সোমবার, ২০ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

রাজধানীতে জমেছে পশুর হাট

মোস্তফা কাজল ও আলী আজম

রাজধানীতে জমেছে পশুর হাট

কোরবানির হাটগুলোতে ভরে গেছে বাহারি রঙের দেশি গরু-ছাগল ও মহিষে। দুই সিটির সব হাটে নামছে গবাদিপশু। এসব হাটে গতকাল থেকে কাঙ্ক্ষিত বেচাকেনা শুরু হয়েছে। এবার গরু-ছাগলের দাম কিছুটা সহনীয় থাকায় পছন্দের কেনাকাটা করেছেন অনেকে। তবে হাটে পৌঁছতে গরু বেপারিরা মহাসড়কের ভয়াবহ যানজটকে দায়ী করছেন। বলছেন, যানজট না কমলে বেপারিদের অনেকের ঈদ কাটবে পথে। এ ছাড়া হাটে গরু মোটা-তাজা করণের গবাদিপশু আছে কিনা গতকাল থেকে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের একটি টিম মনিটরিং করছে। এসব হাটের মধ্যে গাবতলীতে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা গেছে ক্রেতাদের ভিড়। গতকাল এ হাটের প্রধান আকর্ষণ ছিল কুস্টিয়া থেকে নিয়ে আসা কালো মানিক। প্রায় ৪০ মণ ওজনের গরুটির দাম হাঁকা হয়েছে ১২ লাখ টাকা। অন্যটি ছিল ৮ লাখ টাকা দামের উট। ইস্টার্ন হাউজিং হাটে গিয়ে দেখা গেছে গরু, ছাগল ও মহিষে সয়লাব হাট। কমলাপুর হাটে গিয়ে দেখা গেছে ক্রেতা কম। আফতাবনগর হাটে দেখা গেছে মাঝারি সাইজের গরু বেশি বিক্রি হচ্ছে। হাট ইজারাদার ও গবাদি-পশুর বিক্রেতারা অভিযোগ, মহাসড়কের যানজটের কারণে কয়েকশ গরু ভর্তি ট্রাক আটকা পড়েছে। গাবতলী হাট : রাজধানীর আসাদগেট এলাকা থেকে গাবতলীর হাটে গরু কিনতে এসেছেন হাজী মানিক আলী নামে এক ব্যবসায়ী। বিক্রেতা প্রায় সাড়ে ৪ মণ ওজনের একটি দেশি ষাঁড়ের মূল্য হাঁকছেন ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। মানিক আলী জানান, বিক্রেতারা গরুর বেশি দাম চাচ্ছেন। গতকাল সকালে গাবতলী হাটে এমন চিত্র দেখা গেছে। জামাল হোসেন নামে আমিনবাজারের এক ক্রেতা বলেন, যে বাজেট করে এসেছি, সেই দামের চেয়ে কম দামে গরু পাওয়া যাচ্ছে। দেখা গেছে, অনেক বেপারি গরুর দাম ছাড়ছেন না। এ ছাড়া ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে ছোট ও মাজারি সাইজের দেশি ষাড় গরু। মাদারীপুর থেকে ছয়টি বড় সাইজের গরু নিয়ে গাবতলীতে এসেছেন নাজিম মিয়া। তার গরুগুলোর দাম ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার মধ্যে। দুই দিন আগে ঢাকায় এলেও গতকাল পর্যন্ত একটি গরুও বিক্রি হয়নি। এদিকে হাটে উটের দামও চড়া। বিক্রেতারা প্রায় ১০ কেজি ওজনের ছাগলের দাম চাচ্ছেন ১২-১৪ হাজার টাকা। আর ভারতের রাজস্থানের উট পাওয়া যাচ্ছে ৮ লাখ টাকার মধ্যে। চাহিদা বেশি মাঝারি গরুর : কোরবানির পশুর হাটে গরুর চাহিদা বেশি হলেও বড় এবং ছোট গরুর প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ কম। সাধ ও সাধ্যের বিচারে তাই মাঝারি গরুই নিতে চাচ্ছেন বেশিরভাগ ক্রেতা। রাজধানীর গাবতলীর গবাদি পশুরহাটে গিয়ে আরও দেখা গেছে, বড় গরুর বেপারিরা কিছুটা উদ্বিগ্ন। তারা বলছেন, ইনজেকশন দেওয়া হাইব্রিড গরুর গরম বেশি লাগে। তবে ছোট বা মাঝারি গরু নিয়ে তারা চিন্তিত নন। এক্ষেত্রে ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকার মধ্যে দাম হলে ক্রেতারা বেশি সাড়া দিচ্ছেন। কুষ্টিয়ার বেপারি টুলি মিঞা জানান, ১৭টি গরু এনেছিলেন। এর মধ্যে ৫টা বিক্রি হয়েছে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায়। মাসুদ মিয়া নামের আরেক বেপারি জানান, ৫টি গরু নিয়ে দুই দিন আগে হাটে এসেছেন। এর মধ্যে একটি বিক্রি হয়েছে। বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা রাহাত কবীর কাফরুল থেকে এসেছেন। তিনি বলেন, মাঝারি গরু কিনতে এসেছি। ইস্টার্ন হাউজিং হাট : এবারও রাজধানীর পল্লবীর (আলব্দী) বকুলতলা মাঠে বসেছে পশুর হাট। গতকাল এ হাট ঘুরে দেখা যায়, গরু নিয়ে আসা বিক্রেতারা কিছুটা অলস সময় কাটাচ্ছেন। কেউ গরুর শরীর পানি দিয়ে ধুয়ে কাপড় দিয়ে মুছে দিচ্ছেন। কেউ খড়কুটোর সঙ্গে ভুসি মিশিয়ে খাবার দিচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা এই গরু বিক্রেতারা রাত্রিযাপন করেন রাস্তার পাশেই। পলিথিনের সামিয়ানা টানিয়ে গরুকে রক্ষা করছেন রোদ-বৃষ্টি থেকে। নিজেরাও আশ্রয় নিয়েছেন সেখানে মাঠের পাশে এক সামিয়ানার নিচে। কথা হয় মোকলেছ নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি বলেন, যশোর থেকে এসেছেন। পাঁচটি ট্রাকে করে ৬২টি গরু নিয়ে এসেছেন সাহাজ উদ্দিন নামের অপর এক ব্যাপারি। তিনিই তাকে এনেছেন সঙ্গে করে রান্নার কাজ করার জন্য। এ হাটের ভিতরে ছাড়াও আশপাশের অনেকে বেড়িবাঁধ সড়কের দুই পাশে বাঁশ পুঁতে খুঁটি করে সেখানে গরু বেঁধে রেখেছেন ব্যাপারিরা। এ মাঠের পশ্চিমে ইস্টার্ন হাউজিং বাজার থেকে বেড়িবাঁধের নতুন রোড পর্যন্ত ব্যাপারিরা গরু নিয়ে অবস্থান নিয়েছেন। এ ছাড়া ফরিদপুরের আটরশি থেকে এসেছেন শহিদুল ইসলাম নামের এক ব্যাপারি। তিনিও ২৩টি গরু এনেছেন। শহিদুল জানায়, গতকাল ভোরে ট্রাকে এসেছেন। গতকাল বিকাল পর্যন্ত তিনটি গরু বিক্রি হয়েছে। এবার গরুর দাম কেমন যাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবার দাম ভালো পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার আলামপুর ইউনিয়ন থেকে এসেছেন মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, এক বছর আগে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে গরু কিনেছি। প্রতিটি গরুর পেছনে কম করে হলেও ২০ হাজার টাকা খরচ। আশা করছি ভালো দাম পাওয়া যাবে। কমলাপুর গরুর হাট : কমলাপুর গরুর হাটে প্রচুর দেশি গরু-ছাগল এসেছে। তবে হাট এখনো জমে ওঠেনি। তবে হাট সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামীকাল (আজ) থেকে আশা করছি প্রচুর গরু-ছাগল বিক্রি হবে। বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের দু-এক দিন আগে গরু ভালো দামে বিক্রি করতে পারবেন। কমলাপুর ফলপট্টি ১ নম্বর কাউন্টারের হাসিল আদায়কারী জুবায়ের হোসেন জানান, হাটে প্রচুর দেশি গরু এসেছে। কিন্তু বেচাকেনা এখনো জমে ওঠেনি। আশা করছি কাল (আজ) থেকে গরুর হাট জমে উঠবে। কুষ্টিয়ার মিরপুর থেকে আসা মুসা মণ্ডল জানান, শনিবার তিনি মাঝারি সাইজের চারটি গরু নিয়ে হাটে এসেছেন। দাম কম বলে মনে হচ্ছে। আরেকদিন দেখি। মেহেরপুরের গাংনি থেকে আসা রবিউল ইসলাম জানান, শুক্রবার তিনি একটু বড় সাইজের ১০টি গরু নিয়ে এসেছেন। দেড় লাখ টাকা বা তার একটু কমবেশি হলে বিক্রি করব। আফতাবনগর গরুর হাট : আফতাবনগর গরুর হাটে ছোট-মাঝারি-বড় সব ধরনের গরু এসেছে। তবে মাঝারি সাইজের গরু বিক্রি হচ্ছে বেশি। যার দাম ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা। বেশির ভাগই দেশি গরু। কুষ্টিয়া থেকে ৩৪টি খাসি নিয়ে আসা ইয়াসিন জানান, এলাকায় খাসি পালন করে এবার ঢাকায় আনা হয়েছে। এখনো বিক্রি করতে পারিনি। খাসি কিনতে আসা সোলাইমান জানান, গত বছরের তুলনায় এবার খাসির দাম কম। গরু কিনতে আসা হানিফ জানান, গরুর দাম বেশ চড়া। গতবার যেই গরু ৫০ হাজার টাকায় পাওয়া গেছে এবার তা ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা। বিক্রেতা মিন্টু বলেন, তিনি ৩৫টি গরু নিয়ে এলেও বিক্রি করেছেন মাত্র ৫টি। চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা কালাচান ও মতিয়ার জানান, তারা ৪০টি গরু নিয়ে আসছেন। তবে কয়েকটি বিক্রি করে ভালো দাম পেয়েছেন।

সর্বশেষ খবর