

আদমদীঘির রক্তদহ বিল

পলাশীর যুদ্ধে মুসলমানরা বিপন্ন হয়ে পড়লে মীর জাফর, উমিচাঁদ, জগেশঠ, রায়দুর্লভের মতো কতিপয় দেশদ্রোহীর সহযোগিতায় ইংরেজরা এ দেশের রাজ ক্ষমতার অধিকারী হয়ে বসে। দেশবাসী এতে করে সাময়িকভাবে হতভম্ব হয়ে পড়লেও তাদের আত্মসস্বিত ফিরে আসতে দেরি হলো না। ফলে কিছু দিনের মধ্যেই শুরু হয়ে গেল স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম। প্রথম যুগের সেই স্বাধীনতা সংগ্রামে যে সব বীরযোদ্ধা সম্মুখ সারিতে ছিলেন তাদের মধ্যে ফকির মজনু শাহ অন্যতম। পলাশীর যুদ্ধের ৬ বছর পরে এই ফকির নেতা সর্বপ্রথম সংগ্রামে অবতীর্ণ হন এবং ঊনবিংশ শতকের প্রথম কয়েক বছর পর্যন্ত ফকিরদের সংগ্রাম অব্যাহত ভাবেই চলতে থাকে। মজনু শাহ গোয়ালিওর রাজ্যের (বর্তমান ভারত) মেওয়াতে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমান ভারতের কানপুর থেকে চল্লিশ মাইল দূরে বাস করতেন। এখান থেকেই তিনি সশস্ত্র অনুচরসহ প্রায় প্রতি বছর তৎকালীন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধিকারভুক্ত বাংলা ও বিহারের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাতেন। তার কার্যক্ষেত্র প্রধানত বিহারের পানিয়া অঞ্চল এবং বাংলার রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, মালদহ, সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও ময়মনসিংহ জেলায়। প্রকৃতপক্ষে এদেশে ব্রিটিশ শাসনের প্রথম যুগে তৎকালীন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ইংরেজি বণিকের দল এবং তাদের সহায়ক জমিদার মহাজনের মধ্যে শাহের আন্দোলন সমসাময়িক কালের ইতিহাসে ‘ফকির বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত। বগুড়ার মহাস্থানে ফকির নেতা মজনু শাহর আস্তানা বা প্রধান ঘাঁটি ছিল। ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে এখানে তিনি একটি দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন। এখান থেকে বিভিন্ন স্থানে তিনি অভিযান পরিচালনা করেছেন। তার মধ্যে আদমদীঘি থানার অভিযান উল্লেখযোগ্য। ১৭৮৬ সালের আগস্ট মাসে বগুড়া থেকে ৩৫ মাইল দূরবর্তী এক স্থানে লেফটেন্যান্ট আইন শাইনের সঙ্গে তার সংঘর্ষ হয়েছিল। গবেষণায় দেখা গেছে , এ স্থানটি আদমদীঘি থানার রক্তদহ বিল। এখানে ব্যাপক ইংরেজ সৈন্য হতাহত হয়েছিল এবং রক্তের বন্যা বয়ে গিয়েছিল বলে সে সময় এর নাম রাখা হয় রক্তদহ বিল। রক্তদহ বিলে ফকির বাহিনীর একজন শাহাদত প্রাপ্ত মুজাহিদ শায়িত আছেন। এই রক্তদহ মাজারটি স্থানীয় ভাবে ‘রক্তদহ দরগা’ নামে পরিচিত। এ দরগাতে প্রতি শুক্রবার কেউ না কেউ এসে মানত ও জিয়ারত করে। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য বড় বড় বন্যার মধ্যে মাজারের চারদিক ডুবলেও এ মাজারে পানি ওঠেনি। ফকির মজনু শাহ মূলত এ এলাকায় আন্দোলন করেছিলেন ইংরেজ ও তাদের দোসর জমিদারদের অত্যাচার থেকে সাধারণ মানুষের মুক্তি দেওয়ার জন্য। তিনি এক দিকে যেমন আত্যাচারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন তেমনি অনাহারী মানুষের মুখে তুলে দিয়েছেন অন্ন। এমনিভাবে ফকির মজনু শাহ বাংলার ইতিহাসে যেমন চির স্মরণীয় হয়ে আছেন তেমনি আদমদীঘির ইতিহাসেও।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর