বুধবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভুটানজুড়ে সুখের ছবি

শিমুল মাহমুদ, থিম্পু (ভুটান) থেকে

ভুটানজুড়ে সুখের ছবি

ভুটানজুড়ে একটাই সুখের ছবি টানিয়ে রেখেছে এ দেশের মানুষ। তা হচ্ছে বাচ্চাসহ তাদের রাজা-রানীর ছবি। আর কোনো ছবি কোথাও দেখা যায় না। হোটেল, রেস্টুরেন্ট, বার, শপিং মলসহ সব পাবলিক প্লেসে বিভিন্ন ভঙ্গির এ একটাই ছবি দেখতে পাওয়া যায়। ভুটানের জনগণ তাদের রাজা-রানীকে খুব ভালোবাসে। শ্রদ্ধা ও সম্মান করে। তাদের কাছে রাজ পরিবার অনেক মর্যাদার।

ভুটানে জীবনযাপনের মান বিচার করা হয় গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেসের (জিএনএইচ) মাধ্যমে। বিশ্ববাসীর মতো গ্রস ডমেস্টিক প্রোডাক্টের (জিডিপি) মাধ্যমে জীবনমানের তুলনা হয় না। ভুটান সরকার জনগণের বস্তুগত ও মানসিক শান্তির কথা বলে। এ বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হয় দেশটির ‘গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস সেন্টার’ থেকে। অধিকাংশ ভুটানবাসী তাদের জীবন নিয়ে সুখী। ভুটানের জনসংখ্যা মাত্র ৮ লাখ। এটি গাজীপুর সিটির জনসংখ্যার অর্ধেকেরও কম। গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটারই ছিল ভুটানের মোট জনসংখ্যার চেয়ে ৩ লাখ বেশি। এই অল্পসংখ্যক মানুষের দেশে সন্ত্রাস, রাহাজানির ঘটনা নেই বললেই চলে। অভাবনীয় শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে নিজেদের দৈনন্দিন কাজ সারে তারা। তাদের মোট ভূখণ্ড ৩৮ হাজার ৩৬৪ বর্গ কিলোমিটার। তাও আবার প্রাকৃতিক বনভূমিতে আচ্ছাদিত। দেশটিতে পলিথিনের ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ। ভুটানের রাষ্ট্রধর্ম বৌদ্ধ। এ ছাড়া হিন্দুধর্মও রয়েছে। আয়ের প্রধান উৎস হাইড্রোলিক পাওয়ারের মাধ্যমে ভারতে বিদ্যুৎ বিক্রি, পর্যটন, কাঠ, সিমেন্ট, কৃষিপণ্য ও হস্তশিল্প। ভুটানের জনগণ দেশের রাজাকে দারুণ ভালোবাসে। ২০০৬ সালে ক্ষমতায় আসেন রাজা জিগমে খেসার ওয়াংচুক। তাঁর সময় থেকে রাজনীতিতে নাটকীয় পরিবর্তন আসতে থাকে। এ পরিবর্তন তাঁর বাবার সময় শুরু হয়। যখন ১৯৮৫ সালে তিনি তাঁর গুরুত্বপূর্ণ কিছু ক্ষমতা ত্যাগ করেন। বর্তমানে সরকারের সব অংশে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২০০৮ সালে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দুটো দল অংশ নেয়। রাজ পরিবারসংশ্লিষ্ট ভুটান পিস অ্যান্ড প্রসপারিটি পার্টি (ডিপিটি) এতে জয়লাভ করে। ২০১৩ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনে জয় পায় বিরোধী দল পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি)। বর্তমান রাজা আমেরিকা ও ব্রিটেনে লেখাপড়া করেন। ২০১১ সালে তিনি বিয়ে করেন। ভুটানের বর্তমান রানী জেটসান পেমা। এ দুজন মানুষ গোটা ভুটানে সবার ভালোবাসার পাত্র। ভুটানের সব চিন্তা এখন জাতীয় সুখকেন্দ্রিক। ১৯৭০-এর দশকে জিডিপির (মোট জাতীয় আয়ের) পরিবর্তে ‘গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস’—জিএনএইচ ধারণাই ছিল সাবেক রাজা জিগমে সিংগে ওয়াংচুকের কর্মের প্রেরণা। এখন আবার সে পথেই হাঁটছে ভুটান। হিমালয় পরিবেষ্টিত ক্ষুদ্র এ দেশটির বিমানবন্দর মাত্র একটি। মোট বাণিজ্যিক বিমানের সংখ্যা দুটি। চীন, ভারত ও নেপালের সীমান্ত দিয়ে ঘিরে থাকা এ দেশটির মানুষের জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য বিষয়গুলোর ব্যবস্থা ও নিয়ন্ত্রণ নিজেরাই করে। ভুটানে টেলিভিশন কেন্দ্র রয়েছে মাত্র একটি। দেশজুড়ে ভারতীয় সব টিভি চ্যানেল দেখা যায়। ভারতীয় হিন্দি সিরিয়াল ভুটানিদের খুব প্রিয়। তবে তাদের ব্যক্তিজীবনে সেসব সিরিয়ালের কোনো প্রভাব নেই। ভালো থাকার জটিল এক মডেল ‘গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস’ আবিষ্কার করে ভালোই আছে ভুটানের মানুষ। এতে আছে চারটি স্তম্ভ— অর্থনীতি, সংস্কৃতি, পরিবেশ ও ভালো ব্যবস্থাপনা। এ চার স্তম্ভ আবার নয়টি উপস্তম্ভে বিভক্ত। তা হচ্ছে— মানসিকভাবে ভালো থাকা না-থাকা, প্রতিবেশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, জীবনমান, সময়ের ব্যবহার, সম্প্রদায়গত অত্যাবশ্যকতা ও ভালো পরিচালনা। এর প্রতিটির আছে নিজস্ব মূল্য নির্ণয়কৃত জিএনএইচ সূচি। সবকিছু বিশ্লেষণ করা হয় ৭২টি সুখ-নির্দেশক চিহ্ন ব্যবহারের মাধ্যমে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর