মঙ্গলবার, ২১ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

ঈদ ঘিরে কড়া নিরাপত্তা

বিশেষ প্রতিনিধি

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আছাদুজ্জামান খান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী এবং ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) মো. আছাদুজ্জামান মিয়া গতকাল দুপুরে রাজধানীর গাবতলী বাসটার্মিনাল এবং গাবতলী পশুর হাট পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা যাত্রী, বাস চালক, পশু ক্রেতা-বিক্রেতা এবং হাট ইজারাদারদের সঙ্গে কথা বলেন। বাস টার্মিনালে যাত্রীরা অভিযোগ করেন কাউন্টারে অতিরিক্ত টাকা ছাড়া টিকিট মিলছে না। নিকট দূরত্বের যাত্রীরা পড়েছেন আরও বিপাকে। ৪০-৬০ টাকার ভাড়া নেওয়া হচ্ছে দেড়শ-দুইশ টাকা। পাশাপাশি কাউন্টারে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগও করেন। বাস টার্মিনাল ও পশুর হাট পরিদর্শন শেষে মন্ত্রী বলেন, ঈদের সময় সবাই বাড়ি যায়। ঈদে ঘরমুখো মানুষ যাতে অস্বস্তিতে না পড়ে, তারা যেন সুন্দর মতো পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে পারে সে চেষ্টা করা হচ্ছে। কোথাও কোথাও টিকিটের স্বল্পতা রয়েছে।

ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা ও পরিবহন নৈরাজ্যের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, লাখ লাখ মানুষ গাবতলীতে আসছে। বাস আসতেও সময় লাগছে। আশা করছি, সময়মতো সবাই গন্তব্যে যেতে পারবে। রোজার ঈদে এ সমস্যা না থাকলেও কোরবানিতে হচ্ছে। একমুখী চলাচলের ব্যবস্থার পরও গরুর রাস্তা পারাপার ও গরুর গাড়ি চলাচলে একটু সমস্যা তো হচ্ছেই।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক আছে। কোথাও কোনো অপ্রিয় ঘটনা ঘটেনি। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। তিনি ঈদুল আজহা উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নেওয়া পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানান। আইজিপি বলেন, ঈদকে সামনে রেখে পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চাঁদাবাজি এবং কালোবাজারির ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আছে। ঘরমুখো মানুষের নিরাপদ যাতায়াতের জন্য সড়ক, রেল ও নৌপথে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিরাপত্তায় নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতা করার জন্য তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান।

পাঁচ স্তরের নিরাপত্তায় জাতীয় ঈদগাহ : জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামাতে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একই সঙ্গে রাজধানীর সব ঈদ জামাতকে ঘিরে সমন্বিত, সুদৃঢ় ও সুবিন্যস্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। প্রতি বছরই ঈদ জামাতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা থাকে, এবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। সব ঈদের জামাতে আয়োজকদের সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। গতকাল জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সুস্পষ্ট কোনো থ্রেট নেই, তবে আগাম পরিস্থিতি বিবেচনায় পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকবে। সমগ্র ঈদগাহ এলাকা ও এর আগমন-বহির্গমন পথসহ চারপাশের এলাকা সিসিটিভির আওতায় থাকবে। ডিএমপির কন্ট্রোলরুম থেকে সিসি ক্যামেরাগুলো সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হবে। তিনটি সড়ক ব্যবহার করে ঈদগাহে প্রবেশ করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, শিক্ষাভবন, মৎস্যভবন ও প্রেস ক্লাবের সামনের সড়ক দিয়ে প্রবেশ করতে হবে। এ সময় আর্চওয়ে-মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে সবাইকে তল্লাশি করা হবে। মূল গেটেও আর্চওয়ে থাকবে। ইমামের পেছনে ভিআইপিদের জন্য আলাদা নামাজের ব্যবস্থা থাকবে এবং সেখানে প্রবেশের সময় আর্চওয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। স্পেশাল ব্রাঞ্চ ও ডিএমপির ডগ স্কোয়াডের মাধ্যমে পুরো এলাকা সুইপিং করা হবে।

যে কোনো সময় যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সোয়াত ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট প্রস্তুত থাকবে। প্রস্তুত থাকবে ফায়ার সার্ভিস ও মেডিকেল টিম।

মুসল্লিদের জায়নামাজ এবং প্রয়োজনে ছাতা ছাড়া অন্যকিছু না আনার আহ্বান জানিয়ে কমিশনার বলেন, গেটে দীর্ঘ লাইন সৃষ্টি হলেও সবাইকে ধৈর্য সহকারে পুলিশকে সহযোগিতা করুন। প্রয়োজনে মুসল্লিদের সঙ্গে আনা জায়নামাজ কিংবা ছাতা খোলেও পুলিশ সদস্যরা তল্লাশি করবেন। ঈদগাহ এলাকায় ওয়াচ টাওয়ার থাকবে, সেখান থেকে পুরো এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হবে।

ঈদ উপলক্ষে এখনো নগরীর কোথাও ছিনতাই বা অজ্ঞানপার্টির তৎপরতার খবর পাওয়া যায়নি দাবি করে তিনি বলেন, এবার রাজধানীর কোথাও অনুমোদিত গরুর হাট বসতে দেওয়া হয়নি। প্রায় এক কোটি মানুষ রাজধানী থেকে বের হবে, এ জন্য ঢাকার বহির্গমন পথগুলোতে পুলিশের নজরদারি রয়েছে।

ফাঁকা রাজধানীর নিরাপত্তা প্রসঙ্গে কমিশনার বলেন, অনেক মানুষ রাজধানী ছেড়ে যাবে। ফাঁকা ঢাকা ও শপিং মলগুলোর নিরাপত্তায় পুলিশের টহল টিম ও চেকপোস্ট বাড়ানো হবে। ঈদ কেন্দ্রিক সার্বিক নিরাপত্তায় ডিএমপির ১৪ হাজার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর