শনিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

পুঁজিবাজারে সুযোগ নেই মার্কিন বীমা কোম্পানি মেটলাইফের

জানিয়ে দিল আইডিআরএ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি মেটলাইফ দেশের শীর্ষ জীবন বীমা কোম্পানি হলেও এটিকে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা যাবে না। সরকার এ ব্যাপারে আগ্রহী হলেও বাদ সেধেছে প্রচলিত বীমা আইন। ফলে পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুঁজিবাজারে বহুজাতিক এই কোম্পানিটি তালিকাভুক্ত হলেও বাংলাদেশে সে সুযোগ মিলছে না।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, বাংলাদেশের একমাত্র বিদেশি বীমা কোম্পানি মেটলাইফকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার কোনো সুযোগ নেই। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবের কাছে গত ৭ আগস্ট এ চিঠিটি পাঠানো হয়।

মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর দাবি, বাংলাদেশে বীমা ব্যবসা করতে এক পয়সাও এ দেশে নিয়ে আসেনি মেটলাইফ। অথচ কোটি কোটি ডলার মুনাফা অর্জন করে নিয়ে যাচ্ছে। এমনকি বীমা খাতে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে কোনো ভূমিকা রাখছে না এই কোম্পানি। বাংলাদেশে মেটলাইফ শুধুই তাদের পণ্য বিপণন করছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রগুলো জানায়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত না থাকায় এটির ওপর বাংলাদেশের কোনো মালিকানাও নেই। তাই কোনো বিনিয়োগ না করেই প্রতি বছর কোটি ডলার মুনাফা যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সে কারণেই কোম্পানিটিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির জন্য আইডিআরএকে উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছিল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইডিআরএর মেম্বার গোকুলচাঁদ দাস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিদেশি বীমা কোম্পানির জনগণের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের কোনো সুযোগ নেই। বীমা আইন, ২০১০-এর তফসিল-১-এর (ক) (অ) এবং (আ)-তে এই বিধান দেওয়া আছে। সে কারণে সরকারের আগ্রহ থাকলেও মেটলাইফকে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা যাচ্ছে না। তবে প্রচলিত আইন পরিবর্তন করা হলে সুযোগ পাওয়া যেতে পারে বলে তিনি জানান। আইডিআরএর কর্মকর্তারা জানান, বীমা আইন, ২০১০ অনুযায়ী জীবন বীমা বা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ব্যবসার জন্য ন্যূনতম ৩০ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন লাগে। দেশীয় কোম্পানির ক্ষেত্রে এই পরিশোধিত মূলধনের ৬০ শতাংশ থাকবে উদ্যোক্তাদের হাতে এবং বাকি ৪০ শতাংশ শেয়ার থাকবে জনগণের কাছে। আর বিদেশি কোম্পানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বাইরে থেকে তহবিল স্থানান্তর করে এনে সেই পরিশোধিত মূলধনের পুরোটা বাংলাদেশে জমা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে জনগণের কাছ থেকে অর্থ অংগ্রহের সুযোগ নেই আইনে। জানা গেছে, বিদেশি এই বীমা কোম্পানিটি বাংলাদেশে ১৯৫২ সাল থেকে ব্যবসা করছে। ২০১০ সালে সাড়ে ১৫ বিলিয়ন ডলারে কোম্পানিটি কিনে নেয় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক জীবন বীমা কোম্পানি মেট্রোপলিটন লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি বা মেটলাইফ। তখন এর নতুন নামকরণ হয় মেটলাইফ আলিকো। ২০১৫ সালের শুরুতে বাংলাদেশে কোম্পানিটি নাম পরিবর্তন করে নামকরণ করে মেটলাইফ। দেশের জীবন বীমার বাজারের প্রায় ৪০ শতাংশ এখন মেটলাইফের দখলে। বাংলাদেশে কোম্পানিটির গ্রাহকসংখ্যা ১০ লাখ ও বীমা পলিসির সংখ্যা ১২ লাখেরও বেশি। সূত্র জানায়, এজেন্সি হিসেবে ব্যবসা শুরু করায় বীমা কোম্পানির জন্য পরিশোধিত মূলধনের যে ৩০ কোটি টাকা বিদেশ থেকে এনে বাংলাদেশে জমা রাখার কথা সেই শর্ত পূরণ হয়নি মেটলাইফের ক্ষেত্রে। এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ২০১৩ সালে অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠায় আইডিআরএ।

ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মেটলাইফ ২০০০ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে কার্যত কোনো বিনিয়োগ ছাড়াই বাংলাদেশ থেকে ৫ কোটি ৩০ লাখ ৬০ হাজার ডলার (ওই সময়ের হিসাবে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা) মুনাফা নিয়ে গেছে। কোম্পানিটি ২০১০ ও ২০১১ সালেও ভালো মুনাফা করে। এ দুই বছরের মোট মুনাফা থেকে ২ কোটি ২০ লাখ ডলার (প্রায় ১৮০ কোটি টাকা) যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর জন্য মেটলাইফ আইডিআরএর কাছে আবেদন করেছিল। তবে সে সময় পুরো টাকা না দিয়ে পরিশোধিত মূলধনের শর্ত হিসেবে ২০১০ সালের মুনাফা থেকে ৩০ কোটি টাকা কেটে রাখে আইডিআরএ।

সর্বশেষ খবর