শনিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

অক্টোবরে চালু হচ্ছে বিশ্বের বৃহৎ বার্ন ইউনিট

মাহবুব মমতাজী

অক্টোবরে চালু হচ্ছে বিশ্বের বৃহৎ বার্ন ইউনিট

চিকিৎসাবিজ্ঞানে আরেকটি ইতিহাস গড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ‘শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট’ নামে বিশ্বের এই সবচেয়ে বড় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে আগামী অক্টোবরে। সম্ভাব্য দিন ধার্য করা হয়েছে ১৩ অক্টোবর। শুধু পোড়া রোগীর চিকিৎসাই নয়, এখানে প্রশিক্ষণ ও গবেষণার ব্যবস্থা থাকবে।

এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার চিকিৎসা সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি আনা শুরু হয়েছে। তবে ব্যবহূত বেশিরভাগ সরঞ্জামাদি আসবে জার্মানি থেকে। এ ছাড়া ইংল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র থেকেও আসবে কিছু। জানা গেছে, চানখাঁরপুলে প্রায় দুই একর জমিতে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিসমৃদ্ধ ১৮ তলা ভবনের এই ইনস্টিটিউটে থাকছে পোড়া রোগীদের জন্য ১০০টি কেবিন। আরও থাকছে ৬০ শয্যাবিশিষ্ট হাইডেফিসিয়েন্সি ইউনিট, ১২টি অপারেশন থিয়েটার এবং অত্যানুধিক পোস্ট অপারেটিভ ওয়ার্ড। এসব পরিচালনার জন্য প্রায় ২ হাজার ২০০ পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। এই বার্ন ইনস্টিটিউট ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন করা হয়। পরের মাসের ২৯ তারিখে মন্ত্রণালয়ে প্রশাসনিক অনুমোদন পায়। ২০১৬ সালের ৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। আর ২৭ এপ্রিল সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর নির্মাণ কাজ শুরু করে। প্রকল্প মেয়াদ অনুযায়ী নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা এ বছর ডিসেম্বরে। কিন্তু মেয়াদের দুই মাস আগেই উদ্বোধন করা হচ্ছে। ছোটখাটো কিছু কাজ বাকি থাকলেও তা শেষ হতে ডিসেম্বর পার হবে না বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পুরাতন ভবনের সঙ্গে একটি ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে সংযোগ স্থাপন করা হবে ইনস্টিটিউট ভবনের সঙ্গে। ঢামেক বার্ন ইউনিট সূত্র জানায়, মাটির নিচে তিনতলা বেজমেন্ট রাখা হয়েছে। গাড়ি পার্কিং ছাড়াও রেডিওলজিসহ আরও কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিভাগ থাকবে সেখানে। তিনটি ব্লকের সমন্বয়ে ইনস্টিটিউটটির একদিকে থাকবে বার্ন ইউনিট, অন্যদিকে প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট এবং আরেক পাশে একাডেমিক ভবন। সরকারি কোনো হাসপাতালে হেলিপ্যাড সুবিধা এখানেই প্রথম। বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইনস্টিটিউটের কাজ প্রায় শেষ। ১৩ অক্টোবর বিকালে উদ্বোধনের সম্ভাব্য দিন ঠিক রাখা আছে। এখানে ব্যবহারের জন্য যন্ত্রপাতি ইতিমধ্যে আসা শুরু করেছে। আগামী এক মাসের মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। সূত্র জানায়, ২০০৫ সালের আগে বাংলাদেশে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে পোস্ট গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি চালু ছিল না। ঢাকা মেডিকেল কলেজের অধীনে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে মাস্টার্স ইন প্লাস্টিক সার্জারি নামে প্রথম চালু করা হয়। সেসময় প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন অধ্যাপক ডা. সাজ্জাদ খোন্দকার, অধ্যাপক ডা. রায়হানা আউয়াল, অধ্যাপক ডা. আইয়ুব আলী এবং অধ্যাপক ডা. কামরুজ্জামান। পরে হাতেগোনা আরও কয়েকজন বের হন। বাংলাদেশে যত মানুষ প্রতিবছর দগ্ধ হয়, সেই তুলনায় চিকিৎসকের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল। অথচ এখন প্লাস্টিক সার্জন দরকার অন্তত ৪০০ জন। কিন্তু আছেন মাত্র ৬৫ জন। তবে ইনস্টিটিউট পুরোপুরি চালু হলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সেই চাহিদা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর