শিরোনাম
শনিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

টার্গেট পশুর হাট

মির্জা মেহেদী তমাল

টার্গেট পশুর হাট

যশোর থেকে গাবতলীর হাটে এসেছেন শাহ আলম বেপারী। তিনি ১২টি গরু নিয়ে এসেছেন। তার সঙ্গে শাজাহান, দ্বীন-আলী, আমজাদ হোসেনও গরু নিয়ে গাবতলীর হাটে এসেছেন। প্রতিবছর তারা কোরবানির হাটে গাবতলী আসেন। শাহ আলম বেপারী বলেন, ‘আমি গত বছর একবার ধরা খাইছি। একলোক একটা গরু কিনে নিয়ে গেছে, বেশি ধরাধরি করেনি। ৫২ হাজার টাকায় একটা গরু বিক্রি করেছিলাম। একটা বান্ডিলে। ওর মধ্যে ৯ হাজার টাকা আসল ছিল। বাকি সব জাল। আমি ধরতে পারিনি। পরে বাড়িতে গিয়ে ব্যাংকে জমা দেওয়ার সময় জানছি। এবার খুব সাবধান আছি। টাকা একটা একটা করে বেছে বেছে নিব।’ তার সঙ্গে কথা শেষ করে কথা হয় তিনটি গরু নিয়ে একটি তাঁবুর নিচে দাঁড়িয়ে থাকা  বেপারি সরবত আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা বুথে গিয়ে লেনদেন করব। আগে থেকেই শুনে আসছি, পশুর হাটে খারাপ মানুষরা জাল টাকা নিয়ে আসে। আমরা সতর্ক আছি।’

কোরবানির ঈদ উপলক্ষে পশুর হাট টার্গেট করে তৎপর হয়ে উঠেছে জাল টাকার কারবারিরা। ঢাকা ও আশপাশের এলাকার অন্তত ৩০টি চক্র প্রচুর পরিমাণ জাল নোট ছড়িয়ে দিচ্ছে বাজারে। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের সুবিধা নিয়ে তারা এমন নিখুঁত নোট তৈরি করছে যে, সাধারণভাবে সেগুলোকে জাল বলে ধরার উপায় নেই। ফলে পশুর হাটসহ ঈদবাজারের অন্যান্য কেনাকাটার ক্ষেত্রে এ ধরনের নোট হাতবদল হতে পারে খুব সহজে। গোয়েন্দারা এরই মধ্যে এমন দুটি চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেফতার করেছেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মবর্তা বলেন, ঈদের মতো বড় উৎসব টার্গেট করে বেশি তৎপর হয়ে ওঠে জাল নোট চক্রের সদস্যরা। বিষয়টি মাথায় রেখে গোয়েন্দারাও আগে থেকেই নজরদারি শুরু করেছেন। জাল নোট নিয়ে সম্প্রতি সাধারণ মানুষের বিড়ম্বনার শিকার হওয়ার ঘটনা বেড়েছে। রাজধানীর খিলক্ষেতের বাসিন্দা মেহেদী হাসান জানান, গত সপ্তাহে তিনি ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার সময় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তার দেওয়া একটি এক হাজার টাকার নোটকে জাল বলে শনাক্ত করেন। এতে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন তিনি। ওই নোটটি কেনাকাটার সময় তার হাতে আসে। প্রায় একই পরিস্থিতিতে পড়েছিলেন সাইফুর রহমান। তিনি কারওয়ান বাজারে সবজি কিনে টাকা দিলে সেটি জাল বলে ফেরত দেন দোকানি। সাইফুর জানান, নোটটি দেখে সাধারণভাবে জাল হিসেবে শনাক্ত করতে পারেননি তিনি। ঈদ মৌসুমে তৎপর ৩০ চক্র : গোয়েন্দাদের তথ্য মতে, ঢাকা ও আশপাশের জেলায় জাল টাকা তৈরির ৩০ থেকে ৩৫টি চক্র তৎপর হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে তারা নিজেদের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বেশ কিছু জাল নোট বাজারে ছড়িয়ে দিয়েছে। কিছু নোট ধরা পড়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে। গত দুই দিনে রাজধানীর শ্যামপুর ও মুগদা এলাকায় জাল টাকা বাজারজাতকালে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে তিনজন। তাদের কাছ থেকে ৫৩ হাজার ৫০০ টাকার জাল নোট উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো, আল আমিন (২৪), আ. রাজ্জাক (৩৫) ও রুহুল আমিন (৩১)। তবে ঈদবাজার জাল টাকা মুক্ত রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চলছে বিশেষ নজরদারি। প্রতারকদের ধরতে অভিযানে নেমেছেন তারা। ঈদবাজারে লেনদেনের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে নাগরিকদের পরামর্শ দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। ডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, জাল নোট তৈরির কারিগরি বিষয়টি তেমন জটিল নয়। এ কারণে অর্ধশিক্ষিত, এমনকি অশিক্ষিতরা অল্প সময়ে বেশি টাকা আয়ের উপায় হিসেবে জাল নোট তৈরি করছে। একটি চক্র ধরা পড়লে আরেক চক্র কাজ শুরু করছে। আবার জামিনে মুক্ত হয়ে পুরনোরাও ফিরছে একই পেশায়। তিনি জানান, জাল নোট তৈরির প্রতিটি চক্রে ‘কোম্পানি’ নামে পরিচিত একজন ব্যক্তি থাকে, যার কাছে জাল টাকা ছাপার সব সরঞ্জাম রয়েছে। একজন কোম্পানির দুজন ‘হ্যান্ডেল’ বা সহযোগী থাকে। সহযোগীদের কাজ হলো কম্পিউটার প্রিন্টারে কাগজ দেওয়া এবং প্রিন্ট বের হলে তা টাকার আকারে কেটে গুছিয়ে বান্ডিল করে রাখা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর