মঙ্গলবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

মহাসড়কে নয় অটো ইজিবাইক

সর্বোচ্চ গতি ৮০ কিলোমিটার, সড়ক উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ১৮ সিদ্ধান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

মহাসড়কে নয় অটো ইজিবাইক

রাজধানীসহ সারা দেশের সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অন্তত ১৮টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব সিদ্ধান্তের দ্রুত বাস্তবায়নের ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে। মহাসড়ক থেকে ভটভটি, নসিমন, করিমন, অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত যানবাহনের চলাচল বন্ধে আরও কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ৮০ কিলোমিটার গতির ওপরে মহাসড়কে যানবাহন চালানোর ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। গতকাল সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন বিভাগের সভাকক্ষে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠক শেষে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, সড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম, পুলিশের মহাপরিদর্শক জাবেদ পাটোয়ারী, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনার, হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি, বিভিন্ন বিভাগীয় ডিআইজি, কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি এবং পরিবহন মালিক নেতারা।

সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা জানিয়ে বলেন, ‘সড়ক, মহাসড়ক এবং মহানগরীর পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে আজকের সভা থেকে ১৮টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে—দেশের সড়ক-মহাসড়কে নসিমন, করিমন, ভটভটি, লেগুনা, ইজিবাইক, ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ; যেসব স্থানে বা জেলায় আঞ্চলিক ট্রান্সপোর্ট কমিটি (আরটিসি) নেই, সেসব জেলায় দ্রুত আরটিসি গঠন করতে হবে; প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানের অবৈধ অ্যাঙ্গেল, হুক ও বাম্পার অপসারণের কাজ চলমান আছে, ইতিমধ্যে ৯০ শতাংশ অপসারণ করা হয়েছে; মহাসড়ক থেকে আঞ্চলিক যানবাহন বন্ধে হাই কোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়ন, ইজিবাইক নীতিমালা প্রণয়নে সড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবদুল মালেকের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে, কমিটিকে আগামী ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিবহন খাতকে শিল্প হিসেবে প্রাপ্য সুবিধাদি নিশ্চিত করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রস্তাব বা অনুরোধ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাস, ট্রাকসহ গণপরিবহনের ইকোনমিক রাইফ নির্ধারণে বিআরটিএ এবং বুয়েটের এআরআই কাজ করছে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে রিপোর্ট পেশের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিআরটিএর চলমান ক্রাশ প্রোগ্রাম অব্যাহত থাকবে, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত শুক্রবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বিআরটিএর এই সেবা চলমান থাকবে। বিআরটিএতে নতুন করে আটজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হবে। বর্তমানে ১১ জন কাজ করছেন। আরও জনবল বাড়ানো হবে। রাস্তায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা পর্যন্ত ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে ট্রাফিক বিভাগের চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। জাতীয় মহাসড়কে লেগুনাজাতীয় ধীরগতির গাড়ি চলতে পারবে না এবং চলতে দেওয়া হবে না। ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশার খুচরা যন্ত্র আমদানি নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হবে এবং কারখানা বন্ধে নিয়মিত অভিযান চলবে। অবৈধ যানবাহন ডাম্পিংয়ের জন্য স্থান নির্ধারণ এবং ডাম্পিং গ্রাউন্ড নির্ধারণ করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনা, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জগদীশপুর, সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সড়ক বিশ্রামাগার স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সংখ্যা ক্রমান্বয়ে আরও বাড়ানো হবে। গাড়িতে অননুমোদিত স্টিকার, মনোগ্রাম, ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড লাগানো যাবে না। মহাসড়কে যানবাহনের গতিসীমা ৮০ কিলোমিটার নির্ধারণ করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। মহানগরীর যানবাহন বা বাসের প্রতিযোগিতা বন্ধে কন্ট্রাক্ট সার্ভিস চলবে না এবং ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাসসমূহ রং করে সৌন্দর্য বর্ধন করতে হবে। তবে গতকালের সভায় যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেগুলোর মধ্যে অনেক সিদ্ধান্ত আরও কয়েকবার নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়নে কখনোই কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। বিশেষ করে মহাসড়ক থেকে ভটভটি, নসিমন, করিমন, লেগুনা, অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা তুলে দেওয়ার নির্দেশনা বারবার দেওয়ার পরও এখনো এসব যানবাহন দাপটের সঙ্গে মহাসড়কে চলাচল করছে। শুধু তা-ই নয়, এসব যানবাহন বন্ধে উচ্চ আদালতেরও নির্দেশনা উপেক্ষিত হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর