শুক্রবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

চিরনিদ্রায় শায়িত গোলাম সারওয়ার

নিজস্ব প্রতিবেদক

চিরনিদ্রায় শায়িত গোলাম সারওয়ার

সহকর্মী, সুহৃদ, শুভানুধ্যায়ীদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন দেশবরেণ্য সাংবাদিক, সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার। গতকাল বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয় সমকালীন সাংবাদিকতার এই পথিকৃতের।

গতকাল সকাল সাড়ে ৮টায় বারডেম হিমঘর থেকে মরদেহ নেওয়া হয় তার প্রিয় কর্মস্থল তেজগাঁওয়ের সমকাল কার্যালয়ে। সম্পাদকের লাশ আনা হলে সেখানে নেমে আসে শোকের ছায়া। এ সময় সমকাল পরিবারের সদস্যরা তাদের সম্পাদককে শেষ শ্রদ্ধা জানান। সকাল সোয়া ৯টায় সমকাল কার্যালয়সংলগ্ন টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওসমানী হল মাঠে গোলাম সারওয়ারের তৃতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য বেলা পৌনে ১১টায় একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক গোলাম সারওয়ারের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হয়। সেখানে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যবস্থাপনায় শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরসহ সংসদ সদস্যরা। এ ছাড়া র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, শিক্ষাবিদ জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক, তথ্য সচিব আবদুল মালেক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, এনজিও ব্যক্তিত্ব খুশী কবির, কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক প্রমুখ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। এ ছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, বাংলা একাডেমি, শিশু একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, গণতন্ত্রী পার্টি, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের নেতারা এই বরেণ্য সাংবাদিকের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, গোলাম সারওয়ার ছিলেন একজন বাতিঘর। যা কখনো নিভে যাবে না। বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, সাংবাদিকতার নৈতিকতার বিকাশে তিনি ছিলেন সোচ্চার ও বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর।

 

আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, অ্যাজ মাই এসেসমেন্ট, হিজ ইজ অ্যা ভেরি কম্পোজড ম্যান। তিনি যা কিছু বলতেন, বুঝে বলতেন। গোলাম সারওয়ারের শিক্ষক জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, শিক্ষকের আগে আজ ছাত্র চলে গেল! সারওয়ার আজীবন সৎ সাংবাদিকতা করে গেছে। সাংবাদিকতা জগতে তার নাম স্থায়ী হয়ে থাকবে।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমরা ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলাম। তার চলে যাওয়ায় ব্যক্তি পর্যায়েরও ক্ষতি হলো আমার। ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু ইস্যুতে এক আপসহীন কলমযোদ্ধা ছিলেন গোলাম সারওয়ার।

হাসানুল হক ইনু বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গি ও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে তার মতো একজন ব্যক্তির ভূমিকা বড় দরকার ছিল। তিনি শুধু সাংবাদিক ছিলেন না, ছিলেন গণমাধ্যমের অভিভাবকও। মোহাম্মদ নাসিম বলেন, তিনি যেমন আমাদের প্রশংসা করতেন, তেমনিভাবে অনেক সমালোচনাও করেছেন। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনাকেও ভালো পরামর্শ দিতেন তিনি। নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, শুধু সাংবাদিকই নন, সামাজিক-শিক্ষা খাতেও যুক্ত ছিলেন এই কিংবদন্তি। নতুন প্রজন্ম তাকে অনুসরণ করবে।

র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, দশ বছরের বেশি সময় ধরে আমাদের পরিচয় ছিল। আজকে আমার শ্রদ্ধাভাজন মুরুব্বি চলে গেলেন।

শহীদ মিনারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক গোলাম কুদ্দুস, মরহুম গোলাম সারওয়ারের বড় ছেলে গোলাম শাহরিয়ার রঞ্জু প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন পর্বটি চলে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। পরে গোলাম সারওয়ারের মরদেহ আনা হয় তার ‘দ্বিতীয় বাড়ি’ জাতীয় প্রেস ক্লাবে। ক্লাব প্রাঙ্গণে কালো কাপড় আচ্ছাদিত অস্থায়ী মঞ্চে রাখা হয় এই কিংবদন্তি সাংবাদিকের কফিন। সেখানে মুক্তিযোদ্ধা গোলাম সারওয়ারকে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষে পুলিশের একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মো. সারোয়ার হোসেন এবং প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তার তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম ও উপ প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন শ্রদ্ধা জানান। এ ছাড়া শ্রদ্ধা জানান তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, নিউজ টুডের সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, প্রথম আলোর পক্ষে যুগ্ম সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত প্রমুখ।

বিএনপির পক্ষে ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, যুগ্মমহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও খায়রুল কবির খোকন, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, সাইফুল আলম, আজিজুল ইসলাম ভুঁইয়া, ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক স্বপন সাহা, বিএফইউজের সভাপতি মোল্লা জালাল, মহাসচিব শাবান মাহমুদ, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু জাফর সূর্য, সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী, ডিআরইউ সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শুকুর আলী শুভ, বিএফইউজের (একাংশ) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তাফিজ শফি, সৈয়দ কামালউদ্দিন, শাহজাহান মিয়া, হাসান শাহরিয়ার, বাসসের প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, পিআইবির ডিজি শাহ আলমগীর, কামরুল ইসলাম চৌধুরী, কাদের গনি চৌধুরী, অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন। এ ছাড়া ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, নারী সাংবাদিক কেন্দ্র, ইআরএফ, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সাংবাদিক ফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠনও ফুলেল শ্রদ্ধা জানায়।

এখানে হাসানুল হক ইনু বলেন, গোলাম সারওয়ারের মৃত্যুতে গণমাধ্যম একজন অভিভাবক হারিয়েছে; যা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, সত্য সুন্দর সাংবাদিকতার উদাহরণ হিসেবে গোলাম সারওয়ার আমাদের সামনে থাকবেন সবসময়।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, গোলাম সারওয়ারের অনেক গুণের মধ্যে তিনি একজন সাংবাদিক, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। তার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ যেন আরও শক্তিশালী হয় এই প্রত্যাশা।

ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, আমরা যখন সম্পাদক পরিষদ গঠন করেছি, তার উদ্যোগ তিনি নিয়েছিলেন। আমরা জোর করে তাকে সভাপতির পদটি দিয়েছিলাম। কারণ, আমরা জানতাম তার সুযোগ্য নেতৃত্বেই এই সংগঠনটি দাঁড় করানো সম্ভব।

জাতীয় প্রেস ক্লাব সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, জাতীয় প্রেস ক্লাব তাকে ছাড়া কল্পনা করা যায় না। তার পরামর্শ ও সহযোগিতা সবসময় পেয়েছি। সাংবাদিক সমাজ দীর্ঘদিন তার অভাব অনুভব করবে। গোলাম সারওয়ার চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিঙ্গাপুরে মারা যান ১৩ আগস্ট রাতে। মঙ্গলবার রাতে তার মরদেহ ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। বুধবার তার মরদেহ হেলিকপ্টারে জন্মস্থান বরিশালের বানারীপাড়ায় নেওয়া হয়। বানারীপাড়া মডেল ইনস্টিটিউশন মাঠে তার প্রথম জানাজা শেষে ওইদিন বিকালে মরদেহ ঢাকায় আনা হয়। পরে উত্তরার মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা শেষে রাতে আবারও গোলাম সারওয়ারের মরদেহ বারডেমের হিমঘরে রাখা হয়।

সর্বশেষ খবর