সোমবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
কৃষি

বিদেশি ফল চাষে মামা-ভাগিনা

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্

বিদেশি ফল চাষে মামা-ভাগিনা

বিদেশি দুর্লভ ফল ড্রাগন, স্ট্রবেরি, মাল্টা, থাই পেয়ারা চাষ করে এবার তাক লাগিয়ে দিয়েছেন প্রত্যন্ত গ্রামের এক মামা ও ভাগিনা। আর এই মামা-ভাগিনার বাড়ি গাজীপুরের শ্রীপুরের গোদারচালা এলাকায়। মামা আতাউর রহমান ও ভাগিনা আবদুল আজিজের বয়সের ব্যবধান খুব বেশি না হওয়ায় সম্পর্ক অনেকটা বন্ধুর মতো। স্নাতক পর্যন্ত পড়ালেখা শেষ করে মামা-ভাগিনা সিদ্ধান্ত নিলেন বিদেশি ফলের আমদানি নির্ভরতা কমানোর জন্য কিছু একটা করতে হবে। যেই কথা সেই কাজ। শুরু করে দিলেন বিদেশি নানা ফলের চারা সংগ্রহ। আর সেই চারা পতিত জমিতে রোপণ শুরু করেন। প্রথম বছরেই বেশ আয় হয়। আর এতেই সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া যেন আরও সুবিধা হয়।

২০১৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কৃষি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে স্ট্রবেরি চাষ করেন। এটাই গাজীপুরে প্রথম স্ট্রবেরি চাষ। প্রথম বছরেই তাদের আয় হয় ১১ লাখ টাকা। এভাবে দ্বিতীয় বছর ১৬ লাখ ও তৃতীয় বছর ১৮ লাখ টাকা লাভ করেন। এতে কর্মস্পৃহা ও উদ্দীপনা আরও বেড়ে যায়, এরপর ড্রাগন ফল, থাই পেয়ারা ও বারি-২ জাতীয় মাল্টা চাষ শুরু করেন। নিজেদের শ্রম ও মেধায় প্রতিনিয়ত সফলতা পাওয়ায় কয়েক বছরেই ১০ একর জমিতে গড়ে তুলেন বিদেশি নানা ধরনের ফলের বাগান। কৃষি কর্মকর্তাদের তথ্য মতে, ব্যক্তি উদ্যোগে এটিই গাজীপুর জেলার সবচেয়ে বড় বিদেশি ফলের খামার। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে তাদের লক্ষ্য চলতি বছরেই কোটি টাকার ওপরে ফল বিক্রি করার। এখন এই বিদেশি ফল চাষ পুরো জেলায় ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কাজ শুরু করেছেন তারা। গাজীপুর জেলার শ্রীপুরের তেলিহাটি ইউনিয়নের গোদারচালা গ্রামে তাদের এই ফল জাতীয় কৃষি খামার। সড়ক-লাগোয়া বাড়ির চারপাশজুড়ে যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু দেখা যায় মাল্টার বাগান, দুই বছর বয়সী বাগানের ভিতর ঢুকেই দেখা গেল গাছের সবুজ পাতার ভিতর থেকে উঁকি দিচ্ছে থোকা থোকা মাল্টা। পরিপক্ব হচ্ছে মাল্টা জাতীয় ফলগুলো, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই তা গাঢ় হলদে রঙে রূপান্তরিত হবে। তাদের বাগানে বর্তমানে ১০ হাজারের ওপর উৎপাদনশীল বারি-২ জাতীয় মাল্টা গাছ, কয়েকশ ড্রাগন ফল গাছ রয়েছে। দুই বছর বিরতির পর আবারও শুরু করেছেন স্ট্রবেরি চাষ। তবে লাভজনক লেমন গ্রাস (থাইপাতা) চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। এসব ফসলের ভিতর আবার স্বল্প মেয়াদি সাথী ফসল হিসেবে চাষ করেছেন বেগুন। যা অনেকটা একের ভিতর দুইয়ের মতো। নিজেরা স্বল্প সময়ে বিদেশি ফল চাষে সফলতা অর্জন করায় এখন এসব চাষ সাধারণ লোকজনের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। ইতিমধ্যে তাদের বাগান থেকে টিস্যু কালচারের মাধ্যমে প্রায় ২০ হাজার কলম তৈরি করছেন, যা আগামী মাস থেকেই শুভেচ্ছামূল্যে বিক্রি হবে।

 তাদের লক্ষ্য বিদেশি  ফল চাষে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের বিনামূল্যে পরামর্শ দিয়ে এই চাষটাকে ছড়িয়ে দেওয়া। এতে বিদেশ থেকে আমদানি করা ফলের নির্ভরশীলতা অনেকটা কমবে।

এ বিষয়ে আতাউর রহমান জানান, তার বাবা সিরাজউদ্দিন ছিলেন একজন কৃষক। ছোটবেলায় বাবাকে মাঠে কাজের সহযোগিতার সময় তার কৃষির প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। লেখাপড়া শেষে নিজেই কৃষিতে আত্মনিয়োগ করেন। এ সময় তার সঙ্গী হন ভাগিনা আবদুল আজিজ। আবদুল আজিজের মতে, আমরা যখন এসব ফল চাষের সিদ্ধান্ত নিলাম তখন আর পেছনে ফিরে তাকাইনি। পরিবার, বন্ধু ও স্বজনদের কাছ হতে বাধা এসেছে, তবু থামিনি। আমাদের লক্ষ্য ছিল একটাই, যেভাবে হোক সামনে এগোতে হবে। কয়েক বছরেই সফল হয়েছি। আমাদের দেখাদেখি আরও অনেকেই, বিশেষ করে তরুণরা উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে আসবে তাহলেই বিদেশ থেকে ফলের আমদানি নির্ভরতা কমবে।

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুয়ীদ উল হাসান জানান, বারি-২ জাতীয় মাল্টা আমাদের দেশীয় আবহাওয়ার জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এ ছাড়া ড্রাগন ও স্ট্রবেরিরও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এ দুজন ফল চাষ করে খুব স্বল্প সময়ে সফল হয়েছেন, এটিই গাজীপুরের সবচেয়ে বড় বিদেশ ফলের খামার।

সর্বশেষ খবর