বুধবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বাংলা ভাষার ব্যবহার বাড়ছে ভুটানে

শিমুল মাহমুদ, ভুটান থেকে ফিরে

বাংলা ভাষার ব্যবহার বাড়ছে ভুটানে। জিপ, কোস্টার, ট্যাক্সিসহ বিভিন্ন যানবাহনের চালক, ভুটানি গাইড, দোকান, শপিং মলের মালিক ও কর্মী এমনকি হোটেল, রেস্তোরাঁর স্টাফরা বাঙালি ট্যুরিস্টদের সঙ্গে বাংলায় কথা বলার চেষ্টা করেন। বাংলাদেশের সঙ্গে ভুটানের রয়েছে ঐতিহাসিক সম্পর্ক। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভুটানই প্রথম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়, সেটা বিজয়ের ১০ দিন আগে, ৬ ডিসেম্বর। প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড খ্যাত ভুটান বাংলাদেশকে আলাদা মর্যাদা দেয়। ভুটান শুধু ভারত, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কাকে ট্যুরিস্ট হিসেবে বাড়তি সুবিধা দেয়। এই তিন দেশের পর্যটকরা ভুটানে কোনো গাইড ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারেন। ইউরোপীয় পর্যটকদের মতো বাড়তি দিনপ্রতি বাড়তি ডলারও গুনতে হয় না।

ভুটানের সীমান্তবর্তী ফুয়েন্টশোলিং শহরটা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলা সংলগ্ন। কোচবিহারে বাসিন্দারা বাংলাভাষী। ভুটানের সরকারি ভাষা জংখা। তবে শিক্ষার অন্যতম মাধ্যম ইংরেজি। ফলে ভুটানিরা প্রায় সবাই ইংরেজি জানে। তৃতীয় ভাষা হিসেবে বাংলার ব্যবহার ও প্রচলন বাড়ছে। এটি শুধু বাংলাভাষী কোচবিহার জেলা সংলগ্ন হওয়ার কারণেই নয়। বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটনসহ বিভিন্ন কারণে বাংলা তাদের অনেকটাই চেনা ভাষা। অন্যদিকে প্রায় আট লাখ বাসিন্দার ভুটানে কোচবিহারের বিপুলসংখ্যক মানুষ বিভিন্ন কাজ করছেন। বিশেষ করে ঠিকাদারি, নির্মাণ কাজ, সড়ক নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ, হোটেল রেস্তোরাঁসহ অনেক কাজেই কোচবিহারের অসংখ্য মানুষ নিয়োজিত আছেন। তারা নিজেদের মধ্যে যেমন বাংলা ভাষায় কথা বলেন, তেমনি ভুটানিদের সঙ্গেও বাংলায় আলাপচারিতা চালান। সব মিলিয়ে পারস্পরিক যোগাযোগের কারণেই বাংলা ভাষার ব্যবহার বাড়ছে ভুটানে। ভ্রমণের শেষ দিন ভুটানের পারোতে টাইগার নেস্ট থেকে নামছি। পাহাড় ডিঙ্গানো অধঃপতনে সঙ্গী দুই নারী। আমাদের কথোপকথন শুনে উপরে উঠতে থাকা এক ভুটানি তরুণী জিজ্ঞেস করলেন, ঢাকা থেকে এসেছেন? হ্যাঁ সূচক জবাব পেয়ে বললেন, আমি ঢাকাতে পড়ি, সলিমুল্লাহ মেডিকেলে। ঈদের ছুটিতে বেড়াতে এসেছি। টাইগার নেস্ট দেখতে এলাম। সঙ্গী দুই নারীর একজন সাদিয়া পারভীন বললেন, এবারই প্রথম? তরুণী স্পষ্ট বাংলায় বললেন, সময় পাই না তো। এজন্য আগে আসতে পারিনি।

পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলা সংলগ্ন ফুয়েন্টশোলিং শহরটায় যেন লুকিয়ে রয়েছে নিবিড় শান্তি। এই শান্তির খোঁজেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে নানা ভাষার পর্যটক ভিড় করে সেখানে। তবে ফুয়েন্টশোলিংয়ে বাংলা ভাষার প্রচলনটা খুব বেশি। কারণ, সেটি ভারতের সংলগ্ন শহর। সেখানে বিপুলসংখ্যক ভারতীয় ব্যবসা বাণিজ্যসহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত। দোকান, শপিং সেন্টারগুলোতে বাঙালিদের উপস্থিতি বেশি। ২৪ আগস্ট দুপুরে ফুটপাথ সংলগ্ন এক দোকানে চা খেতে গিয়েছি। দেখি বাংলায় কথা বলছে সবাই। কথার তোড়ে পড়ে চায়ের আগে মিষ্টি ও সন্দেশ খেতে হলো। মধ্যবয়সী দোকানি বললেন, দাদা, খেয়ে নিন। নিজেদের বানানো খুব ভালো মিষ্টি। তার কাছে জানতে চাইলাম, এই শহরে বাংলাভাষী কেমন? তিনি জানালেন, পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তঘেঁষা শহর হওয়াতে এখানে প্রায় সব দোকানেই বাংলার চল রয়েছে। তার মানে বাংলা দিয়েই ভুটানের এই শহরে প্রয়োজনীয় বাক্যালাপ সেরে নেওয়া যায়। যদিও তাদের উচ্চারণে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। তারপরেও বাংলা তো...।

সর্বশেষ খবর