শুক্রবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

ঢাকা-চট্টগ্রাম দীর্ঘ যানজট ভোগান্তি

প্রতিদিন ডেস্ক

প্রতিবারের মতো এবারও ঈদযাত্রায় বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে ভোগান্তি শুরু হয়েছে। গতকালও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা-গোমতী সেতুর দুই পাশের ৩২ কিলোমিটার সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া- দৌলতদিয়া নৌরুট, শরীয়তপুর-চাঁদপুর রুটে মেঘনার নরসিংহপুর ফেরিঘাট ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে ফেরি পারাপার বিঘ্নিত হয়েছে। অন্যদিকে সুখবর পাওয়া গেছে রাজধানী থেকে দেশের উত্তরাঞ্চলের যাত্রাপথে। এ রুটে এখনো যানজটের খবর মেলেনি। দায়িত্বশীলরা বলছেন, এবার এ রুটে কোনো যানজট হবে না, কারণ ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে নির্মাণাধীন ২৩টি সেতু খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে যানবাহনগুলোর জন্য ফোর লেনের সুবিধা তৈরি হয়েছে, ফলে কোনো যানজট হবে না।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—

কুমিল্লা : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা-গোমতী সেতুর দুই পাশের ৩২ কিলোমিটার সড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হলে আটকা পড়া যাত্রী ও পশু বিক্রেতারা চরম দুর্ভোগে পড়েন। গত মঙ্গলবার বিকাল থেকে এ যানজট চলছে। গতকাল পর্যন্ত যানজট বাড়া-কমার মধ্যেই দুপুরের দিকে মেঘনা-গোমতী সেতুর দুই পাশে ৩২ কিলোমিটার যানজট তৈরি হয়। রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এ যানজট ছিল।

যাত্রীরা জানান, কুমিল্লা অংশে দীর্ঘ যানজটে আটকে থাকে শত শত যানবাহন। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েন ঈদের বাজারে আনা-নেওয়া করা পশুবাহী যানবাহনগুলো। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকার ফলে পশুর খাদ্য নিয়ে চিন্তায় পড়েন ব্যবসায়ীরা। হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা রিজিওনের পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার বিকালে শুরু হওয়া যানজট দীর্ঘ আকার ধারণ করেছে। মহাসড়কের মেঘনা-গোমতী ও মেঘনা সেতুর উভয় দিকে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া ঈদ সামনে রেখে পণ্যবাহী যানবাহন বেড়ে গেছে, যার প্রভাবে পড়ছে সড়কে। হাইওয়ে পুলিশ যানজট নিরসনে কাজ করছে।

মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রী ও শ্রমিকরা। পর্যাপ্ত ফেরি থাকার পরও সড়কে দীর্ঘ হচ্ছে যানবাহনের লাইন। এর ফলে বাসযাত্রী ও যানবাহনের শ্রমিকরা চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন। জানা গেছে, শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় এ রুটে গাড়ির চাপ বেড়েছে। বিআইডব্লিউটিসির আরিচা অঞ্চলের ম্যানেজার সালাউদ্দিন জানান, শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় এ রুটে যানবাহনের চাপ বেড়েছে।

টাঙ্গাইল : এবার ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে তেমন একটা যানজট হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, এবার অনেকটা যানজটমুক্তভাবেই ঘরমুখো মানুষ নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারবেন। তারা জানান, উত্তরবঙ্গসহ ২৬টি জেলার দূরপাল্লার যাত্রী ও চালকরা ফোর লেনের পুরো সুবিধা নিয়ে চলাচল করতে পারবেন। ফোর লেনের সুবিধার জন্য এরই মধ্যে নির্মাণাধীন ২৩টি সেতু খুলে দেওয়া হয়েছে। ফোর লেনের ধেরুয়া ওভারব্রিজের একটি লেনসহ নির্মাণাধীন লেনগুলোও খুলে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ঈদে ঘরমুখো মানুষের নিরাপদ যাত্রা ও মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। টাঙ্গাইল সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আমিমুল এহসান জানান, এবার কোরবানির ঈদে চার লেন প্রকল্পের কারণে যানজটের সম্ভাবনা নেই। মহাসড়কের লেনগুলো খুলে দেওয়ায় পুরো চার লেনের সুবিধা পাবে যানবাহনগুলো। প্রকল্পের প্রায় ৭৫ ভাগ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ২৬টি সেতুর মধ্যে ২৩টি ঈদের আগেই চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এ ছাড়া ধেরুয়া রেলক্রসিংয়ে ওভারব্রিজের একটি লেন খুলে দেওয়া হয়েছে। ঈদের আগে ও পরে চার লেনের কাজ বন্ধ রাখা হবে যাতে ঈদে চলাচলকারী মানুষের কোনো দুর্ভোগ না হয়।

জানা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে কালিহাতীর এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেনের কাজ চলমান রয়েছে। উত্তরবঙ্গের ২৬ জেলার ৯২টি রোডসহ ১২২ রোডের যানবাহন এ মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করায় রাস্তায় যানবাহনের চাপ বেশি থাকে। ঈদে যানবাহনের চাপ ১০ গুণ বেড়ে যায়; যে কারণে এই মহাসড়কে যানবাহন এমনিতেই সব সময় ধীরগতিতে চলে। এর মধ্যে যাত্রীবাহী যানবহন বহুগুণ বেড়ে যাওয়া, ফিটনেসবিহীন যানবাহন রাস্তায় বিকল হওয়া, অতিরিক্ত গরুর ট্রাক ও ছোটখাটো দুর্ঘটনা এবং বঙ্গবন্ধু সেতু টোলপ্লাজায় টোল আদায়ে ধীরগতি ও চার লেনের কাজ চলমান থাকায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ঈদের তিন দিন আগে ও পরের তিন দিন এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে। এ ছাড়া গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থানে দীর্ঘ যানজটের কবলে পড়ে প্রতিদিনই দুর্ভোগ পোহাতে হয় মহাসড়কে চলাচলকারী সাধারণ মানুষকে। মহাসড়কের কদিমধল্যা, পাকুল্যা, নাটিয়াপাড়া, করটিয়া, টাঙ্গাইল বাইপাস, ধেরুয়া চেকপোস্ট, ঘারিন্দা বাইপাস, রসুলপুর, এলেঙ্গাসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়তই যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে এবার ঈদে চার লেন খুলে দেওয়ায় যানজট তেমন হবে না বলে মনে করছেন দূরপাল্লার যাত্রী ও চালকরা।

শরীয়তপুর : মাত্র দুটি ফেরি চলার কারণে শরীয়তপুর-চাঁদপুর রুটে মেঘনার নরসিংহপুর ফেরিঘাটে দুই শতাধিক গাড়ি পার হওয়ার অপেক্ষায় থাকছে। তবে সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন, পদ্মার কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌপথে নাব্য সংকটে যান পারাপার বন্ধ থাকায় এ ঘাটে চাপ বেড়েছে। সে কারণে যানজট তৈরি হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিসির নরসিংহপুর ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক আবদুস সাত্তার জানান, দুই দিন ধরে কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌপথে নাব্য সংকটে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার শত শত যাত্রীবাহী বাস ও মালবাহী ট্রাক পার হওয়ার আশায় এ ঘাটে এসে আটকা পড়েছে।

ফরিদপুর : রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে গতকাল যাত্রীবাহী বাস ও গরুবাহী ট্রাকের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। এ লাইন দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে মহাসড়কের প্রায় ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত দুই সারিতে বিস্তৃত ছিল। ভোর থেকে গরুবাহী ট্রাকের সংখ্যা বাড়তে থাকায় এ অবস্থা হয়। কোনো কোনো সূত্রমতে, কয়েকদিন ধরে পদ্মায় তীব্র স্রোত থাকায় ফেরি চলাচলে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে ঢাকামুখী যানবাহনের দীর্ঘ লাইন হচ্ছে। ঘাটসংশ্লিষ্টরা জানান, ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত গরুবাহী ট্রাক ও কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ এবং দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে তীব্র স্রোত থাকায় ফেরি চলাচলে অতিরিক্ত সময় ব্যয় হচ্ছে। এতে দৌলতদিয়া ঘাটে যানবাহনের দীর্ঘ সারির সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে ফেরি পারাপার হওয়ার জন্য দৌলতদিয়া ঘাটে ৮-১০ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে পরিবহনগুলোকে। এতে যাত্রী ও চালকদেও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গরু ব্যবসায়ীদেরও লোকসান গুনতে হচ্ছে।

বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট শাখার ম্যানেজার মো. শফিকুল ইসলাম জানান, এই নৌরুটে বর্তমান ৯টি রোরো, ৩টি কে-টাইপ ও ৮টি ইউটিলিটি এই মোট ২০টি ফেরি চলাচল করছে।

গাজীপুর : গাজীপুরে মহাসড়কে খানাখন্দ এবং পুলিশ ও সড়ক মেরামতকারী বিভিন্ন প্রকল্পের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে প্রতিদিন যানজট হচ্ছে। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের কুনিয়া, বাসন সড়ক, মালেকের বাড়ী, সাইনবোর্ড, ভোগড়ার স্থানে স্থানে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া ভারি বৃষ্টিপাত হলে ওই মহাসড়কের বাসন সড়কের উত্তরে ভোগড়া বাইপাস মোড়, ভোগড়া চৌধুরীবাড়ীর সামনে, চান্দনা-চৌরাস্তা মোড় (টাঙ্গাইল সড়কের অংশে) প্রায় হাঁটুপানি জমে যায় এবং ওই এলাকায় যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হয়। তা ছাড়া তেলিপাড়ায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ওপর ট্রাকস্ট্যান্ড থাকায় এবং সেখানে একাধিক লেন দখল করে ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ড ভ্যানসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী গাড়ি অবস্থান নেওয়ায় সারা বছরই সেখানে কমবেশি যানবাহন চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।

গাজীপুর ট্রাফিক বিভাগের সিনিয়র এএসপি সালেহ উদ্দিন আহমেদ জানান, সম্প্রতি বৃষ্টিপাতের কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস, ভোগড়া বাইপাস মোড়ের দক্ষিণে বাসন সড়ক, ভোগড়া ইউনিয়ন পাম্পের আশপাশ, মালেকের বাড়ী, টঙ্গীর চেরাগ আলী, আনারকলি এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে মহাসড়কে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। এগুলো দ্রুত মেরামত না হওয়ায় যানবাহন ধীরে চলতে গিয়ে প্রায়ই জটের সৃষ্টি করছে। এ ছাড়া সম্প্রতি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে টঙ্গীর আনারকলি এলাকায় মহাসড়ক উঁচুকরণের কাজ ও তারগাছ মার্কু ফিলিং স্টেশনের সামনে কার্পেটিং কাজের কারণে যানজট হচ্ছে। অন্যদিকে ঠিকাদার ও প্রকৌশলীদের মধ্যে সমন্বয় না থাকার অভিযোগও রয়েছে।

সর্বশেষ খবর