সোমবার, ২০ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

ড্রিমলাইনার এখন ঢাকায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

ড্রিমলাইনার এখন ঢাকায়

ঘড়িতে তখন বিকাল ৫টা ২০ মিনিট। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সংবলিত নতুন বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ ‘আকাশবীণা’ রানওয়ে দিয়ে এগিয়ে আসছে। আর রানওয়ের দুই পাশ থেকে ফায়ার সার্ভিসের দুটি গাড়ি থেকে হোসপাইপে নানা ভাবে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছে। এভাবেই ওয়াটার ক্যানন স্যালুটের মাধ্যমে স্বাগত জানানো হয় সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সংবলিত নতুন বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ ‘আকাশবীণা’-কে। গতকাল দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে ড্রিমলাইনার ‘আকাশবীণা’ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে স্পর্শ করে। বিজি-২৮০১ ফ্লাইটটি যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটল পেনফিল্ড থেকে কোনো যাত্রাবিরতি ছাড়াই টানা সাড়ে ১৪ ঘণ্টা উড়ে ঢাকায় আসে। বোয়িংয়ের ক্যাপ্টেন রিচার্ড এম ডেনটন, ক্যাপ্টেন চার্লি ক্রিস্টেনসন, বিমানের ক্যাপ্টেন ফজল ও ফার্স্ট অফিসার আনিতা রহমান ফ্লাইটটি পরিচালনা করেন। এর আগে সিয়াটলে বোয়িং ফ্যাক্টরি থেকে ড্রিমলাইনার বিমানটি গ্রহণ করেন বিমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) ইনামুল বারীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এ এম মোসাদ্দিক আহমেদ, পরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম, পরিচালক (গ্রাহক সেবা) আলী আহসান, পরিচালক (অর্থ) বিনীত সুধ, পরিচালক (পরিকল্পনা) এয়ার কমোডর মোহাম্মদ মাহবুব জাহান খান (অব.), পরিচালক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যাটেরিয়াল ম্যানেজমেন্ট গ্রুপ ক্যাপ্টেন কে এইচ সাজ্জাদুর রহিম (অব.), পরিচালক বিপণন ও বিক্রয় আশরাফুল আলম, মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজসহ বিমান ও সিভিল এভিয়েশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। বিমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল ইনামুল বারী (অব.) আকাশবীণা থেকে নেমে এসে সাংবাদিকদের বলেন, আগামী ১ সেপ্টেম্বর বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সংবলিত সম্পূর্ণ নতুন বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার বিমানের প্রথম ফ্লাইট উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার পছন্দে এর নামকরণ হয়েছে ‘আকাশবীণা’। ‘আকাশবীণা’র মধ্য দিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বহরে উড়োজাহাজের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫টি। বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এ এম মোসাদ্দিক আহমেদ বলেছেন, ‘ড্রিমলাইনার আকাশবীণার মধ্য দিয়ে নতুন মাইলফলক যুক্ত হলো বিমানে। যাত্রীদের নিরাপদ ও আরামদায়ক সেবা দিতে বিমান সচেষ্ট। অন্য এয়ারলাইনসগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নতুন উড়োজাহাজ বিমানকে সহায়তা করবে। যাত্রীদের নিরাপদ ভ্রমণ ও বিমানের মুনাফা বৃদ্ধিতে ড্রিমলাইনার নতুন মাত্রা যোগ করবে।’

বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ জানান, ড্রিমলাইনার দিয়ে প্রাথমিকভাবে ঢাকা-সিঙ্গাপুর ও ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। আগামী ১ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর হবে বিমানটির প্রথম বাণিজ্যিক যাত্রা। ট্যাক্স ও চার্জ বাদে ঢাকা-সিঙ্গাপুর-ঢাকা রুটে ইকোনমি ক্লাসের ভাড়া ২০০ মার্কিন ডলার এবং ঢাকা-কুয়ালালামপুর-ঢাকা রুটে ইকোনমি ক্লাসের ভাড়া পড়বে ২৯০ মার্কিন ডলার। ২০০৮ সালে মার্কিন বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং কোম্পানির সঙ্গে ১০টি নতুন বিমান ক্রয়ের জন্য ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ইউএস ডলারের চুক্তি করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। ইতিমধ্যে বহরে যুক্ত হয়েছে ছয়টি বিমান। বাকি চারটি বিমান হলো বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার। এর প্রথমটি গতকাল বহরে যুক্ত হলো। বাকি তিনটির একটি ২০১৮ সালের নভেম্বরে ও সবশেষ দুটি ড্রিমলাইনার আসবে আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে। টানা ১৬ ঘণ্টা উড়তে সক্ষম ড্রিমলাইনার চালাতে অন্যান্য বিমানের তুলনায় ২০ শতাংশ কম জ্বালানি লাগবে। এটি ঘণ্টায় ৬৫০ কিলোমিটার বেগে উড়তে সক্ষম। বিমানটির ইঞ্জিন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান জেনারেল ইলেকট্রিক (জিই)। বিমানের শব্দ কমাতে ইঞ্জিনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে শেভরন। বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হবে ইলেকট্রিক ফ্লাইট সিস্টেমে। কম্পোজিট ম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরি হওয়ায় এই বিমান ওজনে হালকা। ভূমি থেকে বিমানটির উচ্চতা ৫৬ ফুট। দুটি পাখার আয়তন ১৯৭ ফুট। এর মোট ওজন ১ লাখ ১৭ হাজার ৬১৭ কিলোগ্রাম, যা ২৯টি হাতির সমান! এর ককপিট থেকে টেল (লেজ) পর্যন্ত ২৩ লাখ যন্ত্রাংশ রয়েছে। আকাশবীণায় আসন সংখ্যা রয়েছে ২৭১টি। এর মধ্যে বিজনেস ক্লাস ২৪টি আর ২৪৭টি ইকোনমি ক্লাস। বিজনেস ক্লাসের আসনগুলো বানিয়েছে অ্যাসটেলা। আর ইকোনমি ক্লাসের আসনগুলো হেইকোর বানানো। বিজনেস ক্লাসে ২৪টি আসন ১৮০ ডিগ্রি পর্যন্ত সম্পূর্ণ ফ্ল্যাটবেড হওয়ায় যাত্রীরা আরমদায়কভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন। দুই পাশের প্রত্যেক আসনের পাশে রয়েছে বড় আকারের জানালা। একই সঙ্গে জানালার বোতাম টিপে আলো নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। জানালা থেকে শুরু করে কেবিনেও রয়েছে মুড লাইট সিস্টেম। ফলে যাত্রীরা সহজেই পরিবর্তন করতে পারবেন লাইটিং মুড। দীর্ঘ সময় ভ্রমণেও যাত্রীরা যেন ক্লান্তি অনুভব না করেন সে জন্য এর ভিতরে এয়ার কম্প্রেসার সিস্টেম অন্যান্য বিমানের তুলনায় উন্নত।

ড্রিমলাইনারে ইন-ফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট (আইএফই) সেবার জন্য প্যানাসনিক এভিওনিকস করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি করেছে বিমান। প্রতিটি আসনের সামনে প্যানাসনিকের এলইডি এস-মনিটর রয়েছে। মনিটরে বিবিসি, সিএনএনসহ ৯টি টিভি চ্যানেল দেখা যাবে। একই সঙ্গে ড্রিমলাইনারের ইন-ফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট সিস্টেমে (আইএফই) থাকবে ১০০টির বেশি ক্ল্যাসিক থেকে ব্লকবাস্টার চলচ্চিত্র। এ ছাড়া রয়েছে বিমানের জন্য বিশেষভাবে নির্মিত ভিডিও গেমস। বিমানটি যে স্থানের ওপর দিয়েই যাবে, যাত্রীদের সামনে তখন স্ক্রিনে দেখা যাবে থ্রিডি ম্যাপ। একই সঙ্গে উঠে আসবে সেই স্থানের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি। অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৩ হাজার ফুট দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময়ও ওয়াইফাই সুবিধা পাবেন যাত্রীরা। বিমানে ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে প্রত্যেক যাত্রী ১৫ মিনিটের জন্য বিনামূল্যে ১০ মেগাবাইট ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর