শুক্রবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

নির্বাচনের আগে মানবাধিকার ও শ্রম পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবে ইইউ

সেপ্টেম্বরে আসবে প্রতিনিধি দল

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের মানবাধিকার ও শ্রম পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে উচ্চ পর্যায়ের একটি টিম পাঠাচ্ছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)। এই টিমটি আগামী ১১ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সফর করবে, যেখানে অংশ নেবেন ইইউর বাণিজ্য, কর্মসংস্থান এবং সামাজিক বিষয়সংক্রান্ত ডিরেক্টর জেনারেল পর্যায়ের তিন কর্মকর্তা। সম্প্রতি বাণিজ্য, পররাষ্ট্র এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়ে এই টিম পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইইউ।

চিঠিতে ইইউ বলেছে, বাংলাদেশ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেওয়া জিএসপি সুবিধার সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী দেশ, যারা ইউরোপের দেশগুলোতে ইবিএ (এভরিথিং বাট আর্মস) পদ্ধতিতে অর্থাৎ অস্ত্র বাদে সব পণ্য রপ্তানিতে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পাচ্ছে। এই জিএসপি সুবিধা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ২০০৬ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত সময়ে ইইউতে বাংলাদেশের রপ্তানি তিনগুণ বেড়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি গন্তব্য হচ্ছে ইইউ, যেখানে দেশটির মোট রপ্তানির প্রায় অর্ধেক পণ্য আসে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ইইউতে ১৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন ইউরোর পণ্য রপ্তানি করেছে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, এই রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ প্রায় ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন ইউরোর সমপরিমাণ শুল্ক সুবিধা পেয়েছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, আমরা গত বছরের ১৬ মার্চ, ৩১ মে এবং ৫ জুলাই চিঠিতে জানিয়েছি যে, ইবিএ পদ্ধতিতে বাংলাদেশকে দেওয়া এই জিএসপি সুবিধা মূলত কয়েকটি মৌল শর্তের ওপর নির্ভরশীল, যার মধ্যে আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুযায়ী মানবাধিকার এবং শ্রম পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্য। চিঠিতে বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কনভেনশন অনুযায়ী সুপারভাইজরি কমিটি শ্রম আইন সংশোধনে যেসব পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়েছিল, সেগুলো নিশ্চিত করার বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থানে বেশ উদ্বিগ্ন ইইউ। সূত্রগুলো জানায়, ইউরোপের দেশগুলোতে পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশ ইবিএ (অস্ত্র ব্যতীত সব পণ্য) পদ্ধতিতে যে জিএসপি সুবিধা পায়, তার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। মানবাধিকার এবং শ্রম পরিবেশ সেই শর্তের অন্যতম। তবে বাংলাদেশে যে টিমটি আসবে তারা মূলত শ্রম পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করবে। জানা গেছে, গত ২৫ জুন বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে যে সাসটেইনেবল কমপেক্ট-এর বৈঠক হয়েছে সেই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যে ইপিজেডের শ্রম আইন সংশোধনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। এ ছাড়া তৈরি পোশাকশিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে কমপক্ষে ১০ শতাংশ শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ দেওয়ার বিষয়েও চাপ রয়েছে ইইউর। এসব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সরকার শ্রম পরিস্থিতির উন্নয়ন করেছে কিনা ইইউর টিমটি সেই বিষয়গুলোই খতিয়ে দেখবে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা জানান, নির্বাচনের আগে ইইউর এই টিম পাঠানোর সঙ্গে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। ইইউর উদ্বেগ মূলত বাংলাদেশের শিশু শ্রম বন্ধ করা এবং তৈরি পোশাকশিল্পে শ্রম পরিবেশ নিয়ে। ইপিজেডে শ্রম আইন সংশোধন নিয়ে তাদের আপত্তি রয়েছে। তারা সেখানে ট্রেড ইউনিয়ন সুবিধা চায়। এরই মধ্যে ইপিজেডে শ্রম আইন সংশোধন করে সেখানে শ্রমিক সংগঠনের সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর শিশু শ্রমের বিষয়ে যে আইএলও কনভেনশন রয়েছে বাংলাদেশ সেটি এখনো রেকটিফাই করেনি। ইইউ যত দ্রুত সম্ভব সেটি  রেকটিফাই করার জন্য বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে।

সর্বশেষ খবর