রবিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

প্রকৃতির বন্ধু হনুমান

মোস্তফা কাজল

প্রকৃতির বন্ধু হনুমান

প্রকৃতির বন্ধু চশমা হনুমান। এদের চোখের চারপাশে গোলাকার বৃত্তের মতো সাদা রং থাকে বলে এদের নাম চশমা হনুমান। এদের শরীরের বেশির ভাগই কালো রঙের। এরা মহাবিপন্ন তালিকাভুক্ত প্রাণী। এ বন্যপ্রাণীর প্রজনন বাড়াতে নানা ধরনের পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে বনবিভাগ। বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের অভিমত, গত ৩ দশকে বাংলাদেশ থেকে ৮০ শতাংশ কমে গেছে এ বানর প্রজাতির প্রাণী। এমনকি আগামী ২ থেকে ৪ বছর পর এ প্রাণী নিশ্চিহ্ন হয়ে  যেতে পারে বাংলাদেশ থেকে। বাংলাদেশ বনবিভাগের সহযোগিতায় যুক্তরাজ্যের আর্থিক অনুদানে মহাবিপন্ন চশমা হনুমান রক্ষা করতে একটি প্রকল্প সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাসিন্দা বায়োলজিক্যাল সায়েন্সের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাবির বিন মোজাফফরের নির্দেশে শুরু হয়েছে। প্রাণী বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা হনুমান বিপন্ন হলে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বনায়ন মারাত্মক হুমকিতে পড়বে। কেননা এ প্রাণী খাদ্য গ্রহণ শেষে ফলের বীজ বনের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ প্রক্রিয়া মূলত বনকে নতুন জীবন দান করে। এ প্রাণী ঘন চিরসবুজ বনের বাসিন্দা ও নিরামিষভোজী। চশমা হনুমান গাছের পাতা, ফুল ও ফল এবং পোকামাকড় খেয়ে জীবনধারণ করে। এরা দলবদ্ধভাবে বসবাস ও চলাফেরা করে। এদের দলে অনেক স্ত্রী প্রজাতির হনুমান থাকে। তবে দলের নেতৃত্বে থাকে এক শক্তিশালী পুরুষ। পুরুষটিই প্রজনন বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করে।

এ প্রাণী সাধারণত কম শব্দ করে। বিপদের সম্মুখীন হলে ভয়ঙ্কর শব্দ করে থাকে। যা অ্যালার্ম কল বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে ৩ প্রজাতির হনুমানের মধ্যে অন্যতম সুন্দর হচ্ছে চশমা হনুমান। সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের বেশকিছু বনে পাওয়া যায় এ প্রাণী। এ ছাড়া ভারত, মিয়ানমার, চীন, থাইল্যান্ড, লাউস ও ভিয়েতনামে এ প্রাণী পাওয়া যায়। ২০১৫ সালের আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আইইউসিএন এ প্রাণীকে পৃথিবীব্যাপী বিপন্ন এবং বাংলাদেশে মহাবিপন্ন হিসেবে উল্লেখ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োলজিক্যাল অ্যানথ্রোপলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. ক্রেইগ স্ট্যানফোর্ড বাংলাদেশের চশমা হনুমান নিয়ে ১৯৯০ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনিই ১৯৮৮ সালে প্রথম বাংলাদেশের চশমা হনুমানের ইকোলজি নিয়ে প্রাইমেট কনজারভেশন জার্নালে গবেষণাপত্র লিখেছিলেন। তখন হনুমানের সংখ্যা ছিল প্রায় ১ হাজার ৩০০। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া একটি গবেষণায় এখন পর্যন্ত মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া ও হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে ১৩টি গ্রুপে মোট ১৪৫টি চশমা হনুমানের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। এ গবেষণা চলবে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. হাবিবুন নাহার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হনুমানের মাথা ও শরীরের দৈর্ঘ্য সাধারণত ৫৩ সেমি এবং লেজের দৈর্ঘ্য ৭৬ সেমি হয়। হনুমান কমে যাওয়ার প্রধান কারণ বনভূমি উজাড় হওয়া। ফলে প্রাণীদের বাসস্থান এবং খাদ্য সংকট  দেখা দিয়েছে। বনের ভিতর সড়ক তৈরি করে এবং গাছ  কেটে বনকে বিভিন্ন ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে। আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে বনের ভিতর দিয়ে বিদ্যুৎ লাইন নেওয়া। ফলে সব ধরনের প্রাণীর ক্ষতি হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর