রবিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
ঢাবিতে আন্তর্জাতিক সেমিনার

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ছাড়া উপায় নেই

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ১০ লক্ষাধিক শরণার্থী পুনর্বাসন সম্ভব নয়। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা মিয়ানমারে ফেরত না গেলে বাংলাদেশে সামাজিক বিশৃঙ্খলাসহ নানা সংকট তৈরি হবে। তাই সমস্যা সমাধানে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করে মিয়ানমারে পুনর্বাসন ছাড়া উপায় নেই।

গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সিনেট ভবনে ক্রিমিনোলজি বিভাগ আয়োজিত দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘রোহিঙ্গা : রাজনীতি, জাতিগত নিধন এবং অনিশ্চয়তা’ শীর্ষক এ সেমিনারে ২১টি সেশনে ৭২টি প্রবন্ধ উপস্থাপিত হবে; যার মধ্যে গতকাল প্রথম দিনে ৩৫টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। বাংলাদেশ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, নেপাল ও ব্রুনেই থেকে আগত অর্ধশত গবেষক, শিক্ষক, আইনজীবী ও শিক্ষার্থী এসব প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এ আয়োজনের মিডিয়া পার্টনার বাংলাদেশ প্রতিদিন। ক্রিমিনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জিয়া রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সাবেক প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন, ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, ঢাবি সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদরে ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম, হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক কেলি লপার। এতে ‘বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সংকট : স্বাস্থ্য ও পরিবেশ ইস্যু’ শীর্ষক সেশন পরিচালনা করেন ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘দ্য রোহিঙ্গা, দ্য সার্চ ফর সলিউশনস, অ্যান্ড দ্য পোটেনশিয়াল অব হিউম্যান রাইটস ল’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধে কেলি লপার বলেন, আন্তর্জাতিক আইন মেনে চললে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান বিলম্ব হতে পারে, আবার দ্রুতও হতে পারে। এটি হঠাৎ করে পাওয়া কোনো প্রক্রিয়া নয়। বিবদমান পক্ষগুলোর মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থা বজায় থাকাটাই মানবাধিকার। তবে এ আইনের মধ্যেই সংকটের সমাধান রয়েছে।

সাবেক প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন বলেন, দুই বছরের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সমঝোতা সই হয়েছে কিন্তু তার কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্ব এ সমঝোতার বাস্তবায়ন চায়।

উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর রাষ্ট্রীয়ভাবে যে গণহত্যা চলেছে, সেখানকার নোবেলজয়ী রাজনীতিবিদ অং সান সু চি সেটিকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এর আগেও রোহিঙ্গাদের বিষয়ে সমস্যা সামনে এসেছিল, কিন্তু মিয়ানমার এর কোনো দীর্ঘমেয়াদি সমাধান করেনি। ফলে আজকের এ বাস্তবতা। আন্তর্জাতিক আইনে রোহিঙ্গা সংকটের যে সমাধানের কথা বলা হচ্ছে, তা বাস্তবায়নে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ আরও বাড়াতে হবে। অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে বিভিন্ন আঞ্চলিক শক্তির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলকে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। অধ্যাপক জিয়া রহমান বলেন, রোহিঙ্গারা স্থায়ীভাবে থেকে গেলে মানব পাচার, পতিতাবৃত্তি, সামাজিক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হতে পারে। তা ছাড়া বাংলাদেশে জনসংখ্যার যে চাপ তার মধ্যে ১০ লাখ রোহিঙ্গা নানা আর্থ-সামাজিক সমস্যা সৃষ্টির কারণ হতে পারে। তাই তাদের মিয়ানমারে ফিরে যেতেই হবে।

সর্বশেষ খবর