শনিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগের ভরসা শাহরিয়ার বিএনপিতে টানাটানি

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

আওয়ামী লীগের ভরসা শাহরিয়ার বিএনপিতে টানাটানি

সংসদ নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ। বড় দুই দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা যে যার মতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। চারঘাট ও বাঘা উপজেলা নিয়ে গঠিত রাজশাহী-৬ আসন। এই আসনটিতে এবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভরসা পর পর দুইবারের এমপি শাহরিয়ার আলম। আর বিএনপিতে আছে একাধিক নেতার টানাটানি।

৩৯৪ দশমিক ৬৬ বর্গকিলোমিটার এলাকার এই আসনটি আগে বিএনপির দুর্গ বলে পরিচিত ছিল। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. আলাউদ্দিনকে পরাজিত করে এখানে এমপি নির্বাচিত হন বিএনপির প্রার্থী অ্যাডভোকেট মোকসেদ আলী। ১৯৯১ সালের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের তৎকালীন প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. আলাউদ্দিন পরাজিত হন বিএনপির আজিজুর রহমানের কাছে। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে তিনি আবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইলেও তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। তিনি দল বদল করে বিএনপিতে যোগ দেন এবং মনোনয়ন লাভ করেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ব্রিগেডিয়ার (অব.) আনিছুর রহমানকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন ডা. আলাউদ্দিন। নির্বাচনের পর ডা. আলাউদ্দিন আবার আওয়ামী লীগে ফিরে এলে তার এমপি পদ বাতিল হয়। পরে উপনির্বাচনে ডা. আলাউদ্দিন আওয়ামী লীগের হয়ে বিজয়ী হন। তার মৃত্যুর পর ওই আসনের উপনির্বাচনে মনোনয়ন পান নুরুল ইসলাম ঠাণ্ডু। কিন্তু ১৯৯৭ সালের ওই উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এমপি নির্বাচিত হন চারঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক রায়হানুল হক। ২০০১ সালের নির্বাচনে রায়হান আবার মনোনয়ন পেলেও এবার তিনি পরাজিত হন বিএনপির প্রার্থী কবীর হোসেনের কাছে। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির দুর্গে হানা দিয়ে সেটি আওয়ামী লীগের দখলে নেন শাহরিয়ার আলম। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও তিনি দলের মনোনয়ন পান। এ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন সাবেক এমপি রায়হানুল হক। তবে শাহরিয়ার আলমের কাছে পরাজিত হন তিনি। বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তিনি। বিএনপির দুর্গে হানা দিয়ে আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে এনে দেওয়ায় এবারও মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে শাহরিয়ার আলমের প্রতিই ভরসা রাখছেন স্থানীয় নেতারা। চারঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফকরুল ইসলাম বলেন, দুই উপজেলার রাস্তাঘাট, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির থেকে শুরু করে সবখানেই শাহরিয়ার আলমের উন্নয়নের ছোঁয়া। ফকরুল বলেন, ‘আমি নিজেও আসছে নির্বাচনে মনোনয়ন চাইতাম, যদি শাহরিয়ার আলম না থাকতেন।’ তবে শাহরিয়ার আলমকে মনোনয়ন দৌড়ে কিছুটা বেকায়দায় ফেলতে পারেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক এমপি রায়হানুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দিন লাভলু। সাবেক এমপি রায়হানুল হক বলেন, দলে এখন কোনো শৃঙ্খলা নেই। সবখানে এমপি লীগ চালু হয়েছে। তবে নিজের মনোনয়ন নিয়ে চিন্তিত নন শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, ‘নিজের মনোনয়ন নিয়ে ভাবছি না। উন্নয়নের অগ্রদূত শেখ হাসিনাকে আবার প্রধানমন্ত্রী করতে হবে, সেটা ভেবেই কাজ করছি। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নিঃস্বার্থভাবে মানুষের পাশে আছি।’ আওয়ামী লীগ প্রার্থী নিয়ে যতটা স্বস্তিতে আছে, ঠিক তার বিপরীত অবস্থা বিএনপিতে। এবার এই আসনটিতে মনোনয়ন চান সাতজনের বেশি নেতা। প্রত্যেকে মনোনয়ন পেতে মাঠে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ আসনটিতে বিএনপির হয়ে মনোনয়ন চান চারঘাট উপজেলা পরিষদের দুইবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান আবু সাঈদ চাঁদ, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি বজলুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রমেশ দত্ত, বাঘা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নুরুজ্জামান খান মানিক। বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জানান, মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে শক্ত অবস্থানে আছেন উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সাঈদ চাঁদ ও সাবেক ছাত্র নেতা আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল। মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে আবু সাঈদ চাঁদ বলেন, ‘দেশের কোথাও সরকারবিরোধী আন্দোলন হলে তা চারঘাট-বাঘায়ই হয়েছে। আন্দোলনে যে নির্যাতন আমার ওপর হয়েছে তা দলীয় প্রধানসহ সিনিয়র সব নেতাই জানেন। আশা করি এবার মনোনয়ন পাব। মনোনয়ন পেলে বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত এ আসনটি উদ্ধার করা কঠিন কিছু নয়।’ ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল জানান, দলকে সংগঠিত করতে সব সময় কাজ করেছি। সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে বহু মামলার আসামি হতে হয়েছে। দল যোগ্যতা বিবেচনায় মনোনয়ন দেবে বলে আশা তার। আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী বজলুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার কারণে আসনটিতে দল আমাকে মনোনয়ন দেবে বলে বিশ্বাস করি।’

সর্বশেষ খবর