শনিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

বরেন্দ্রের লাল মাটিতে বিদেশি ফলের চাষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

বরেন্দ্রের লাল মাটিতে বিদেশি ফলের চাষ

বরেন্দ্রর খটখটে শুকনো মাটি। তাতেও সবুজের সতেজতা ছড়াচ্ছে মাল্টার বাড়ন্ত গাছগুলো। গোদাগাড়ী উপজেলার মাটিকাটা এলাকায় পাঁচ বিঘা জমিতে মাল্টার বাগান করেছেন সেতাবুর রহমান। এক বছর না যেতেই ফলের ভারে নুয়ে পড়েছে ডালপালা।

শুধু সেতাবুর রহমান নন, তার মতো বহু চাষি বরেন্দ্রর লাল মাটিতে শুরু করেছেন বিদেশি ফলের চাষ। ধানের পাশাপাশি মাল্টা, কমলা, বেদানা, পেয়ারা— এসবের বাগান এখন পুরো বরেন্দ্র অঞ্চলজুড়ে। উৎপাদন, বাজারজাত আর মুনাফা এই তিন স্তরেই রাজশাহীর বরেন্দ্রভূমিতে সম্ভাবনাময় হয়ে উঠেছে বিদেশি ফলের চাষ। ফলে বরেন্দ্র এলাকায় উঁচু জমিতে বাড়ছে বাগানের সংখ্যা। এ অবস্থায় দেশে উৎপাদিত বিদেশি ফলের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখছেন গবেষকরাও। চাষিরা বলছেন, সেচ লাগে না খুব বেশি, নিতে হয় না তেমন বাড়তি যত্ন। ফলে রাজশাহীর বরেন্দ্রভূমিতে সম্ভাবনাময় হয়ে উঠেছে মাল্টা, কমলা, বেদেনার চাষ। কৃষি বিভাগও এগিয়ে এসেছে চাষিদের সহযোগিতায়। গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান জানান, ধানের চেয়ে ফল চাষে খরচ কম। এছাড়া ধানে যে পরিমাণ পানির ব্যবহার করতে হয়, তার চেয়ে ১০ ভাগ কম সেচে ফল চাষ করা যায়। এ কারণে চাষিরা বিদেশি এসব ফল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, ২০১০ সালে রাজশাহীতে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ছিল ২ লাখ ২ হাজার ৮০৩ হেক্টর। ২০১৪ সালে কমে দাঁড়ায় ১ লাখ ৮০ হাজার ৯১১ হেক্টরে। এর মধ্যে আমবাগান তৈরিতেই চলে গেছে ১৬ হাজার ৫৮৩ হেক্টর জমি।

 ১ হাজার ২৩৯ হেক্টর জমিতে পেয়ারা চাষ হচ্ছে। নানা জাতের কুল ও কলা চাষও বেড়েছে ব্যাপকভাবে।

খরচ কম হওয়ায় বরেন্দ্রর লাল মাটিতে দিন দিন বাড়ছে বিদেশি ফলের বাগান। এতে একদিকে চাষিরা যেমন লাভবান হচ্ছেন, তেমনি সারা বছর কর্মসংস্থানের সুযোগ হচ্ছে অনেকের। চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ফল বিজ্ঞানী ড. সরফ উদ্দিন জানান, মাল্টা চাষে তেমন কোনো রোগবালাই নেই। এছাড়া চাষাবাদ পদ্ধতিও খুব সহজ। এ কারণে ফলটি চাষের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। বরেন্দ্র অঞ্চলের রুক্ষ মাটিতে বারি মাল্টা-১ চাষে যে সাফল্য পাওয়া গেছে, তাতে এ অঞ্চলে এটি একটি সম্ভাবনাময় ফল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

উন্নত জাতের বিদেশি ফল দেশেই উৎপাদন করা গেলে আমদানিনির্ভরতা কমবে, আমদানিতে যে অর্থ খরচ হয়, তা সাশ্রয় হবে বলে মনে করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এসএ হায়দার। তিনি জানান, প্রতিদিনই কমলা, মাল্টা, বেদানার চাহিদা বাড়ছে। এগুলোর চাষ দেশে বাড়লে আমদানিনির্ভরতা কমবে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর